হারের লজ্জায় বিশ্বকাপ শুরু বাংলাদেশের
লক্ষ্য বড় নয়। জয়ের জন্য দরকার ছিল ১৪১ রান। কিন্তু রান এই তুলতেই বড় কঠিন পরীক্ষা দিতে হয়েছে বাংলাদেশকে। নড়বড়ে শুরুর পর শেষ দিকেও হাল ধরতে পারেননি ব্যাটসম্যানরা। ফলে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ৬ রানের হারের হতাশায় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ মিশন শুরু করে বাংলাদেশ।
ওমানের আল আমিরাত ক্রিকেট গ্রাউন্ডে আগে ব্যাট করে নির্ধারিত ২০ ওভারে ১৪০ রান সংগ্রহ করে স্কটল্যান্ড। জবাবে ২০ ওভারে সাত উইকেটে ১৩৪ রান করে বাংলাদেশ।
হারের দিনে সাকিব আল হাসান গড়েছেন দারুণ একটি রেকর্ড। দুই উইকেট নিয়ে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি হয়েছেন তিনি। তাঁর মোট উইকেট এখন ১০৮টি। এতদিন ১০৭ উইকেট নিয়ে এই রেকর্ডটির মালিক ছিলেন মালিঙ্গা। এবার সেই রেকর্ড নিজের করে নিলেন বাংলাদেশি তারকা।
এর আগে প্রথমে ব্যাটিংয়ে নেমে খুব একটা সুবিদা করতে পারেনি স্কটল্যান্ড। বাংলাদেশকে প্রথম সাফল্য এনে দেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। দারুণ এক ডেলিভারিতে কাইল কোয়েটজারকে থামান তিনি। সাইফউদ্দিনের বলে জায়গা বানিয়ে খেলতে চেয়েছিলেন স্কটল্যান্ড অধিনায়ক। কিন্তু পারেননি তিনি। ব্যাটের কানা এড়িয়ে আঘাত হানে অফ স্টাম্পে। ৭ বল খেলেও রানের খাতা খুলতে পারেননি কোয়াটজার। দলীয় ৫ রানে প্রথম উইকেট হারায় স্কটল্যান্ড।
উইকেট হারালেও পরে অবশ্য ঘুরে দাঁড়ায় স্কটল্যান্ড। দ্বিতীয় জুটিতে জর্জ মানজি ও ম্যাথু ক্রস প্রতিরোধ গড়েন। পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে ১ উইকেটে ৩৯ রান করে স্কটল্যান্ড।
নিজের প্রথম ওভারে এসে সেই প্রতিরোধ ভাঙেন মেহেদী হাসান। এসেই জোড়া উইকেট তুলে নেন তিনি। সেই ওভারেই মূলত খেলার মোড় ঘুরিয়ে দেন। প্রথমে তিনি ফিরিয়ে দেন ম্যাথু ক্রসকে। ১১ রানে তাঁকে এলবির ফাঁদে ফেলেন। এরপর ফেরান থিতু হয়ে যাওয়া মানজিকে। ২৯ রানে স্কটিশ ওপেনারকে থামিয়ে দেন মেহেদী। প্রতিরোধ গড়া জুটি ভাঙার পর থেকে কেবল হতাশাই দেখেছে স্কটল্যান্ড।
বোলিংয়ে বাংলাদেশও ঘুরে দাঁড়ায়। একে একে ফিরিয়ে দেন স্কটল্যান্ডের ব্যাটসম্যানদের। মেহেদীর সঙ্গে বোলিংয়ে দারুণ খেলেন সাকিব আল হাসান। নিজের তৃতীয় ওভারে জোড়া সাফল্য পান বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। প্রথমে রিচি বেরিংটনকে সীমানায় আফিফের হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট করার পর মাইকেল লিস্ককেও আউট করেন সাকিব।
সাকিবের জোড়া আঘাতের পর মেহেদী এসে তুলে নেন নিজের তৃতীয় শিকার। শেষ দিকে চমক দেখান মুস্তাফিজ। দুই উইকেট তুলে নেন তিনি। দ্রুত ব্যাটসম্যানদের হারিয়ে বেশিদূর যেতে পারেনি স্কটল্যান্ড। শেষ পর্যন্ত ২০ ওভারে ১৪০ রানে থামে স্কটিশদের ইনিংস।
বল হাতে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ তিন উইকেট নিয়েছেন মেহেদী হাসান। চার ওভারে ১৯ রান খরচা করেছেন তিনি। সাকিব ১৭ রান দিয়ে নিয়েছেন দুই উইকেট। মুস্তাফিজ ৩২ রান দিয়ে নিয়েছেন সমান দুই উইকেট। সাইফউদ্দিন এক উইকেট নিয়ে দিয়েছেন ৩০ রান।
১৪১ রানের জবাবে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। বরবারের মতো হতাশ করেন ওপেনাররা। দলীয় আট রানে ভাঙে ওপেনিং জুটি। মানজির হাতে ক্যাচ দিয়ে দ্বিতীয় ওভারেই ফিরে যান সৌম্য সরকার। ৫ বলে ৫ রান করেন তিনি। পরের ওভারে একই ফিল্ডারের হাতে সাজঘরের পথে হাঁটেন লিটন দাসও। তিনিও করেন ৫ রান।
দ্রুত ওপেনারদের হারালে বাংলাদেশের রানের গতি কমে যায়। এরপর বাংলাদেশকে পথ দেখান মুশফিকুর রহিম ও সাকিব আল হাসান। দুজন মিলে প্রতিরোধ গড়েন। কিছুদূর গিয়ে সাকিবও ফেরে যান সাজঘরে। সীমনায় ক্যাচ দিয়ে ২০ রানে আউট হন তিনি। এরপর নিয়মিত উইকেট হারিয়ে বেশিদূর যেতে পারেনি বাংলাদেশ। থেমে যায় ১৩৪ রানে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
স্কটল্যান্ড: ২০ ওভারে ১৪০/৯ (মানজি ২৯, কোয়েটজার ০, ক্রস ১১, বেরিংটন ২, ম্যাকলয়েড ৫, লিস্ক ০, গ্রিভস ৪৫, ওয়াট ২২, ডেভি ৮, শরিফ ৮*, হুইল ১*; তাসকিন ৩-০-২৮-১, মুস্তাফিজ ৪-১-৩২-২, সাইফ ৪-০-৩০-১, সাকিব ৪-০-১৭-২, মেহেদি ৪-০-১৯-৩, আফিফ ১-০-১০-০)।
বাংলাদেশ : ২০ ওভারে ১৩৪/৭ (সৌম্য ৫, লিটন ৫, সাকিব ২০, মুশফিক ৩৮, মাহমুদউল্লাহ ২৩, আফিফ ১৮, নুরুল হাসান ২, মেহেদী ১৩, সাইফউদ্দিন ৫ ; হুইল ৪-০-২৪-৩ , ডেভি ৪-০-২৪-১, ওয়াট ৪-০-১৭-১, শরিফ ৩-০-২৬-০)।
ফল : ৬ রানে জয়ী স্কটল্যান্ড।