সেদিন ঢাকায় হয়েছিল পাক-ভারত মহারণ
যুদ্ধের ময়দান হোক আর ক্রিকেটের লড়াই, পাকিস্তান-ভারতের লড়াই মানেই অন্য রকম এক উত্তেজনা। কেবল দুটি দেশেরই নয়, সারা বিশ্বের চোখ থাকে এ দুটি দেশের দিকে। প্রতিবেশী দেশ দুটির রাজনৈতিক বৈরিতা এমন এক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে যে, ভারত ও পাকিস্তানের যেকোনো বিষয়ই সব সময় আলোচনার কেন্দ্রে থাকে। আর ক্রিকেট ম্যাচ হলে বিশ্বের কোটি কোটি চোখ আটকে যায় টেলিভিশনের পর্দায়। ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে বসেছিল বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানকে নিয়ে ত্রিদেশীয় ক্রিকেট সিরিজ। ১৯ বছর আগে আজকের দিনেই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানকে হারিয়ে শিরোপা বাগিয়ে নেয় ভারত।
ইনডিপেনডেন্টস কাপের গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচে আজহারউদ্দিনের সেঞ্চুরি আর শচীনের হাফ সেঞ্চুরিতে পাকিস্তানকে হারায় ভারত। প্রতিযোগিতার অপর দল বাংলাদেশ অবশ্য তেমন কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়তে পারেনি। তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ফাইনালেও পাকিস্তানকে হারায় ভারত। তবে দ্বিতীয় ম্যাচ জিতে সমতায় আসে পাকিস্তান। তৃতীয় ম্যাচটি তাই হয়ে যায় আসল ফাইনাল।
ফাইনালে পাকিস্তানের করা ৩১৪ রান তাড়া করে জিতেছিল ভারত। সে সময়ের সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড কিন্তু সেটাই। আজও সেই শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচ গেঁথে আছে ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে।
টসে হেরে ব্যাট করতে নামে পাকিস্তান। শুরুতেই হোঁচট। দলীয় ৩০ রানে বুম বুম আফ্রিদির বিদায়। তবে অপর পাশে সাঈদ আনোয়ার বেশ দেখেশুনেই ব্যাট চালাচ্ছেন। আমির সোহেলও ব্যাট হাতে ব্যর্থ হন। ১৪ রান করে হারভিন্দর সিংয়ের বলে নয়ন মঙ্গিয়ার তালুবন্দি হন তিনি। পাকিস্তানের তখন ৬৬ রানে ২ উইকেট। সাঈদ আনোয়ারকে সঙ্গ দিতে মাঠে নামেন ইজাজ আহমেদ। কিছুক্ষণ পরই ব্যাটিং তাণ্ডব শুরু করেন এ দুজন। তৃতীয় উইকেট জুটিতে তাঁরা যোগ করলেন ২৩০ রান। অবশেষে ১৩২ বলে ১৪০ রান করে আউট হন সাঈদ আনোয়ার। দলীয় ৩০২ রানে বিদায় নেন ইজাজ আহমেদ। তবে সেঞ্চুরি তুলে নিতে ভুল করেননি এই ব্যাটিং তারকা। ১১২ বলে আটটি বাউন্ডারি ও এক ছয়ে ১১৭ রান করেন ইজাজ। এরপর আর তেমন কোনো রান না আসায় ৩১৫ রানে শেষ হয় পাকিস্তানের ইনিংস।
৩১৬ রানের পাহাড়সম রান তাড়া করতে নেমে দুর্দান্ত শুরু করেন গাঙ্গুলী-শচীন জুটি। ঝড়ো ব্যাটিংয়ের তোপে নবম ওভারে ৭১ রান করার পর প্রথম উইকেট হারায় ভারত। ২৬ বলে ৪১ রানের এক অবিশ্বাস্য ইনিংস খেলে বিদায় নেন লিটল মাস্টার টেন্ডুলকার। এরপর ব্যাট হাতে রবিন সিংয়ের সঙ্গে গাঙ্গুলীর ১৭৯ রানের পার্টনারশিপ। ৩৮ ওভার ১ বলে দলীয় ২৫০ রানে বিদায় নেন রবিন সিং। ৮৩ বলে চারটি বাউন্ডারি ও দুটি ওভার বাউন্ডারি নিয়ে ৮২ রান করেন তিনি। এরপর মাত্র ৪ রান করে আউট অধিনায়ক আজহারউদ্দিন। স্কোর বোর্ডে মাত্র ৬ রান যোগ হতেই এবার আউই হলেন ভারতের রানমেশিন সৌরভ। ১১টি চার ও এক ছয়ে ১৩৮ বলে ১২৪ রান করেন দাদা।
পরে আর তেমন কেউ রান না পাওয়ায় শেষ ওভারে চাপে পড়ে যায় ভারত। সাকলাইন মুশতাকের ৬ বলে তখন ভারতের দরকার ৯ রান। শ্রীনাথ ৪ বলে ৬ রান নিয়ে স্ট্রাইক দিলেন ঋষিকেশ কানিতকারকে। আর পরের বলেই বাউন্ডার মেরে তিনি ভারতকে এনে দিলেন এক দুর্দান্ত জয়। সেইসঙ্গে সে সময়ের সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ডটি নিজেদের করে নেয় ভারত। তবে বর্তমানে সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ডটি দক্ষিণ আফ্রিকার দখলে আছে। ২০০৬ সালে জোহানেসবার্গে অস্ট্রেলিয়ার করা ৪৩৪ রানের জবাবে ১ বল হাতে রেখেই জয় তুলে নেয় দক্ষিণ আফ্রিকা।