বার্সা-জুভেন্টাসের ইউরোপ-শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই
এবারের ফুটবল-মৌসুমে বার্সেলোনা, জুভেন্টাস দুই দলই জিতেছে দুটি করে শিরোপা—ঘরোয়া লিগ ও কাপ। এবার লড়াই ইউরোপসেরা হওয়ার। বিজয়ী দল মেতে উঠবে ট্রেবল অর্জনের আনন্দে। শনিবার রাতে বার্লিনের অলিম্পিক স্টেডিয়ামে চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালকে ঘিরে তাই তীব্র উত্তেজনা।
ইউরোপীয় ফুটবলে ইতালিয়ান ক্লাবগুলোর আগের সেই দাপট আর নেই। জুভেন্টাস সর্বশেষ চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনাল খেলেছিল ১২ বছর আগে। সর্বশেষ শিরোপা জিতেছিল তারও আগে, ১৯৯৫-৯৬ মৌসুমে। ইতালিকে সর্বশেষ চ্যাম্পিয়নস লিগের শিরোপা উপহার দিয়েছিল ইন্টার মিলান, পাঁচ বছর আগে।
উল্টোদিকে লিওনেল মেসি নামের এক অবিস্মরণীয় ফুটবলারের আগমনের পর ইউরোপের সেরা ক্লাব টুর্নামেন্টে বার্সেলোনার জয়জয়কার। তিনবার (২০০৫-০৬, ২০০৮-০৯ ও ২০১০-১১ মৌসুমে) শিরোপা জিতে বার্সাই গত এক দশকে চ্যাম্পিয়নস লিগের সফলতম দল। এর মধ্যে ২০০৮-০৯ মৌসুমে কাতালানরা মেতেছিল ট্রেবল জয়ের উল্লাসে।
এখন পর্যন্ত মাত্র সাতটি ক্লাব ট্রেবল জয়ের বিরল কৃতিত্ব অর্জন করেছে—সেল্টিক (১৯৬৭), আয়াক্স আমস্টার্ডাম (১৯৭২), পিএসভি আইন্দহোভেন (১৯৮৮), ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড (১৯৯৯), বার্সেলোনা (২০০৯), ইন্টার মিলান (২০১০) ও বায়ার্ন মিউনিখ (২০১৩)। এবার এই ‘এলিট’ ক্লাবের তালিকায় চলে আসতে পারে জুভেন্টাসের নাম। অন্যদিকে বার্সা নিজেদের নিয়ে যেতে পারে অনন্য উচ্চতায়। প্রথম ক্লাব হিসেবে অর্জন করতে পারে দুবার ট্রেবল জয়ের গৌরব।
২০০৮-০৯ মৌসুমে বার্সেলোনার ট্রেবলজয়ী দলের বেশ কয়েকজন সদস্য এবারও খেলছেন। এবারের মৌসুমটা যে কাতালানদের জন্য একটা ঐতিহাসিক মৌসুম হতে পারে তা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন কোচ লুইস এনরিকে। তিনি বলেছেন, ‘আমরা এখনো তারুণ্যনির্ভর দল। গার্দিওলা যুগের কিছু খেলোয়াড়ও অবশ্য আছে। এবারের মৌসুমটা আমাদের জন্য একটা ঐতিহাসিক মৌসুম হতে পারে।’
মেসির দুর্দান্ত ফর্ম নিশ্চিতভাবেই অনুপ্রেরণা জোগাবে বার্সাকে। গত সপ্তাহে কোপা দেল রের ফাইনালে অ্যাথলেতিক বিলবাওয়ের বিপক্ষে অসাধারণ এক গোল করেছিলেন আর্জেন্টাইন তারকা। আক্রমণভাগে দুই সঙ্গী নেইমার ও লুইস সুয়ারেজ দারুণ সঙ্গ দিচ্ছেন মেসিকে। ‘এমএসএন’ নামে পরিচিত বার্সার আক্রমণভাগের ‘ত্রিফলা’ এবারের মৌসুমে করেছেন ১২০টি গোল। অন্যদিকে জুভেন্টাস পুরো মৌসুমজুড়ে করেছে ১০৩টি গোল।
জুভেন্টাস সমর্থকদের দুশ্চিন্তায় ফেলে মাঠের বাইরে ছিটকে গেছেন নির্ভরযোগ্য ডিফেন্ডার জর্জো কিয়েল্লিনি। অনুশীলনের সময় পায়ে আঘাত পেয়েছেন তিনি। তাই সুয়ারেজ-কিয়েল্লিনির আরেকটি ‘দ্বৈরথ’ দেখা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ফুটবল-ভক্তরা। গত বিশ্বকাপে কিয়েল্লিনির ঘাড়ে কামড় দিয়ে চার মাসের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছিলেন সুয়ারেজ।
জুভেন্টাসের অধিনায়ক জানলুইজি বুফন অবশ্য প্রতিপক্ষকে কোনো ছাড় দিতে রাজি নন। সর্বশক্তি প্রয়োগ করে বার্সেলোনাকে নাজেহাল করার পরিকল্পনা ইতালির এই অভিজ্ঞ গোলরক্ষকের, ‘এটা আমাদের জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ। ফেবারিট হিসেবে শুরু করতে পারলেই ভালো লাগত। কিন্তু সেটা না হলেও আমরা আমাদের সব অস্ত্র ব্যবহার করব বার্সেলোনার কাজ কঠিন করে তোলার জন্য।’
বার্লিনের অলিম্পিক স্টেডিয়ামে মাঝমাঠের লড়াই হবে দুর্দান্ত। মাঝমাঠে বল দখলের লড়াইয়ে মুখোমুখি হবেন বার্সেলোনার জাভি হার্নান্দেজ ও জুভেন্টাসের আন্দ্রেয়া পির্লো। বার্সার হয়ে এটাই জাভির শেষ ম্যাচ। কাতালানরা তাই ক্লাবের কিংবদন্তিকে শিরোপা উপহার দিয়ে বিদায় জানাতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
জুভেন্টাস দীর্ঘদিন চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ের স্বাদ না পেলেও তাদের চারজন খেলোয়াড় অন্য ক্লাবের হয়ে ইউরোপ-শ্রেষ্ঠত্বের মধুর স্বাদ পেয়েছেন। ২০০৩ ও ২০০৭ সালে এসি মিলানের হয়ে শিরোপা জিতেছিলেন পির্লো। প্যাত্রিস এভ্রা ও কার্লোস তেভেজ ২০০৮ সালে জিতেছিলেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের জার্সি গায়ে। আর গত বছর রিয়াল মাদ্রিদের ‘লা দেসিমা’ জয়ের সাক্ষী হয়েছিলেন আলভারো মোরাতা।
চ্যাম্পিয়নস লিগে মুখোমুখি লড়াইয়ে বার্সা-জুভেন্টাস একেবারে সমানে সমান। এর আগে ছয়টি লড়াইয়ে দুই দলই জিতেছে দুটি করে ম্যাচ। বাকি দুই ম্যাচ ড্র হয়েছে। শনিবার তাই ইউরোপীয় ক্লাব ফুটবলের দুই পরাশক্তির সামনে একে অন্যকে ছাড়িয়ে যাওয়ার লড়াইও।