‘এটা অতীতের বাংলা নয়’

মারকুটে সৌম্যর সঙ্গে তামিমের সাবধানী ব্যাটিংয়ে প্রথম ওয়ানডের সূচনাটা চমৎকারভাবে করেছিল বাংলাদেশ। এর পর মিডল অর্ডারে খনিকের ছন্দপতনের পর সাকিব-সাব্বিরদের নৈপুণ্যে আবার ম্যাচে ফেরা। পরের গল্পটা সবার জানা।
শিখর ধাওয়ান ও রোহিত শর্মার ৯৫ রানের জুটিটা বাংলাদেশের তরুণ তুর্কি তাসকিন ভাঙার পর ভারতের ব্যাটসম্যানদের নিয়মিত আসা-যাওয়ার দৃশ্য দেখেছে শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের হাজার হাজার আর টেলিভিশনের পর্দায় লাখো দর্শক। ম্যাচ শেষে দর্শকের এ উচ্ছ্বাস ষোলোকলায় পূর্ণ হয়েছে ৭৯ রানের জয়ে। এতে দেশজুড়ে মাশরাফি বাহিনীর বন্দনার যেমন মুখরোচক গল্প শোনা যাচ্ছে, তেমনি তাদের প্রশংসা করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গণমাধ্যমেও প্রচারিত হচ্ছে ভূরি ভূরি কাহিনী। খোদ ভারতের গণমাধ্যমও ভূয়সী প্রশংসা করেছে মুস্তাফিজ, তাসকিন, সৌম্য, সাকিবদের।
দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া, দ্য হিন্দু, এনডিটিভিসহ ভারতের প্রভাবশালী গণমাধ্যমে কৃতিত্ব দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ দলকে। এর সবকটিতেই প্রশংসা করা হয়েছে ম্যাচসেরা মুস্তাফিজের। পিছিয়ে নেই কলকাতাভিত্তিক দৈনিক আনন্দবাজারও। বাংলাদেশের জয় নিয়ে একাধিক প্রতিবেদন ছেপেছে পত্রিকাটি। প্রশংসা করেছে বদলে যাওয়া বাংলাদেশের।
‘ধোনির ভুল আর অজানা আতঙ্কে মেলবোর্নের বদলা’ শিরোনামের প্রতিবেদনটিতে ছিল বাংলাদেশের জয় নিয়ে আবেগঘন বর্ণনা। শুরুটাও বেশ নাটকীয়। “ঠোঁটে চেপে ধরা ভুভুজেলা, ঠোঁটে চেপে ধরে পঁচিশ হাজার। অদ্ভুত নেশা ধরানো এক ছন্দে, চেনা একটা আওয়াজকে নকল করে বেজে চলেছে ক্রমাগত। চেনা যায়, ছন্দটা বড় চেনা যায়। ‘ম..ও..কা..ম..ও..কা’! চার মাস আগে ক্রিকেট বিশ্বকাপ এমনই কিছু রোজ শুনত না?
“পাগলের মতো কাঁদতে কাঁদতে গ্যালারি ধরে ছুটে চলেছে যে যুবক, তাঁর হাতটা কতজন খেয়াল করলেন কে জানে। চোখ দিয়ে জল ঝরছে অঝোরে, হাতের মুঠো শক্ত করে ধরে একটা সাদা কাগজ। কাগজে কিছু একটা লেখা। বুকে সজোরে ধাক্কা দেওয়ার মতো একটা লাইন লেখা—‘বাঙালি, বিশ্বকাপের প্রতিশোধ নাও!’”
৯৯২ শব্দের প্রতিবেদনটির শুরুটা হয়েছিল বাংলাদেশ-বন্দনায়। এর মাঝখানটায় তাসকিনের ভূয়সী প্রশংসা করে বলা হয়, ‘বিরাটকে আউট করে তাসকিন আহমেদ যে চিৎকার করলেন, তাতে বোঝা যায় ভারত-বাংলাদেশ ক্রিকেট-সম্পর্ক এখন কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে। এমএসডি (মহেন্দ্র সিং ধোনি) তিনিও যা থেকে প্রভাবমুক্ত থাকতে পারলেন না। রান নিতে যাওয়ার সময় ধোনির কাঁধ মুস্তাফিজুরকে এমন গুঁতিয়ে দিল যে, উনিশের পেসারকে মাঠের বাইরে চলে যেতে হলো সঙ্গে সঙ্গে।’
প্রতিবেদনের শেষটাতেও নাটকীয়তা থাকল। বাংলাদেশের প্রশংসা করে লেখা হলো, ‘আসলে এটাই এখন বাংলাদেশ। যারা আর ক্রিকেটীয় হীনমন্যতায় না ভুগে নিয়মিত তুলে আনছে পরের পর প্রতিভা। কেউ বিকেএসপি থেকে উঠে আসছেন। যাকে বাংলাদেশ ক্রিকেটের আঁতুড়ঘর বলা হয়। কেউ বা আসছেন স্কুল ক্রিকেট থেকে। নামগুলো কখনো সৌম্য সরকার, কখনো তাসকিন আহমেদ। আজকের পর বাংলাদেশের পক্ষে সিরিজটা ১-০ হয়ে গেল। অঘটন বললে যে গৌরবকে অপমান করা হবে। ভারতের বিরুদ্ধে প্রথম তিনশ, প্রথম উইকেটে প্রথমবারের জন্য একশ রানের পার্টনারশিপ করে দেওয়া, কোনটা বাকি থাকল। ভারত শেষ পর্যন্ত সিরিজ জিতবে কি না সময় বলবে। কিন্তু এমএসডি একটা ব্যাপার বুঝে মাঠ ছাড়লেন।
এটা আর অতীতের বাংলা নয়। অন্য বাংলা। নতুন বাংলা।
শের-ই-বাংলা।’