বিশ্বকাপের শুরুতেই সেরাদের ছন্দপতন
শুরু হয়ে পাঁচটা দিন গড়িয়েও গেছে ফুটবলের সবচেয়ে বড় আসর ফিফা বিশ্বকাপের ২১তম আসরের। বিশ্বকাপ মানেই বড় বড় সব দলের দিকেই তাকিয়ে থাকবে পুরো বিশ্ববাসী। তবে রাশিয়াতে চলমান এবারের আসরে কিন্তু বড় দলগুলো মেটাতে পারছে না প্রত্যাশার দাবি। সেরাদের ছন্দপতন দিয়েই শুরু হয়েছে ‘দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’।
প্রতি বিশ্বকাপের দর্শকদের অন্যরকম চাহিদা থেকে ফেবারিট দলগুলোর কাছ থেকে। ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, জার্মানি, স্পেন কিংবা ফ্রান্স- সমর্থকদের প্রত্যাশাই থাকে অন্য উচ্চতার। কিন্তু রাশিয়ার মাঠে বড় দলগুলো এখন পর্যন্ত দেখাতে পারেনি তাদের ‘বড়ত্ব’। নিজেদের প্রথম ম্যাচে ড্র করেছে আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল ও স্পেন। আর মেক্সিকোর কাছে তো হেরেই যেতে হয়েছে বর্তমান শিরোপাধারী জার্মানিকে!
ছন্দপতনের শুরুটা করেছিল স্পেন। প্রতিপক্ষ দলে রয়েছেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর মতো সময়ের অন্যতম সেরা ফুটবলার। তবুও বাকি পর্তুগাল দলটা তো একবারেই সাদামাটা। সার্জিও রামোসের মুচকি হাসিটা আকর্ণবিস্তৃত হাসিতে রুপান্তরিত হওয়ার কথাই ছিল। কিন্তু ওই রোনালদো আটকে দিলেন স্প্যানিশদের। ম্যাচ শেষে ৩-৩ সমতার স্কোরলাইনকে এভাবে বলা ভালো, রোনালদো ৩ – স্পেন ৩! হ্যাটট্রিক করেই যে বিশ্বকাপটা শুরু করেছেন পর্তুগিজ অধিনায়ক।
স্পেন ম্যাচে তিন গোল করে রোনালদো বোধহয় অদৃশ্য একটা চ্যালেঞ্জই ছুঁড়ে দিয়েছিলেন লিওনেল মেসির দিকে। কে সেরা ফুটবলার- এই বিতর্কে দুই দলের দুই দলনায়কের ‘শীতল যুদ্ধ’র কথা তো জানা আছে সবারই। সেই চাপেই কি না আইসল্যান্ডের বিপক্ষে পেনাল্টিটাই মিস করে বসলেন বার্সেলোনা তারকা! কুন আগুয়েরোর গোলে এগিয়ে গেলেও মেসি স্পটকিকে গোল করার সুযোগ হাতছাড়া করার শেষমেশ ১-১ ব্যবধানে মাঠ ছাড়তে হয় দুবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের। স্পার্তাক ছেড়ে যাওয়ার আগে নীল-আকাশি দলপতির চোখমুখই বলে দিচ্ছিল ভীষণ হতাশ তিনি।
আর্জেন্টিনা অবশ্য ড্র করেও সান্ত্বনা খুঁজে নিতে পারে পরের দিনের জার্মানিকে দেখে। বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের জালে বলটা গলিয়ে দিয়েই ইয়ার্ভিং লোসানোর উল্লাসটা থামছিলই না। থামবেই বা কেন? জার্মানিদের হারিয়ে মেক্সিকো যে তাঁর গোলে ভর করেই জন্ম দিয়েছিল অঘটনের! ১৯৮২ সালের পর এবারই প্রথম বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ হারতে হয়েছে চারবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের।
জার্মানির পরাজয়ের রাতেই সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে রোস্তভ-অন-ডনে ব্রাজিল নেমেছিল বিশ্বকাপে শুভসূচনা করতে। ফিলিপে কৌতিনহোর দুর্দান্ত এক গোলে প্রথমার্ধ শেষে এগিয়েও ছিল তাঁরাই। অবশ্য দ্বিতীয়ার্ধের পঞ্চম মিনিটেই জুবারের গোলে সুইসরা আনে সমতা। তাই ৪০ বছর পর পাঁচবারের চ্যাম্পিয়নদের বিশ্বকাপটা শুরু করতে হয় জয় ছাড়াই!
সেরাদের আসর নামে বিশ্বকাপের রয়েছে অন্যরকম সুখ্যাতি। গ্রুপ ‘এইচ’ বাদে সবকটি দলই গ্রুপ পর্বের লড়াইয়ে শেষ করেছে শুধুই প্রথম ম্যাচটা। রাশিয়া বিশ্বকাপে সেরারা এখন পর্যন্ত নিজেদের সেরাটা না দিতে পারলেও সময় অবশ্য আছে সবার হাতেই। প্রত্যাশিত লক্ষ্য অর্জনে ‘চ্যাম্পিয়ন’ দলরা যেতে পারে কতদূর সে বলে দেবে সময়ই।