বিশ্বকাপের ১০ অধিনায়ক

মাঝখানে আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা বাকি, এর পরই মাঠে গড়াবে বিশ্বকাপ ক্রিকেট। আগামীকাল বৃহস্পতিবার পর্দা উঠবে দ্বাদশ এই আসরের। আসরে অংশ নেবে ১০ দেশ। বিশ্বকাপের ১০ অধিনায়ককে নিয়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হলো :
মাশরাফি বিন মুর্তজা (বাংলাদেশ)
বাংলাদেশ দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মুর্তজা বিশ্বকাপে দ্বিতীয়বার টাইগারদের নেতৃত্ব দেবেন। তাঁর নেতৃত্বেই ২০১৫ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দল প্রথমবার কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছিল। শেষ আটে ভারতের কাছে পরাজিত হওয়ার আগে ইংল্যান্ড, আফগানিস্তান ও স্কটল্যান্ডকে পরাজিত করেছিল টাইগাররা। বিশ্বকাপে প্রথমবার নকআউট পর্বে ওঠার পথে শক্তিশালী ইংল্যান্ডকে হারায় মাশরাফির দল। বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল অধিনায়ক ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’। তাঁর নেতৃত্বে ৭৩ ম্যাচের মধ্যে ৪৩টি ওয়ানডেতে জয় পায় বাংলাদেশ।
বিরাট কোহলি (ভারত)
ভারতের ব্যাটিংয়ের মেরুদণ্ড বিরাট কোহলি। আসন্ন বিশ্বকাপের অন্যতম ফেভারিট দলের অধিনায়ক তিনি। ওয়ানডে ক্রিকেটে ৭৩ দশমিক ৮৮ শতাংশ জয় নিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করতে যাচ্ছেন তিনি। কোহলির নেতৃত্বে ৬৮ ম্যাচের মধ্যে ৪৯ ওয়ানডে জিতেছে ভারত। তাঁর নেতৃত্বে ২০১৭ আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ফাইনাল খেলে ভারত। লর্ডসে অনুষ্ঠিত ফাইনালে যদিও চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের কাছে হেরে যায় টিম ইন্ডিয়া। বিশ্বকাপে অধিনায়ক হিসেবে এবার তাঁর অভিষেক হতে যাচ্ছে।
এউইন মরগান (ইংল্যান্ড)
গত বিশ্বকাপের গ্রুপ থেকেই বিদায় নিয়েছিল ইংল্যান্ড। এর পর থেকে ইংলিশদের শক্তিশালী দলে পরিণত করতে মুখ্য ভূমিকা রেখেছেন মরগান। তাঁর নেতৃত্বেই ইংল্যান্ড বর্তমানে আইসিসি ওয়ানডে র্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষে। নিজ মাঠে এবারের আসরে অন্যতম ফেভারিট তারা। এবারের বিশ্বকাপের সবেচেয়ে শক্তিশালী দল ভুল হবে না তাদের।
অ্যারন ফিঞ্চ (অস্ট্রেলিয়া)
ভারতের বিপক্ষে তিনটি এবং পাকিস্তানের বিপক্ষে পাঁচটিসহ অ্যারন ফিঞ্চের অধীনে সর্বশেষ আটটি ওয়ানডে জিতেছে অস্ট্রেলিয়া। ২০১৮ সালের অক্টোবরে অস্ট্রেলিয়ার ওয়ানডে অধিনায়ক নির্বাচিত হন ফিঞ্চ। এরপর তাঁর অধীনে ১৮টি ওয়ানডে খেলে ১০টি জয়ী হয়েছে অস্ট্রেলিয়া। জয়ের হার প্রায় ৫৬ শতাংশ। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে একটি ছাড়া সব জয়ই এসেছে এ বছর। গত মার্চে পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ ছাড়া অধিনায়ক হিসেবে বেশিরভাগ সময়ই ব্যাট হাতে ধুঁকেছেন ফিঞ্চ। পাকিস্তানকে পাঁচ ওয়ানডে ম্যাচে হোয়াইটওয়াশ করা সিরিজে দুই করে সেঞ্চুরি ও হাফ সেঞ্চুরি করেন তিনি।
কেন উইলিয়ামসন (নিউজিল্যান্ড)
প্রথমবার বিশ্বকাপে দলকে নেতৃত্ব দেওয়া সাত অধিনায়কের একজন কেন উইলিয়ামসন। ২০১৫ বিশ্বকাপ রানার্সআপ দলের সদস্য ছিলেন নিউজিল্যান্ডের বর্তমান অধিনায়ক। তৎকালীন অধিনায়ক ব্রেন্ডন ম্যাককালামের ছায়াতলে বেড়ে উঠেছেন তিনি। ধৈর্যশীল ও একজন পরিপূর্ণ খেলোয়াড় বলা হয়ে তাঁকে। অধিনায়ক হিসেবেও সফল তিনি। তাঁর অধীনে কিউইদের জয়ের হার ৫৩ শতাংশ ৯৭।
সরফরাজ আহমেদ (পাকিস্তান)
সরফরাজের নেতৃত্বেই ২০১৭ আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফির শিরোপা জিতে পাকিস্তান। তাই আসন্ন বিশ্বকাপেও সাফল্যে আশাবাদী তিনি। সরফরাজের অধীনে পাকিস্তান দলের জয়ের হার ৬১ দশমিক ৭৬ শতাংশ। ৩৫ ওয়ানডের মধ্যে ২১টিতে জয় এনে দিয়েছেন তিনি। অধিনায়ক ও একজন মিডলঅর্ডার ব্যাটসম্যান এবং উইকেটরক্ষ বিশ্বকাপে পাকিস্তান দলের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করবেন সরফরাজ।
ফাফ ডু প্লেসিস (দক্ষিণ আফ্রিকা)
সবচেয়ে সফল অধিনায়কদের তালিকায় অন্যতম তিনি। অধিনায়ক হিসেবে অসাধারণ সাফল্য রয়েছে ফাফের। তাঁর অধীনে ৩০ ওয়ানডে জিতেছে। তাঁর অধীনে প্রোটিয়াদের জয়ের হার ৮৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ। ২০১৮ সালের শুরু থেকে দক্ষিণ আফ্রিকা মাত্র একটি দ্বিপক্ষীয় সিরিজে পরাজিত হয়েছে। পক্ষান্তরে জিতেছে পাঁচটি। একজন মিডল অর্ডার স্টাইলিস্ট ব্যাটসম্যান ডু প্লেসিসের ওয়ানডে ব্যাটিং গড় ৪৬ দশমিক ৫৪ । য তাকে টপঅর্ডারে অনন্য সম্পদে পরিণত করেছে। লোয়ার মিডল অর্ডারেও ব্যবহারে কার্যকর তিনি।
দিমুথ করুনারত্নে (শ্রীলঙ্কা)
নিরোশান ডিকবেলা, দিনেশ চান্ডিমাল, উপুল থারাঙ্গা এবং আকিলা ধনঞ্জয়াসহ বেশ কিছু নিয়মিত ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন খেলোয়াড়কে ছাড়া বিশ্বকাপ খেলতে হবে শ্রীলংকাকে। ২০১৫ বিশ্বকাপের মার্চে শেষ ওয়ানডে খেলা দিমুথ করুনারত্নেকে আসন্ন আসরের অধিনায়ক নির্বাচন করা হয়েছে। এ বছরের শুরুতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ঐতিহাসিক ২-০ ব্যবধানে টেস্ট সিরিজ জয়ে শ্রীলংকা দলের নেতৃত্ব দেন তিনি। দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে শ্রীলংকা দলের প্রথম টেস্ট সিরিজ জয়ে দলের নেতৃত্ব দিলেও ওয়ানডে ক্রিকেটে এখনো অধিনায়ক হিসেবে তার অভিষেক হয়নি। একজন ব্যাটসম্যান হিসেবে তার কিছু কৌশল আছে এবং কীভাবে রান করতে হয়, সেটা তিনি জানেন। তবে মাত্র ১৬ গড়ে ১৭ ম্যাচে তার রান সংখ্যা ১৯০।
জেসন হোল্ডার (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)
এবারের বিশ্বকাপে সবচেয়ে কম বয়সী অধিনায়ক হতে হতে যাচ্ছেন ২৭ বছর বয়সী হোল্ডার। অভিজ্ঞতা ও তারুণ্যের মিশ্রণে গড়া দল দল নিয়ে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটানোই তাঁর লক্ষ্য। যদিও ২০১৪ সালের পর দ্বিপক্ষীয় কোনো ওয়ানডে সিরিজ জিতে পারেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তবে সম্প্রতি নিজ মাঠে শক্তিশালী ইংল্যান্ডের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচের সিরিজ ড্র করেছে এবং এখান থেকে পাওয়া আত্মবিশ্বাস নিয়েই টুর্নামেন্ট শুরু করবে তারা।
গুলবাদিন নাইব (আফগানিস্তান)
কেবল অধিনায়ক হিসেবেই বিশ্বকাপে গুলবাদিন নাইবের অভিষেক ঘটতে যাচ্ছে তেমনটা নয়, আন্তর্জাতিক কোনো ম্যাচেও তিনি প্রথমবার দলের নেতৃত্ব দিতে যাচ্ছেন। তিন ফরম্যাটে তিনজনকে দায়িত্ব দেওয়ার নীতি গ্রহণ করায় মাত্র কয়েক দিন আগেই নাইবকে ওয়ানডে দলের অধিনায়ক নির্বাচন করে আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ড। আসগর আফগানকে সরিয়ে ৫০ ওভার ফর্মেটে অধিনায়ক নির্বাচিত হন নাইব। কোনো অতীত অভিজ্ঞতা ছাড়া তিনি কীভাবে দায়িত্ব পালন করেন সেটাই দেখার বিষয়।