‘দিবা-রাত্রির টেস্ট থাকতেই এসেছে’
পাঁচ দিনের ম্যাচ তিন দিনেই শেষ। এই তিন দিনে উইকেট পড়েছে ৩৭টি। বোঝাই যাচ্ছে, সদ্যসমাপ্ত অ্যাডিলেড টেস্টে রাজত্ব ছিল বোলারদের। তবে বোলার বা ব্যাটসম্যান যে-ই আধিপত্য করুক, এই টেস্ট যে ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। প্রথম দিবা-রাত্রির টেস্টের আয়োজন করে ইতিহাসে জায়গা করে নিয়েছে অ্যাডিলেড ওভালও। মাঠের দর্শক, টিভির দর্শক থেকে শুরু করে খেলোয়াড়-কর্মকর্তারাও এই ম্যাচ নিয়ে অভিভূত, উচ্ছ্বসিত। ভবিষ্যতে আরো বেশি গোলাপি বল আর কৃত্রিম আলোর টেস্ট ক্রিকেট দেখার সম্ভাবনাও উজ্জ্বল।
অস্ট্রেলিয়ার তিন উইকেটে জয় পাওয়া অ্যাডিলেড টেস্টে মোট এক লাখ ২৩ হাজার ৭৩৬ জন দর্শক হয়েছিল, তা-ও মাত্র তিন দিনে। এর মধ্যে প্রথম দিন গ্যালারিতে ছিল ৪৭ হাজার ৪৪১ দর্শক। ১৯৩২-৩৩ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ডের কুখ্যাত ‘বডিলাইন’ সিরিজের পর অ্যাডিলেড ওভালে কোনো টেস্টে এটাই সবচেয়ে বেশি দর্শক সমাগম।
ইতিহাসের সাক্ষী হতে টেলিভিশনেও চোখ রেখেছিল কোটি কোটি মানুষ। ম্যাচটির প্রধান সম্প্রচারক নাইন নেটওয়ার্কের হিসাব অনুযায়ী, রোববার শুধু অস্ট্রেলিয়াতেই খেলা দেখেছে প্রায় ৩২ লাখ মানুষ। যে দেশের জনসংখ্যা আড়াই কোটিরও কম, সে দেশের জন্য সংখ্যাটা সত্যিই চমকপ্রদ।
মানুষের এত বিপুল আগ্রহ দেখে দুই দলের অধিনায়কই অভিভূত। অস্ট্রেলিয়ার স্টিভেন স্মিথের উচ্ছ্বাসভরা মন্তব্য, ‘পুরো টেস্ট ম্যাচটাই যেন নতুনত্বের এক দুর্দান্ত সমাহার। প্রচুর দর্শক খেলা দেখেছে। মাত্র তিন দিনে এক লাখ ২০ হাজারের বেশি মানুষের গেট দিয়ে প্রবেশ করা সত্যিই অবিশ্বাস্য।’ নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক ব্রেন্ডন ম্যাককালামও এত দর্শক দেখে চমৎকৃত, ‘এ ধারণাটাই দুর্দান্ত। সব মিলিয়ে বিশাল সাফল্য। তিন দিনে এক লাখ ২০ হাজারের বেশি দর্শক হওয়া অসাধারণ ব্যাপার। দিবা-রাত্রির টেস্ট সম্পর্কে মানুষ তাদের রায় জানিয়ে দিয়েছে। আমার তো মনে হয়, এটা থাকতে এসেছে, যা হবে দারুণ ব্যাপার।’
ম্যাককালামের ভবিষ্যদ্বাণী নির্ভুল হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। কারণ, ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া (সিএ) আগামী বছর আরো অন্তত দুটো দিবা-রাত্রির টেস্ট আয়োজনের চিন্তাভাবনা করছে। অ্যাডিলেড অস্ট্রেলিয়ার যে রাজ্যের রাজধানী, সেই সাউথ অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন আগামী বছরের ডিসেম্বরে পাকিস্তানের সঙ্গে দিবা-রাত্রির টেস্ট আয়োজন করতে আগ্রহী।
ব্রিসবেনের গ্যাবায় আগামী বছর অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট মৌসুমের প্রথম টেস্টও (যেখানে স্বাগতিকদের প্রতিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকা) হতে পারে কৃত্রিম আলোয়। সিএর প্রধান নির্বাহী জেমস সাদারল্যান্ডের কথায় তেমনই ইঙ্গিত, ‘সামনের বছর দিবা-রাত্রির টেস্টের জন্য গ্যাবা হতে পারে প্রথম পছন্দ। মাঠটির ফ্লাডলাইট আগের চেয়ে আধুনিকীকরণ করা হয়েছে। আমার তো মনে হয়, এই মাঠে একটা চমৎকার টেস্টের আয়োজন করা যেতেই পারে।’
আইসিসির প্রধান নির্বাহী ডেভিড রিচার্ডসনও দিবা-রাত্রির টেস্টের সাফল্যে মুগ্ধ। গোলাপি বলের ক্রিকেটের উজ্জ্বল সম্ভাবনাও দেখতে পাচ্ছেন তিনি, ‘অ্যাডিলেডে প্রথম দিবা-রাত্রির টেস্ট বিশাল সাফল্য পেয়েছে। পৃথিবীজুড়ে ক্রিকেট অনুসারীরা ম্যাচটা উপভোগ করেছে। প্রতিটি ভেন্যুতে দিবা-রাত্রির টেস্ট আয়োজন করা সম্ভব নয়। তবে এটা নিঃসন্দেহে খেলোয়াড়-দর্শক-সম্প্রচারকদের সামনে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। আর এটা থাকতেই এসেছে।’