২০১৫
ক্রিকেটে সাফল্যে ভাস্বর বাংলাদেশ
২০১৫ সালে ক্রিকেট বিশ্ব এক নতুন বাংলাদেশ দেখেছিল। বছরজুড়েই অসাধারণ কিছু সাফল্য দিয়ে সারা দুনিয়াকে রীতিমতো অবাক করে দিয়েছেন মাশরাফি-সাকিব-মুশফিকরা। অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপ দিয়ে যে সাফল্যের সূচনা হয়েছিল, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ পর্যন্ত সেই ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে লাল-সবুজের দল। তাই গত একটি বছর বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে সেরা সময় বললেও ভুল বলা হবে না।
বিশেষ করে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠা, পরবর্তী সময়ে ঘরের মাঠে পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজ জিতে দারুণ কিছু অর্জন ঘরে তোলে তারা। সে ধারাবাহিকতায় গত নভেম্বরে জিম্বাবুকেও ৩-০ তে হোয়াইটওয়াশা করে বাংলাদেশ। সব মিলেয়ে গত এক বছরে মোট ১৮টি ওয়ানডে খেলে ১৩টিতেই জিতেছিল বাংলাদেশ।
মূলত গত ফেব্রুয়ারিতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে অসাধারণ জয় দিয়ে বাংলাদেশের সাফল্যের শুরু। বিশ্বকাপে সেই ম্যাচে বাংলাদেশ ১০৫ রানের বিশাল জয় পেয়েছিল। সে ধারাবাহিতায় স্কটল্যান্ড ও ইংল্যান্ডকে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠে বাংলাদেশ। অবশ্য দুর্ভাগ্যবশত কোয়ার্টার ফাইনালে ভারতের কাছে হেরে যায় মাশরাফির দল।
বিশ্বকাপে শুধু দলীয় অর্জনই ছিল না, ব্যক্তিগত কিছু সাফল্য দৃষ্টি কেড়েছিল সবার। অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান মাহমুদউল্লাকে নতুন করে পেয়েছিল বাংলাদেশ। ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টানা দুটি শতক করে বেশ নজর কেড়েছিলেন তিনি। ব্যাট হাতে বেশ উজ্জ্বল ছিলেন মুশফিকুর রহিমও। নজর কড়েছিলেন সৌম্য সরকার ও সাব্বির রহমানও। বল হাতে দুই পেসার রুবেল হোসেন ও তাসকিন আহমেদ দারুণ খেলেছিলেন।
বিশ্বকাপের পর পরই এপ্রিলে ঘরের মাঠে মোকাবিলায় নামে সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন পাকিস্তানের। এই উপমহাদেশের অন্যতম পরাশক্তি দলটিকে একরকম নাস্তানাবুদ করেছিল বাংলাদেশ। ওয়ানডেতে ৩-০তে হোয়াইটওয়াশ করে তারা।
সিরিজের দুই টেস্টের একটিতে হারলেও অন্যটি ড্র হয়। হেরেছে সিরিজের একমাত্র টি-টোয়েন্টিতে। অবশ্য পাকিস্তানের বিপক্ষে সেই টি-টোয়েন্টি ম্যাচ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছিল সাতক্ষীরার তরুণ পেসার মুস্তাফিজুর রহমানের। সেই ম্যাচেই মুস্তাফিজ তাঁর বৈচিত্র্যপূর্ণ বোলিং দিয়ে নির্বাচকদের দৃষ্টি কাড়েন। সুযোগ পেয়ে যান পরবর্তী সময়ে ভারতের বিপক্ষে সিরিজেও।
এই মুস্তাফিজের অসাধারণ নৈপুণ্যে ভারতের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ ২-১ এ জিতেছিল বাংলাদেশ। অভিষেকেই পাঁচ উইকেট এবং দ্বিতীয় ম্যাচে ছয় উইকেটসহ সিরিজে মোট ১৩ উইকেট নিয়ে সাতক্ষীরার এই বাঁ-হাতি পেসার বিশ্বরেকর্ড গড়েন। তাঁর বিখ্যাত ‘কাটার’ দিয়ে ব্যাটসম্যানদের মধ্যেও রীতিমতো ভীতি জাগান।
পরে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ২-১ এ সিরিজ জয় এবং জিম্বাবুয়েকে ৩-০তে হোয়াইটওয়াশ করার পেছনে এই তরুণ পেসারের কম অবদান ছিল না। প্রোটিয়াদের বিপক্ষে তিন ম্যাচে পাঁচ উইকেট এবং জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সমান সংখ্যক ম্যাচে আট উইকেট নিয়ে শুধু দলকেই সাফল্য এনে দেননি, নিজের ঝুলিটাকেও সমৃদ্ধ করেছেন। এই পর্যন্ত নয়টি ওয়াডে খেলে ২৬ উইকেট নিয়েছেন তিনি।
তবে বাংলাদেশের এই সাফল্যে অধিনায়ক মাশরাফির অবদানের কথা ভুলে গেলে চলবে না। তাঁর নেতৃত্বেই মূলত এক উজ্জীবিত বাংলাদেশের দেখা পেয়েছে ক্রিকেট বিশ্ব।
তবে বিশ্বকাপে সাফল্যের মাঝে কিছুটা হতাশার খবরও ছিল। শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে বিশ্বকাপের মাঝ পথেই পেসার আল আমিন হোসেনকে দেশে ফেরত আসতে হয়েছে। কাঁধে চোট পেয়ে দেশে ফেরত আসেন উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান এনামুল হকও। অবশ্য এর বাইরে আলোচিত বিষয় ছিল বিশ্বকাপ চলাকালীন ম্যানেজার খালেদ মাহমুদের অস্ট্রেলিয়ার একটি ক্যাসিনোতে যাওয়ার খবরটি। সংবাদ মাধ্যমে খবরটি প্রকাশ পেলে বেশ বিতর্ক তৈরি হয় তখন।
তবে গত সেপ্টেম্বরে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দল বাংলাদেশ সফর স্থগিত করায় দেশের ক্রিকেটের জন্য ছিল একটি বড় হতাশার খবর। সাম্ভাব্য নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া তাদের জাতীয় দলের বাংলাদেশ সফর স্থগিত করে।
অবশ্য বছরের শুরুতে বিশ্বকাপের ঠিক আগ মুহূর্তে সবচেয়ে আলোচিত খবর ছিল পেসার রুবেল হোসেনের বিরুদ্ধে চিত্রনায়িকা নাজনীন আক্তার হ্যাপী ধর্ষণ ও প্রতারণার অভিযোগে মামলা করেন। এর জন্য রুবেলকে তিনদিন জেলও খাটতে হয়েছিল।
শিশু গৃহকর্মী মাহফুজা আক্তার হ্যাপিকে নির্যাতনের অভিযোগে জেলে যেতে হয়েছে জাতীয় দলের আরেক পেসার শাহাদাত হোসেন এবং তাঁর স্ত্রীকে। মিরপুর থানায় সাংবাদিক খন্দকার মোজাম্মেল হকের করা এক মামলায় দুই মাসের বেশি সময় কারাবাস করে গত ১২ ডিসেম্বর জামিন পান তিনি।