বার্সার মাঠে রিয়ালের ‘প্রতিশোধ’
গত নভেম্বরে ঘরের মাঠ সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে বার্সেলোনার কাছে ৪-০ গোলে বিধ্বস্ত হয়েছিল রিয়াল মাদ্রিদ। এবার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর মাঠেই বিজয়ীর হাসি রিয়ালের। এল ক্লাসিকো ২-১ গোলে জিতে শুধু প্রতিশোধই নেয়নি স্পেনের সফলতম দলটি, কিছুটা হলেও জমিয়ে তুলেছে লা লিগার শিরোপা লড়াই।
হেরে গেলেও ৭৬ পয়েন্ট নিয়ে লিগের শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে বার্সা। ৬৯ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় স্থানে আছে রিয়াল। দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর মাঝে থাকা আতলেতিকো মাদ্রিদের পয়েন্ট ৭০। তিন দলেরই আর সাতটি করে ম্যাচ বাকি।
ন্যু ক্যাম্পে দুই দলই সতর্কতার সঙ্গে শুরু করলেও সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে আক্রমণের তীব্রতা বাড়তে থাকে বার্সেলোনার। তবে বেশ কয়েকটি সুন্দর সুযোগ পেলেও প্রথমার্ধে রিয়ালের গোলমুখ খুলতে পারেনি গত মৌসুমের ট্রেবলজয়ীরা। নিঃসন্দেহে সবচেয়ে সহজ সুযোগের জন্ম দশম মিনিটে। ডান দিক দিয়ে আড়াআড়ি পাস দিয়েছিলেন নেইমার। বক্সের ভেতর থাকা লুইস সুয়ারেজ ‘মার্কার’ সার্জিও রামোসকে ফাঁকি দিলেও বলে পা লাগাতে পারেননি।
১৬ মিনিটে প্রথম সুযোগ পেয়েছিল রিয়াল মাদ্রিদ। তবে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর শট ধরে ফেলতে সমস্যা হয়নি বার্সা গোলরক্ষক ক্লদিও ব্রাভোর। এরপরই স্বাগতিকদের আক্রমণের তোড়ে বেসামাল হয়ে যায় রিয়ালের রক্ষণভাগ। ১৮ মিনিটে লিওনেল মেসির ফ্রিকিক ক্রসবার উঁচিয়ে চলে যাওয়ার পরের মিনিটেই দারুণ এক আক্রমণ থেকে ইভান রাকিতিচের শট দক্ষতার সঙ্গে ঠেকিয়ে দেন রিয়ালের গোলরক্ষক কেইলর নাভাস।
২৩ মিনিটে মেসিকে বক্সের একটু বাইরে রামোস ফেলে দিলেও রেফারি ফাউলের বাঁশি বাজাননি। দুই মিনিট পর দারুণ সুযোগ এসেছিল রিয়ালের সামনে। তবে রোনালদোর শট ব্রাভো ঠেকানোর পর গ্যারেথ বেলের ফিরতি শট ক্রসবারের ওপর দিয়ে চলে গিয়ে হতাশ করে রিয়াল সমর্থকদের।
বিরতির ঠিক আগে দুই দলের সামনেই সুযোগ এসেছিল। কিন্তু ৪০ মিনিটে বার্সার দানি আলভেস ও ৪২ মিনিটে রিয়ালের করিম বেনজেমার জোরালো শট ক্রসবার উঁচিয়ে চলে গেলে প্রথমার্ধে ম্যাচের বন্ধ্যত্ব ঘোচেনি।
তবে বিরতির পর ৫৬ মিনিটে বার্সেলোনাকে হতাশ হতে হয়নি। বক্সের ভেতর থেকে নেওয়া মেসির চমৎকার ভলি কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেছিলেন নাভাস। কর্নার থেকে দলকে বিপদমুক্ত করতে প্রতিপক্ষকে তিনটি কর্নার দিয়েছিলেন রিয়ালের খেলোয়াড়রা। তবে তৃতীয় কর্নারে আর রক্ষা পায়নি অতিথিরা। জেরার্ড পিকের জোরালো হেড এগিয়ে দিয়েছে বার্সাকে।
তবে সমতা ফেরাতে বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি রিয়ালকে। ৬২ মিনিটে বেনজেমার গোলটা এককথায় অসাধারণ। দারুণ এক পরিকল্পিত আক্রমণ থেকে মার্সেলো পাস দিয়েছিলেন বক্সের ডান দিকে থাকা টনি ক্রুজকে। ক্রুজের ক্রস চোখধাঁধানো অ্যাক্রোবেটিক ভলিতে জালে পাঠিয়ে দিয়েছেন বেনজেমা।
১-১ হওয়ার পর দুই দলই বেশ কিছুক্ষণ সাবধানে খেলছিল। মনে হচ্ছিল, দুই দলই যেন ড্রয়ের জন্য খেলছে। তবে শেষ ১০ মিনিটে আক্রমণ-পাল্টাআক্রমণের উপভোগ্য লড়াই মন ভরিয়ে দিয়েছে ফুটবলপ্রেমীদের। রিয়ালের জয়সূচক গোলটাও হয়েছে সেই সময়।
তবে তার আগে কম ‘নাটক’ হয়নি। ৭৯ মিনিটে নেইমারের শট একটুর জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ার পরের মিনিটে হেড করে বল জালে পাঠিয়েছিলেন বেল। কিন্তু বেলের বিরুদ্ধে ‘মার্কার’কে ফাউল করার অপরাধে রেফারি গোলটার বৈধতা দেননি।
৮১ মিনিটে রোনালদোর শট ক্রসবার ছুঁয়ে বাইরে চলে গিয়ে হতাশ করেছে রিয়ালকে। পরের মিনিটে লা লিগার সফলতম দলটির জন্য আরেক ধাক্কা। সুয়ারেজকে ফাউল করে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে মাঠের বাইরে চলে যেতে হয়েছে রিয়াল অধিনায়ক রামোসকে।
তবে ৮৫ মিনিটে রোনালদোর গোল সব দুঃখ ভুলিয়ে দিয়েছে রিয়াল সমর্থকদের। ডান দিক থেকে আসা বেলের ক্রস বুক দিয়ে নামিয়ে, গড়ানো শটে বল জালে পাঠিয়ে দিয়েছেন রিয়ালের সবচেয়ে বড় তারকা। এই গোলটিই তিন পয়েন্ট নিশ্চিত করে দিয়েছে অতিথিদের।
খেলা শুরু হওয়ার আগে ডাচ ও বার্সেলোনা কিংবদন্তি সদ্যপ্রয়াত ইয়োহান ক্রুইফের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করেছিল পুরো মাঠ। কে জানতো, খেলাশেষে ঘরের মাঠ ন্যু ক্যাম্পে প্রিয় দলের পরাজয়ে একেবারে স্তব্ধ হয়ে যেতে হবে বার্সা সমর্থকদের!