আবার বাংলাদেশে আসতে চেয়েছিলেন মোহাম্মদ আলী
চলে গেলেন বক্সিংয়ের রাজা মোহাম্মদ আলী। অবসান হলো খেলাধূলার ইতিহাসের এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়ের। অনেকের মতে সর্বকালের সেরা বক্সার মোহাম্মদ আলীর কথা বাংলাদেশ কোনো দিন ভুলতে পারবে না। ১৯৭৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে এ দেশে এসেছিলেন এই কিংবদন্তি। সঙ্গে ছিলেন তাঁর স্ত্রী ভেরোনিকা। বাংলাদেশের মানুষকে আনন্দের সাগরে ভাসিয়ে দিয়ে গিয়েছিলেন তিনি।
মোহাম্মদ আলীর বাংলাদেশ ভ্রমণ নিয়ে একটা তথ্যচিত্র নির্মিত হয়েছিল। তথ্যচিত্রটার নাম ‘মোহাম্মদ আলী গোজ ইস্ট : বাংলাদেশ, আই লাভ ইউ।’ বাংলাদেশকে সত্যিই ভালোবেসেছিলেন তিনি। এই সুন্দর দেশটিতে আবার আসতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সেই আশা পূরণ হয়নি বক্সিং কিংবদন্তির।
তখনো কুর্মিটোলায় বর্তমান বিমানবন্দর উদ্বোধন হয়নি। ঢাকার তেজগাঁওয়ে পুরোনো বিমানবন্দরে সেদিন লাখো জনতার ঢল। মোহাম্মদ আলীকে উষ্ণ অভ্যর্থনায় বুকে টেনে নিয়েছিল এ দেশের মানুষ। তার কিছু দিন আগে লিওন স্পিংকসের কাছে বিশ্ব হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা হারিয়েছিলেন। তাই বাংলাদেশের মানুষ তাঁকে কীভাবে গ্রহণ করবে, তা নিয়ে কিছুটা সন্দেহ ছিল আলীর মনে। তবে ঢাকার মাটিতে পা রেখে সব সন্দেহ দূর হয়ে গিয়েছিল তাঁর।
প্রায় সপ্তাহ খানেক বাংলাদেশে ছিলেন আলী। সুন্দরবন, রাঙামাটি, কক্সবাজার আর সিলেটের চা-বাগানের সৌন্দর্য মুগ্ধ করেছিল মার্কিন কিংবদন্তিকে। কক্সবাজারে এক টুকরো জমিও উপহার পেয়েছিলেন তিনি। বাংলাদেশের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান তাঁকে সম্মানসূচক নাগরিকত্ব প্রদান করেছিলেন। বাংলাদেশের পাসপোর্ট হাতে পেয়ে আলী বলেছিলেন, ‘আমেরিকা থেকে বের করে দিলেও আমার আরেকটা বাড়ি থাকবে।’
বাংলাদেশে মজাও কম করেননি মোহাম্মদ আলী। তাঁর সম্মানে ঢাকা স্টেডিয়ামে একটা ‘বিশেষ’ বক্সিং লড়াইয়ের আয়োজন করা হয়েছিল। সেই লড়াইয়ে তাঁর প্রতিপক্ষ ছিল ১২ বছরের এক কিশোর। মানুষকে মজা দেওয়ার জন্য সেই কিশোরের ঘুষিতে প্রবল পরাক্রমশালী বক্সার লুটিয়ে পড়েছিলেন মাটিতে। আলীকে ‘নক আউট’ হতে দেখে উল্লাস আর হর্ষধ্বনিতে ফেটে পড়েছিল গ্যালারি।
বিদায়বেলায় আবারো বাংলাদেশে আসার আকাঙ্ক্ষার কথা জানিয়েছিলেন মোহাম্মদ আলী। যাওয়ার সময় বলেছিলেন, ‘যদি কেউ স্বর্গে যেতে চান, তাহলে বাংলাদেশে আসুন।’ প্রিয় দেশটিতে আর কখনো আসা হয়নি তাঁর। এবার তো চলে গেলেন পৃথিবী ছেড়েই। তবে যেখানেই থাকুন, বাংলাদেশের মানুষ কখনো ভুলবে না তাঁদের প্রিয় মোহাম্মদ আলীকে।