হলিউডের সিনেমায় মোহাম্মদ আলী
কিংবদন্তি বক্সার মোহাম্মদ আলীর নিবিড় সম্পর্ক ছিল হলিউডের সঙ্গে। আলীর জীবন আর দশটা সাধারণ হিরোর মতো ছিলেন না, যার কারণে সেলুলয়েডে তাঁকে ধারণ করাটা একটু কষ্টসাধ্যই ছিল বলা চলে। অসাধারণ ব্যক্তিত্ব আর মননশীল চিন্তার কারণে আলী বরাবরই ছিলেন হলিউডের ভালোবাসার প্রতীক। সে সঙ্গে বেপরোয়া মনমেজাজ আর কথা তাঁকে হলিউডের জন্য উপযোগী চরিত্র করে তুলেছিল অনায়াসে।
সিলভেস্টার স্ট্যালোনের ‘রকি’ ছিল ১৯৭৫ সালের ১৫ রাউন্ড হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়নের মুকুটধারী মোহাম্মদ আলী আর চাক ওয়েপনারের জীবন কাহিনী থেকে অনুপ্রাণিত। আলীর নাটকীয় লড়াইয়ে এতটাই মুগ্ধ ছিলেন স্ট্যালোন যে তিনিই হয়ে উঠলেন ‘রকি’। এর পরের গল্প তো সবারই জানা, ১৯৭৬ সালের ‘বেস্ট পিকচার’ ক্যাটাগরিতে ‘রকি’র অস্কার জয়। বিস্ময়-বালক আলী যেখানে আবার অবাক করে দিলেন সবাইকে। অস্কারের মঞ্চে স্ট্যালোনের বক্তৃতার ভেতরে হঠাৎ প্রবেশ করে স্ট্যালোনকে মজা করেই বললেন, ‘তুমি তো আমার স্ক্রিপ্ট চুরি করেছ।’
এ ছাড়া হলিউডের বেশ কিছু সিনেমার উপজীব্য ছিল ‘হেভিওয়েট’, যার ব্যাপ্তি প্রায় পাঁচ যুগ। ১৯৭০ থেকে ২০১৩—এই কবছরে তাঁর জীবন আর ক্যারিয়ার নিয়ে নির্মিত হয়ে বেশ কয়েকটি সিনেমা। ব্যক্তি আলীর হাস্যরসাত্মক উক্তি আর অসাধারণ বুদ্ধিমত্তায় সবাই ছিলেন মুগ্ধ, তাই হলিউড জন্ম দিয়েছিল কালজয়ী কিছু সংলাপেরও।
‘নরম্যান মেইলার’, ‘ফ্রিডম রোড’, ‘দ্য সুপারফাইট’সহ অনেক সিনেমায়ই দেখা গিয়েছিল আলীকে। দেখা গিয়েছিল তাঁর আত্মজীবনী নিয়ে নির্মিত সিনেমায়ও, উপস্থিত হয়েছিলেন ভিন্ন মাত্রার অনেক টিভি শোতেও।
হোয়েন উই ওয়্যার কিংস (১৯৯৬)
আলীকে নিয়ে নির্মিত সব প্রামাণ্যচিত্র কিংবা সিনেমার মধ্যে অন্যতম সেরা এবং বহুল প্রশংসিত এই ডকুমেন্টারিটি। জর্জ ফোরম্যানকে হারিয়ে ৩২ বছর বয়সী আলীর হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সেই রূপকথার মতো গল্পই এর উপজীব্য।
দ্য গ্রেটেস্ট (১৯৭৭)
‘দ্য গ্রেটেস্ট’ ছিল আলীর জীবনের সেরা লড়াইগুলো নিয়ে তৈরি একটি ছবি, যাতে যোগ করা হয়েছে বাড়তি কিছু নাটকীয়তা। তাঁর লড়াইয়ের সত্যিকার কিছু ফুটেজ ও দেখানো হয় এই সিনেমায়। মজার এই সিনেমাটিতে আবার বাড়তি পাওয়া হিসেবে আছে জর্জ বেনসনের গাওয়া ‘দ্য গ্রেটেস্ট লাভ অব অল’।
ফেইসিং আলী (২০০৯)
ভিন্নধর্মী এই ডকুমেন্টারিটি সাজানো আলীর প্রতিপক্ষদের নিয়ে, যেখানে আলীকে নিয়ে তাঁদের নিজস্ব অভিব্যক্তি আর মতামত প্রকাশ করেন সবাই। পুরোটা ছিল আসলে ব্যক্তি এবং লড়াকু আলীর অভিনবত্ব আর তাঁর সঙ্গে অন্যদের লড়াইয়ের অভিজ্ঞতা।
দ্য ট্রায়ালস অব মোহাম্মদ আলী (২০১৪)
কিংবদন্তি এই বক্সারের জীবন সম্পর্কে আমরা কতটাই বা জানি! এই সিনেমাটি দেখলে এমন মনে হতে পারে দর্শকের। আলী ছিলেন সেই গুটিকয়েক আমেরিকানের একজন, যিনি তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন ভিয়েতনাম যুদ্ধের। তারই বয়ান মিলবে এই ডকুমেন্টারিতে। সেখানে আরো দেখানো হয় অসমতা, বর্ণবাদ এবং ধর্মের মতো বিষয়গুলো নিয়ে তাঁর ভাবনা আর বিশ্বাস।
আলী (২০০১)
জীবনীভিত্তিক এই সিনেমাটির নির্মাতা ছিলেন মাইকেল ম্যান। মোহাম্মদ আলীর ব্যক্তিজীবন থেকে শুরু করে ক্যারিয়ার, দর্শন থেকে শুরু করে ইসলাম, সবকিছু নিয়ে তাঁর ভাবনা আর জো ফ্রেজিয়ার ও জর্জ ফোরম্যানের বিরুদ্ধে সেই ঐতিহাসিক লড়াই, এর সব নিয়েই ‘আলী’। বহুল প্রশংসিত এই সিনেমায় নতুন মাত্র যোগ করেন অভিনেতা উইল স্মিথ, যার ফলে সেই বছরের অস্কার আসরে ‘সেরা অভিনেতা’ পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন পান তিনি।