আস্থার প্রতিদান দিয়েই যাচ্ছেন জামাল
অনেকটা হঠাৎ করেই জাতীয় দলে সুযোগ পান জামাল ভূঁইয়া। বছর দেড়েক আগে বাংলাদেশের কোচ লোডভিক ডি ক্রুইফ কিছুটা বিস্ময়ের জন্ম দিয়ে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের প্রাথমিক দলে রাখেন তাঁকে। অনুশীলনে ডাচ কোচের মন জয় করে কাঠমান্ডুগামী মূল দলেও জায়গা করে নেন ডেনমার্ক প্রবাসী এই ফুটবলার। সেই থেকে জামাল ভূঁইয়া জাতীয় দলের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
বাংলাদেশ দলে তিনি এমন এক পজিশনে খেলেন, যেখান থেকে সাধারণ দর্শকের দৃষ্টি কেড়ে নেওয়া খুব কঠিন—ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার। তবে দর্শকরা বুঝতে না পারলে কী হবে, কোচের চোখে তিনি দলের আক্রমণের ‘নেতা’।
মাঠে তাঁর প্রধান কাজ হচ্ছে সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার মামুনুল ইসলামের পেছনে থেকে প্রতিপক্ষের আক্রমণ প্রতিহত এবং নিজের দলের আক্রমণের সূত্রপাত করা। পাশাপাশি দুই উইংয়ে বল জোগানও দিতে হয়।
নিঃসন্দেহে খুব কঠিন আর পরিশ্রমের কাজ। এমন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব জামালের ওপর অর্পণ করতে ডি ক্রুইফ বিন্দুমাত্র দ্বিধা করেননি। কারণটা শোনা যাক এই ডাচ কোচের মুখেই, ‘জামাল যে পরিশ্রমী ফুটবলার তাতে কোনো সন্দেহ নেই। দলের তরুণ খেলোয়াড়দের সহযোগিতা করার পাশাপাশি আক্রমণে বিশেষ ভূমিকা রাখে সে। আমি তো তাকে নেতাই বলব। তার পুরো মাঠজুড়ে খেলার যে ক্ষমতা, তা এক কথায় অসাধারণ। তার মতো ফুটবলার যে কোনো দলের জন্যই সম্পদ।’
কোচের আস্থার প্রতিদান দিয়ে চললেও এখনো একটা আশা পূরণ হয়নি জামালের। আজও বাংলাদেশের জার্সি গায়ে গোলের দেখা পাননি। মাঝমাঠে একটু পেছনের দিকে খেলেন বলে তাঁর জন্য গোল করা একটু মুশকিল।
এখন অবশ্য ডিফেন্ডারদেরও অহরহ গোল করতে দেখা যায়। কিন্তু জামালের পায়ের স্পর্শে বল কিছুতেই জাল খুঁজে পাচ্ছে না। তাঁর ব্যাকুলতাও তাই বেড়ে যাচ্ছে দিন দিন।
বুধবার রাজধানীর একটি হোটেলে কথোপকথনে সেই ব্যগ্রতাই ফুটে উঠল জামালের কণ্ঠে, ‘ক্লাব ফুটবলে গোল করেছি। কিন্তু নিজের দেশের হয়ে একটা গোল করতে পারা অনেক সৌভাগ্যের ব্যাপার, যা আমি এখনো পারিনি। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে চেষ্টা করলেও গোলের দেখা পাইনি। আশা করছি সামনের কোনো ম্যাচে গোল পাব।’
‘এই বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপেই আমি গোলের দেখা পেতে চাই। সেজন্য কোচের পরামর্শে আলাদা করে অনুশীলনও করছি। এখন সময়ই বলে দেবে আমার প্রত্যাশা পূরণ হবে কিনা।’
অবশ্য শুধু নিজের গোল নিয়ে নয়, ডেনমার্কের দ্বিতীয় বিভাগের দল হেলারাপ আইকের হয়ে খেলা জামালের চিন্তা-চেতনা জুড়ে আছে পুরো দল, ‘আমি ইউরোপের ফুটবল কালচার থেকে এসেছি। এটা আমাদের দলের মধ্যে একটা বৈচিত্র্য এনেছে। ফুটবল নিয়ে আমার ভাবনা পুরো দলে ছড়িয়ে দিয়েছি। এটা দলের উপকারে এসেছে বলেই আমার বিশ্বাস।’
‘দেড় বছর আগের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের তুলনায় এবারের দলটির খেলায় ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। খেলোয়াড়দের অনেক উন্নতি হয়েছে। বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের দ্বিতীয় ম্যাচে তা বোঝাও গেছে।’
আগামী শুক্রবার সেমিফাইনালে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ থাইল্যান্ড। এ মৌসুমে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবে যোগ দেওয়া জামাল টুর্নামেন্টের অন্যতম ফেভারিটদের হারিয়ে ফাইনালে খেলার ব্যাপারে আশাবাদী, ‘থাইল্যান্ড আমাদের চেয়ে শক্তিশালী দল। তবে ওদের হারানোর সামর্থ্য আমাদের আছে। শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে আমাদের আত্মবিশ্বাস অনেক বেড়ে গেছে। সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে আমরা থাইল্যান্ডকে হারিয়েও দিতে পারি।’