টেস্টেও হতাশা ঘুচবে তো!

বাংলাদেশের টেস্ট পারফরম্যান্স ঘাঁটতে ক্রিকেটের সবচেয়ে জনপ্রিয় ওয়েবসাইট ক্রিকইনফোর পরিসংখ্যান পাতায় গেলে বেশ হতাশ হতে হয়। একের পর এক শুধু ব্যর্থতার চিত্র। অনেক অনেক হারের বিপরীতে মাঝেমধ্যে ঝিলিক দেয় ড্র। জয়ের তো খোঁজ পাওয়াই ভার। ২০০০ সালের নভেম্বরে অভিষেকের পর এ পর্যন্ত বাংলাদেশ খেলেছে ৮৮টি টেস্ট। এর মধ্যে হেরেছে ৭০টি, ড্র করেছে ১১টি আর জয় এসেছে মাত্র সাতটি ম্যাচে। ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে পাকিস্তানকে নাস্তানাবুদ করা বাংলাদেশের সামনে এবার দারুণ সুযোগ নিজেদের টেস্ট পারফরম্যান্স সমৃদ্ধ করার। মঙ্গলবার থেকে খুলনায় শুরু হতে যাওয়া প্রথম টেস্টে মুশফিক-সাকিব-তামিমদের জয় দেখতে দেশের মানুষও ব্যাকুল।
১৯৯৯ বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয় বাংলাদেশের ক্রিকেটকে নিয়ে গিয়েছিল নতুন উচ্চতায়, এগিয়ে দিয়েছিল টেস্ট মর্যাদার পথে। ২০০০ সালে বাংলাদেশ খেলেছিল প্রথম টেস্ট, ভারতের বিপক্ষে। ম্যাচটা বাংলাদেশ হেরেছিল ৯ উইকেটে। অভিষেক ম্যাচে জয়ের স্বপ্ন দেখার সাহস হয়তো কারোর ছিল না। তবে অভিষেক টেস্টে আমিনুল ইসলামের সেঞ্চুরি ভীষণ তৃপ্তি দিয়েছিল দেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের।
টেস্ট ক্রিকেটে প্রথম জয়ের জন্য বাংলাদেশকে দীর্ঘদিন অপেক্ষায় থাকতে হয়েছে। ২০০৫ সালের জানুয়ারিতে চট্টগ্রামে জিম্বাবুয়েকে ২২৬ রানে হারিয়ে বাংলাদেশ মেতে উঠেছিল প্রথম টেস্ট জয়ের আনন্দে। ঢাকায় দ্বিতীয় ও শেষ ম্যাচ ড্র করে প্রথমবারের মতো টেস্ট সিরিজ জিতেও নিয়েছিল।
এর পর আবার দীর্ঘদিনের অপেক্ষা। ২০০৯ সালের জুলাইয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে দুই টেস্ট জিতেই স্বাগতিকদের হোয়াইটওয়াশের লজ্জায় ফেলে দেয় বাংলাদেশ। অবশ্য বোর্ডের বিরুদ্ধে তারকা ক্রিকেটারদের বিদ্রোহের কারণে সেবার ক্যারিবীয়দের দল গড়তে হয়েছিল দ্বিতীয় সারির খেলোয়াড়দের নিয়ে।
টেস্ট ক্রিকেটে চতুর্থ জয়ের জন্য পরের অপেক্ষা প্রায় চার বছরের। ২০১৩ সালের এপ্রিলে জিম্বাবুয়ে সফরে জয়ের স্বাদ পায় বাংলাদেশ। প্রথম টেস্টে হেরে যাওয়ার পর দ্বিতীয় টেস্ট ১৪৩ রানে জিতে দুই ম্যাচের সিরিজ সমতায় শেষ করে লাল-সবুজের দল।
সর্বশেষ তিনটি জয়ের স্মৃতি এখনো টাটকা। গত বছরের অক্টোবর-নভেম্বরে জিম্বাবুয়েকে তিন টেস্টেই হারিয়ে হোয়াইটওয়াশ করার উচ্ছ্বাসে ভেসে গিয়েছিল স্বাগতিক বাংলাদেশ। খুলনায় দ্বিতীয় টেস্টে সেঞ্চুরি করে ও ১০ উইকেট নিয়ে দুই কিংবদন্তি-অলরাউন্ডার ইমরান খান ও ইয়ান বোথামের পাশে নাম লিখিয়েছিলেন সাকিব আল হাসান। জিম্বাবুয়েকে বিধ্বস্ত করার আত্মবিশ্বাস সঙ্গে নিয়ে বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালের লক্ষ্যপূরণ করেছে মাশরাফির দল। সেই ধারাবাহিকতায় পাকিস্তানকে ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ আর টি-টোয়েন্টিতেও উড়িয়ে দিয়েছে।
বাংলাদেশের ক্রিকেট যে সত্যিই অনেক এগিয়ে গেছে, তা প্রমাণ করতে যেন মরিয়া ক্রিকেটাররা। তাঁদের দৃঢ় প্রত্যয়ের নিচে পিষ্ট হয়েছে চোট জর্জরিত পাকিস্তান। পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক রমিজ রাজা তো বলেই দিয়েছেন, ‘বাংলাদেশ দীর্ঘ সময়ের জন্য পাকিস্তান ক্রিকেটের মুখ বন্ধ করে দিয়েছে।’ ‘মুখ’টা একেবারে সিলগালা হয়ে যাবে কি না, তা দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে নির্ধারিত হয়ে যেতে পারে।
এর আগে পাকিস্তানের বিপক্ষে আটটি টেস্ট খেলে সবকটিই হেরেছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে চারটি খেলা হয়েছে পাকিস্তানে, দুটি করে ম্যাচ ঢাকা ও চট্টগ্রামে। ২০০৩ সালে মুলতানে জিততে জিততেও এক উইকেটে হার টেস্ট ক্রিকেটে পাকিস্তানের বিপক্ষে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের সেরা পারফরম্যান্স।
দীর্ঘ ১৬ বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে বাংলাদেশ ওয়ানডেতে হারিয়েছে পাকিস্তানকে। খুলনায় সাফল্য পেয়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট জয়ের আনন্দে মেতে উঠতে পারবে তো বাংলাদেশ?