খুলনা টেস্ট
জয়ের মতোই মূল্যবান যে ড্র

ওয়ানডে সিরিজে ছিলেন দারুণ ধারাবাহিক। প্রথম দুই ম্যাচে শতক করার পর তৃতীয় ওয়ানডেতে করেছিলেন ৬৪ রান। টেস্ট ক্রিকেটেও তামিম ইকবালের ব্যাটে রানের জোয়ার। মুশফিকুর রহিমের পর বাংলাদেশের দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে দ্বিশতক করার গৌরব এই বাঁহাতি ওপেনারের অধিকারে এখন। আরেক বাঁহাতি ইমরুল কায়েসের কৃতিত্বও কম নয়। তামিমের সঙ্গে বাংলাদেশের রেকর্ড ৩১২ রানের জুটি গড়া ইমরুলের ব্যাট থেকে এসেছে ১৫০ রানের আরেকটি ঝকঝকে ইনিংস। দুই ওপেনারের ব্যাটিং-বীরত্বে খুলনা থেকে ড্র নিয়ে ফিরছে বাংলাদেশ। যে ড্রয়ের মূল্য জয়ের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। টানা আট টেস্ট হেরে যাওয়ার পর পাকিস্তানের বিপক্ষে এটাই বাংলাদেশের প্রথম ড্র। আগামী ৬ মে থেকে মিরপুরে শুরু হবে দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট।
খুলনার শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে শেষ দিনে তামিম-ইমরুল ছাড়াও রান পেয়েছেন সাকিব আল হাসান (অপরাজিত ৭৬), মাহমুদউল্লাহ (৪০), সৌম্য সরকারও (৩৩)। আঙুলের চোট কাটিয়ে মাঠে নামা মুশফিকুর রহিমের শূন্য হাতে ফেরাই যা হতাশাজনক।urgentPhoto
টেস্টে বাংলাদেশের পক্ষে সবচেয়ে বেশি রান আর শতকই শুধু নয়, ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের রেকর্ডও এখন তামিমের দখলে। তাঁর দ্বিশতকও এসেছে রাজসিক ভঙ্গিতে, ১৯৫ রানে দাঁড়িয়ে জুনায়েদ খানের বলে ছক্কা মেরে। তবে এরপর বেশিদূর এগোতে পারেননি। মোহাম্মদ হাফিজকে ডাউন দ্য উইকেট মারতে গিয়ে স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে পড়েছেন তামিম। ২৭৮ বলের অসাধারণ ইনিংসটা সাজানো ১৭টি চার ও সাতটি ছক্কায়।
২০১৩ সালের মার্চে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গল টেস্টে মুশফিকের ২০০ রান এত দিন বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যানের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ইনিংস ছিল। ওই ইনিংসেই মুশফিকের সঙ্গে ২৬৭ রানের জুটি গড়ার পথে ১৯০ রান করেছিলেন মোহাম্মদ আশরাফুল।
প্রথম ইনিংসে ২৯৬ রানে পিছিয়ে থেকে হারের শঙ্কায় পড়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। তবে তামিম-ইমরুলের রেকর্ড গড়া উদ্বোধনী জুটিতে সেই শঙ্কা উধাও হতে সময় লাগেনি। ২৭৩ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ে পঞ্চম দিনের খেলা শুরু করেছিলেন তামিম ও ইমরুল। সেটা ৩০০ রানে নিয়ে যেতে খুব বেশি সময় নেননি তাঁরা। কিন্তু জুটিতে ৩১২ রান ওঠার পর জুলফিকার বাবরকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে লং-অফে বাবর আজমের হাতে ধরা পড়েন ইমরুল। ২৪০ বলে খেলা তাঁর ১৫০ রানের ইনিংসে ১৬টি চার ও তিনটি ছক্কা।
অসাধারণ ব্যাটিং করে তামিম-ইমরুল ভেঙে দিয়েছেন নিজেদেরই গড়া একটি রেকর্ড। গত বছরের নভেম্বরে চট্টগ্রামে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এই দুজনে গড়েছিলেন ২২৪ রানের জুটি। খুলনায় নিজেদের আরো উঁচুতে নিয়ে গেছেন দুই বাঁহাতি ওপেনার। দুজনের সৌজন্যে টেস্ট ক্রিকেট দেখেছে ত্রয়োদশ তিন শতাধিক রানের উদ্বোধনী জুটি। সর্বোচ্চ উদ্বোধনী জুটির তালিকায় তামিম-ইমরুল আছেন দ্বাদশ স্থানে। তবে একদিক দিয়ে সবাইকেই পেছনে ফেলে দিয়েছেন বাংলাদেশের দুই ওপেনার। টেস্টের তৃতীয় ইনিংসে ৩০০ রানের উদ্বোধনী জুটি তাঁরাই গড়েছেন প্রথমবারের মতো।
খুলনার টেস্টের শেষ দিনে বৃষ্টিও বাগড়া দিয়েছে একাধিকবার। বৃষ্টির কারণে নির্ধারিত সময়ের আগেই মধ্যাহ্ন-বিরতির ঘোষণা দিয়েছেন দুই আম্পায়ার। মধ্যাহ্ন-বিরতির পর কিছুক্ষণ খেলা হয়ে দ্বিতীয়বারের মতো বৃষ্টি এসে খেলা বন্ধ করে দিয়েছিল। তবে ১৫ মিনিট পরই খেলা শুরু হয়েছে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস : ৩৩২ (তামিম ২৫, ইমরুল ৫১, মুমিনুল ৮০, মাহমুদউল্লাহ ৪৯, সাকিব ২৫, মুশফিক ৩২, সৌম্য ৩৩, শুভাগত ১২*, তাইজুল ১, শহীদ ১০, রুবেল ২; ওয়াহাব ৩/৫৫, ইয়াসির ৩/৮৬, হাফিজ ২/৪৭, বাবর ২/৯৯)।
পাকিস্তান প্রথম ইনিংস : ৬২৮ (হাফিজ ২২৪, আসলাম ২০, আজহার ৮৩, ইউনিস ৩৩, মিসবাহ ৫৯, শফিক ৮৩, সরফরাজ ৮২, ওয়াহাব ০, ইয়াসির ১৩, বাবর ১১, জুনায়েদ ০*; তাইজুল ৬/১৬৩, শুভাগত ২/১২০, শহীদ ১/৫৯, সাকিব ১/১৪৬)।
বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংস : ৫৫৫/৬ (তামিম ২০৬, ইমরুল ১৫০, মুমিনুল ২১, মাহমুদউল্লাহ ৪০, সাকিব ৭৬*, মুশফিক ০, সৌম্য ৩৩, শুভাগত ২০*; হাফিজ ২/৮২, জুনায়েদ ২/৮৮, শফিক ১/৩২, বাবর ১/১২৫)
ফল: ম্যাচ ড্র
ম্যাচসেরা: তামিম ইকবাল।