ভীষণ বিপদে বাংলাদেশ

খুলনায় প্রথম টেস্ট ড্র হয়েছিল বাংলাদেশের দুই ওপেনারের ব্যাটিং-বীরত্বে। তবে মিরপুরে দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টের অর্ধেক যেতে না-যেতেই বাংলাদেশের ওপরে আশঙ্কার কালো মেঘ। প্রথম ইনিংসে পাকিস্তানের ৫৫৭ রানের জবাব দিতে নেমে ভীষণ বিপদে পড়ে গেছে বাংলাদেশ। পাঁচ উইকেটে ১০৭ রান নিয়ে দ্বিতীয় দিন শেষ করা স্বাগতিকদের সামনে ফলো-অনের শঙ্কা। লজ্জাটা এড়াতে প্রয়োজন আরো ২৫১ রান। ১৪ রানে অপরাজিত সাকিব আল হাসানের দিকে তৃতীয় দিন তাকিয়ে থাকতে হবে বাংলাদেশকে।
প্রথম টেস্টে দারুণ এক দ্বিশতক করলেও মিরপুরে প্রথম ইনিংসে ব্যর্থ তামিম ইকবাল। বাংলাদেশের ইনিংসের প্রথম ওভারেই জুনায়েদ খানের বলে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়েছেন এই বাঁ-হাতি ওপেনার। আগের ম্যাচে ২০৬ রান করে বাংলাদেশের পক্ষে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ইনিংসের রেকর্ড গড়া তামিমের ব্যাট থেকে এবার এসেছে মাত্র চার রান।
দ্বিতীয় উইকেটে ইমরুল কায়েস আর মুমিনুলের জুটিতে ৩৪ রান ওঠার পর আবার আঘাত। ১৩ রান করা মুমিনুলকেও কট বিহাইন্ড করে অতিথিদের দ্বিতীয় সাফল্য এনে দিয়েছেন বাঁহাতি পেসার জুনায়েদ।
খুলনা থেকে ১৫০ রানের দারুণ ইনিংস খেলার আত্মবিশ্বাস নিয়ে ফেরা ইমরুল শুরু থেকে আস্থার সঙ্গে খেলছিলেন। জুনায়েদের করা ইনিংসের তৃতীয় ওভারে চারটি চার মেরে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের গ্যালারি উন্মাতাল করেও তুলেছিলেন। কিন্তু ইয়াসির শাহর ঘূর্ণিতে বিভ্রান্ত হয়ে বোল্ড হয়ে ফিরতে হয়েছে তাঁকে। ইমরুলের ৪৬ বলে খেলা ৩২ রানের সম্ভাবনা জাগানো ইনিংসে চারের সংখ্যা ৬।
পরের বলেই নতুন ব্যাটসম্যান সাকিবকে আউট করার সুবর্ণ সুযোগ পেয়েছিল পাকিস্তান। কিন্তু বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডারের ক্যাচ ধরতে পারেননি স্লিপে দাঁড়ানো ইউনিস খান। তবে তিন ওভার পর মাহমুদউল্লাহ ভাগ্যের সহায়তা পাননি। ওয়াহাব রিয়াজের দারুণ এক বাউন্সারে পরাস্ত হয়েছেন তিনি। বল তাঁর ব্যাটের হাতলে লেগে চলে গেছে শর্ট লেগে দাঁড়ানো আজহার আলীর কাছে। বাংলাদেশের স্কোর তখন ৮৫/৪।
দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষ হতে তখনো প্রায় আট ওভার বাকি। তবে উইকেটের ঘরে ‘চার’ নিয়ে দিনটা শেষ করতে পারেনি বাংলাদেশ। দিনের শেষ ওভারের পঞ্চম বলে আউট হয়ে গেছেন মুশফিকুর রহিম। ইয়াসির শাহর দারুণ এক গুগলি কাট করতে গিয়ে বোল্ড হয়েছেন বাংলাদেশের অধিনায়ক।
দিনের শুরুটা কিন্তু দারুণ হয়েছিল বাংলাদেশের। দিনের দ্বিতীয় ওভারেই মিসবাহ-উল-হককে বোল্ড করে দলকে সাফল্য এনে দেন সাকিব। আগের দিনের নয় রানের সঙ্গে বৃহস্পতিবার কোনো রান যোগ করতে পারেননি পাকিস্তান অধিনায়ক। তবে পঞ্চম উইকেটে ২০৭ রানের জুটি গড়ে দলকে বড় সংগ্রহের পথে এগিয়ে নিয়ে গেছেন আজহার আলী ও আসাদ শফিক।
টেস্ট ক্রিকেটে প্রথম দ্বিশতকের দেখা পাওয়া আজহার কীর্তিটা স্পর্শ করেছেন রাজসিক ঢংয়ে, ১৯৯ রানে দাঁড়িয়ে সাকিবকে ছক্কা মেরে। শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানের ওয়ানডে অধিনায়ককে ফিরিয়েছেন শুভাগত হোম, মাহমুদউল্লাহর ক্যাচ বানিয়ে। আজহারের ২২৬ রানের চমৎকার ইনিংস গড়ে উঠেছে ২০টি চার ও দুটি ছক্কায়।
তিন অঙ্ক স্পর্শ করেছেন শফিকও। ষষ্ঠ শতকের দেখা পাওয়া এই ডানহাতি ব্যাটসম্যানের ১০৭ রানের ইনিংসে ছিল নয়টি চার ও একটি ছক্কা। শফিকও শুভাগতর ‘শিকার’। দ্রুত রান তোলার আশায় তুলে মারতে গিয়ে লং-অফে মাহমুদউল্লাহর হাতে ধরা পড়েন তিনি।
চা-বিরতির ঠিক আগের ওভারে ওয়াহাব রিয়াজ আর ইয়াসির শাহকে আউট করে বাংলাদেশ দলে স্বস্তির পরশ বুলিয়ে দিয়েছিলেন তাইজুল ইসলাম। আট উইকেটে ৫৫৭ রান নিয়ে চা-বিরতিতে যাওয়া পাকিস্তান তৃতীয় সেশনে আর ব্যাট করেনি, প্রথম ইনিংস ঘোষণা করে দিয়েছে।
তারপরই বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে নামা এবং বিপদে পড়া।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
পাকিস্তান প্রথম ইনিংস : ৫৫৭/৮ ডিক্লে. (হাফিজ ৮, সামি ১৯, আজহার ২২৬, ইউনিস ১৪৮, মিসবাহ ৯, শফিক ১০৭, সরফরাজ ২১*, ওয়াহাব ৪, ইয়াসির ০; তাইজুল ৩/১৭৯, শহীদ ২/৭২, শুভাগত ২/৭৬, সাকিব ১/১৩৬)
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস : ১০৭/৫ (তামিম ৪, ইমরুল ৩২, মুমিনুল ১৩, মাহমুদউল্লাহ ২৮, সাকিব ১৪*, মুশফিক ১২; ইয়াসির ২/১৫, জুনায়েদ ২/২৬, ওয়াহাব ১/৩৩)।