কঠিন লক্ষ্যের সামনে বাংলাদেশ

প্রথম ইনিংসে ৩৫৪ রানের বিশাল ব্যবধানে এগিয়ে থাকলেও বাংলাদেশকে ফলো-অন করায়নি পাকিস্তান। দ্বিতীয় ইনিংসে বোলিং করতে নেমে অবশ্য ভালো নৈপুণ্যই দেখিয়েছেন বাংলাদেশের বোলাররা। তবে তারপরও পাকিস্তানের অধিনায়ক মিসবাহ-উল-হক ঝড়ো ব্যাটিং করে স্বাগতিকদের সামনে ছুড়ে দিয়েছেন ৫৫০ রানের কঠিন লক্ষ্য। এই দুরূহ লক্ষ্য নিয়ে ব্যাট করতে নেমে এক উইকেট হারিয়ে ৬৩ রান সংগ্রহ করে তৃতীয় দিন শেষ করেছে বাংলাদেশ। জয়ের জন্য চাই আরো ৪৮৭ রান।
জয়ের জন্য ৫৫০ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে তৃতীয় দিনেই ওপেনার ইমরুল কায়েসের উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ। ১৬ রান করে ইয়াসির শাহর দারুণ এক ডেলিভারিতে বোল্ড হয়ে গেছেন ইমরুল। আরেক ওপেনার তামিম ইকবাল রান সংগ্রহ করছেন দ্রুতগতিতে। ছয়টি চার মেরে ৪২ বলে ৩২ রান করে দিনশেষে অপরাজিত আছেন এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। ইমরুলের পরে উইকেটে আসা মুমিনুল হক অপরাজিত আছেন ১৫ রান করে।
দ্বিতীয় ইনিংসে বোলিং করতে নেমে শুরুতেই সাফল্য পেয়েছে বাংলাদেশ। প্রথম ওভারের চতুর্থ বলেই মোহাম্মদ হাফিজকে আউট করেছেন মোহাম্মদ শহীদ। রানের খাতা না খুলেই উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফিরে গেছেন গত টেস্টের ডাবল সেঞ্চুরিয়ান। দলীয় ২৫ রানের মাথায় আরেক ওপেনার সামি আসলামের উইকেটও নিয়েছেন শহীদ। কয়েক ওভার পরে প্রথম ইনিংসের ডাবল সেঞ্চুরিয়ান আজহার আলীকে সাজঘরের পথ দেখিয়েছেন সৌম্য সরকার। ২৫ রান করে ফিরে গেছেন আজহার। সৌম্য পেয়েছেন টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম উইকেট। চতুর্থ উইকেটে ৫৮ রানের জুটি গড়ে আবার বাংলাদেশকে ভোগাচ্ছিলেন দুই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান ইউনিস খান ও মিসবাহ। এই জুটি ভেঙেছেন তাইজুল ইসলাম। নিজের বলে নিজেই ক্যাচ ধরেছেন এই বাঁহাতি স্পিনার। ৩৯ রান করে আউট হয়েছেন ইউনিস। এরপর খুব বেশিক্ষণ উইকেটে থাকতে পারেননি আসাদ শফিকও। শুভাগতর বলে বোল্ড হয়েছেন ১৫ রান করে। ১৪ বলে ১৮ রান করে অপরাজিত ছিলেন সরফরাজ আহমেদ। ৭২ বলে ৮২ রান করার পথে মিসবাহ মেরেছেন নয়টি চার ও তিনটি ছয়। মিসবাহ আউট হওয়ার পরেই দ্বিতীয় ইনিংসের সমাপ্তি ঘোষণা করে পাকিস্তান। প্রথম ইনিংসে ৩৫৪ রানে এগিয়ে থাকার পর দ্বিতীয় ইনিংসে ছয় উইকেট হারিয়ে ১৯৫ রান জমা করেছে সফরকারীরা।
এর আগে প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের ব্যাটিং বিপর্যয়ের মধ্যে একাই লড়াই চালিয়েছিলেন সাকিব আল হাসান। চলে গিয়েছিলেন টেস্ট ক্যারিয়ারের চতুর্থ শতকের দ্বারপ্রান্তে। কিন্তু সঙ্গীর অভাবে শেষপর্যন্ত আক্ষেপ নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয়েছে বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যানকে। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ অলআউট হয়ে গেছে ২০৩ রানে। হাঁটুতে চোটের কারণে ব্যাট করতে পারেননি শাহাদাত হোসেন। ৯১ বলে ৮৯ রান করে শেষপর্যন্ত অপরাজিত ছিলেন সাকিব।
মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে ৫৭৭ রান করে প্রথম ইনিংসের সমাপ্তি ঘোষণা করেছিল পাকিস্তান। জবাবে ব্যাট করতে নেমে দ্বিতীয় দিনেই বাংলাদেশ হারিয়েছিল পাঁচটি উইকেট। তৃতীয় দিনের শুরুতেও জোড়া আঘাত হানেন ওয়াহাব রিয়াজ। দিনের তৃতীয় ওভারেই সৌম্য সরকারকে আউট করেন পাকিস্তানের এই বাঁহাতি পেসার। মাত্র তিন রান করে আজহার আলীর হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হয়েছেন সৌম্য। নিজের পরের ওভারে শুভাগত হোমের উইকেটও তুলে নিয়েছেন ওয়াহাব। সাকিবকেও বোল্ড করে দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সেই বলটা নো হওয়ায় বেঁচে গেছেন বাংলাদেশের এই অলরাউন্ডার। ১৫ রান করা তাইজুল বোল্ড হয়েছেন মোহাম্মদ হাফিজের বলে। মোহাম্মদ শহীদের উইকেট নিয়েছেন ইয়াসির শাহ। পাকিস্তানের পক্ষে তিনটি করে উইকেট নিয়েছেন ওয়াহাব ও ইয়াসির।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
পাকিস্তান প্রথম ইনিংস : ৫৫৭/৮ ডিক্লে. (হাফিজ ৮, সামি ১৯, আজহার ২২৬, ইউনিস ১৪৮, মিসবাহ ৯, শফিক ১০৭, সরফরাজ ২১*, ওয়াহাব ৪, ইয়াসির ০; তাইজুল ৩/১৭৯, শহীদ ২/৭২, শুভাগত ২/৭৬, সাকিব ১/১৩৬)
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস : ২০৩ (তামিম ৪, ইমরুল ৩২, মুমিনুল ১৩, মাহমুদউল্লাহ ২৮, সাকিব ৮৯*, মুশফিক ১২, সৌম্য ৩, শুভাগত ০, তাইজুল ১৫, শহীদ ১; ইয়াসির ৩/৫৮, ওয়াহাব ৩/৭৩, জুনায়েদ ২/২৬, হাফিজ ১/১৩)
পাকিস্তান দ্বিতীয় ইনিংস : ১৯৫/৬ ডিক্লে. (হাফিজ ০, সামি ৮, আজহার ২৫, ইউনিস ৩৯, মিসবাহ ৮২, শফিক ১৫, সরফরাজ ১৮*; শহীদ ২/২৩, মাহমুদউল্লাহ ১/৮, শুভাগত ১/১৮, সৌম্য ১/৪৫, তাইজুল ১/৫৬)
বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংস : ৬৩/১ (তামিম ৩২*, ইমরুল ১৬, মুমিনুল ১৫*; ইয়াসির ১/৭)।