জিম্বাবুয়ে সিরিজে ঠিক কতটা প্রস্তুতি সারল বাংলাদেশ?
‘জয়ের আগ্রহ থাকা গুরুত্বপূর্ণ, তবে নিজেকে প্রস্তুত করা সবচেয়ে জরুরি’—প্রচলিত এই কথার সঙ্গে আমরা সবাই পরিচিত। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সদ্য শেষ হওয়া টি-টোয়েন্টি সিরিজ জেতা বাংলাদেশের জন্য বার্তাটি বেশি প্রাসঙ্গিক। জিম্বাবুয়ে আসবে, আমরা তাদের হারাব, এটি নিয়ে কারও সন্দেহ ছিল না। হয়েছেও তা-ই। পাঁচ ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজ বাংলাদেশ জিতেছে ৪-১ ব্যবধানে। তবু, এই সিরিজ নিয়ে আলোচনার চেয়ে সমালোচনার পাল্লা ভারী।
প্রথম দুটি টি-টোয়েন্টি বাংলাদেশ অনায়াসে জিতলেও পরের দুটিতে রীতিমতো ঘাম ঝরাতে হয়েছে স্বাগতিকদের। ৯ রান ও পাঁচ রানের জয় দুটিতে শান্ত-সাকিবদের যতটা কৃতিত্ব, তার চেয়ে বোধকরি বেশি জিম্বাবুয়ের ব্যর্থতা। দলটির অধিনায়ক সিকান্দার রাজা সেটি অকপটে স্বীকার করেছেন।
সিরিজের তৃতীয় ও চতুর্থ টি-টোয়েন্টিতে জিততে জিততে হেরে যায় জিম্বাবুয়ে। তবে, দলটির অধিনায়ক সিকান্দার রাজা ছিলেন আত্মবিশ্বাসী। বারবার বলে গেছেন, শেষ দিকে ওরা চাপ সামলাতে পারেনি (তৃতীয় ও চতু্র্থ টি-টোয়েন্টিতে)। এমন পরিস্থিতিতে অভিজ্ঞতার অভাব হারিয়েছে আমাদের। হারলেও আমাদের দলে বেশ কিছু অভিজ্ঞ ক্রিকেটার আছেন, যারা ভালো ফল এনে দিতে পারেন। পঞ্চম ও শেষ ম্যাচে সেটিই করে দেখাল দলটি।
ঠিক এখানেই প্রশ্ন এসে যায়! জিম্বাবুয়ে আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মূলপর্বেই জায়গা করতে পারেনি, বাছাইপর্বে হেরেছিল উগান্ডার মতো আনকোরা দলের কাছে। তাদের সঙ্গে জিততে আমাদের ঘাম ছুটবে কেন? ঘরের মাঠ, সবটা নিজেদের মতো। এরপরও প্রস্তুতিতে বিশাল ঘাটতি থাকবে কেন?
প্রায় প্রতি ম্যাচেই ব্যর্থ হয়েছেন ব্যাটাররা। মোটা দাগে বলার মতো সাফল্য দেখাতে পারেননি কেউ। বোলাররা চেষ্টা করেছিলেন। সেখানেও কমতি ছিল। প্রথম দুই ম্যাচে ৫০ রানের আগে জিম্বাবুয়েকে প্রায় অলআউট করার মতো অবস্থা তৈরি হলেও তারা ঘুরে দাঁড়ায়। শতরান পার করে আরও অনেক দূর গিয়েছিল। শেষ টি-টোয়েন্টিতে তো বেধড়ক মারই খেয়েছেন সাইফউদ্দিন, শেখ মেহেদিরা। বাংলাদেশের করা ১৫৭ রান মাত্র দুই উইকেট হারিয়ে টপকে যায় জিম্বাবুয়ে।
ক্রমাগত ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন লিটন কুমার দাস। তিন ম্যাচেই আউট হয়েছেন দৃষ্টিকটুভাবে। পরের দুই ম্যাচে সুযোগ পাওয়া সৌম্য সরকার এক ম্যাচে ভালো খেলেছেন বটে, ৩৪ বলে ৪১ রানের ইনিংসে স্ট্রাইক রেট ছিল ১২০! পরেরটিতে আউট হন সাত রানে। অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তও মনে রাখার মতো কোনো ইনিংস উপহার দিতে পারেননি। এখানে অবশ্য মিডল অর্ডারে ভরসার প্রতীক হয়ে ছিলেন তরুণ তাওহিদ হৃদয় ও পুরোনো ভৃত্য মাহমুদউল্লাহ। দুজনই যতটুকু সুযোগ পেয়েছেন চেষ্টা করেছেন কাজে লাগাতে। তাদের সফল বলা চলে অনায়াসে।
ক্রিকেট নিয়ে বহুল চর্চিত একটি কথা এমন—‘ক্রিকেট হচ্ছে শরীর ও মনের যুদ্ধ।’ শরীর ও মন যখন একসঙ্গে কাজ করবে, আপনা-আপনি উদ্যম চলে আসে। বাইশ গজের এই লড়াইয়ে বডি ল্যাঙ্গুয়েজ ভীষণ প্রয়োজন। অথচ, গোটা সিরিজে বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ ছিল অনুপস্থিত।
সামনেই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। এর আগে সিরিজটি বাংলাদেশের জন্য প্রস্তুতির মোক্ষম সুযোগ ছিল। ধুন্ধুমার ব্যাটিংয়ের জমানায় এসে ১৬০/১৭০ কোনো দলের জন্য নিরাপদ নয়। বিশ্বকাপের মঞ্চে তো একদমই মানানসই না। শুরুর কথায় ফিরি। জয়ের আগ্রহ থাকা গুরুত্বপূর্ণ, তবে সবচেয়ে জরুরি নিজেকে প্রস্তুত করা। সিরিজ শুরুর আগে, সিরিজের মাঝপথে বাংলাদেশ অধিনায়ক শান্ত কিংবা সহকারি কোচ নিক পোথাসের কণ্ঠে সিরিজ জয়ের ভাবনাটাই মুখ্য হয়ে উঠেছিল। স্বভাবতই প্রস্তুতির ঘাটতি তাই থাকবেই।
শান্ত জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে সিরিজে নিজেদের ভালোভাবে প্রস্তুত করবেন। সময় বহতা নদীর মতো। যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে সিরিজের আগে দেশে কিছুদিন সময় আছে। সেটি কাজে লাগাতে হবে। নইলে মার্কিন মুলুকে গিয়েও যদি সিরিজ জয় বড় হয়ে দাঁড়ায়, বিশ্বকাপে বাংলার আকাশে ঘনঘোর মেঘ ছাড়া কিছুই দেখা যাবে না। ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়। উপায় আছে, বাংলাদেশের প্রয়োজন ইচ্ছের সঠিক প্রয়োগ ঘটানো।