এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত যত রেকর্ড
দেখতে দেখতে শেষের পথে এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মহাযজ্ঞ। গত ২ জুন শুরু হওয়া টুর্নামেন্টের পর্দা নামবে আগামীকাল শনিবার (২৯ জুন)। ফাইনালে মুখোমুখি হবে দক্ষিণ আফ্রিকা ও ভারত। ফাইনালের আগেই বেশ কয়েকটি রেকর্ড দেখেছে এই বিশ্বকাপ; রচিত হয়েছে অসংখ্য গল্প। সেসবের এক ঝলক দেখে নেওয়া যাক…
প্রথমবার ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকা
বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলবে দক্ষিণ আফ্রিকা, মুখোমুখি হবে ভারতের। হঠাৎ শুনে অবাক হওয়ারই কথা। তবে, এটাই সত্য। প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের ফাইনালে তারা।
দলটির ক্রিকেট ইতিহাস বেশ সমৃদ্ধ। তবু, অতৃপ্তি ছিল। বিশ্বকাপে সবসময়ই ফেভারিটের তালিকায় থাকে তারা। এবারের আগে টি-টোয়েন্টি ও ওয়ানডে বিশ্বকাপ মিলিয়ে তারা সেমি ফাইনালে পৌঁছেছে সাতবার। এরমধ্যে টি-টোয়েন্টিতে দুই বার সেমি ফাইনাল থেকে বিদায় নিয়েছে দলটি। ‘বড় ম্যাচে চাপ সামলাতে না পারায়’ প্রোটিয়াদের নাম তাই হয়ে যায় চোকার্স। আর এবার সেই চোকার্সরাই অপরাজিত থেকে অষ্টমবারের মতো সেমিফাইনালে উঠে পথ করে নিল ফাইনালের। স্বপ্নের বিশ্বকাপ জয় যেন তাদের জন্য অপেক্ষামাত্র!
আফগান রূপকথা
এবারের টি-টোয়েন্টির আলোচনায় ছিল আফগানিস্তানের নৈপুণ্য। ক্রিকেটপাড়ায় বেশ শোরগোল ছিল তাদের নিয়ে। বিশ্বকাপ ফাইনালের প্রেডিকশনে অনেকেই ভারতের মুখোমুখি করেছিল আফগানদের। তাদের ব্যাখ্যায় ছিল দলটির জয়ের মানসিকতা, খেলোয়াড়দের একাগ্রতা। সুপার এইটে অস্ট্রেলিয়াকে হারানোর পর আরও পোক্ত হয় এই প্রেডিকশন। সুপার এইটের শেষ ম্যাচে বাংলাদেশকেও ঘরে পাঠায় দলটি। আর প্রথমবারের মতো জায়গা করে নেয় বিশ্বকাপের সেমি ফাইনালে, যা দেশটির ক্রিকেট ইতিহাসের সর্বোচ্চ সাফল্য।
ভারতের দীর্ঘ অপেক্ষা
প্রথমবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয় ২০০৭ সালে। ওই বছর চ্যাম্পিয়ন হয় ভারত। এরপর দ্বিতীয়বার দলটি ফাইনাল খেলে ২০১৪ সালে। সাত বছর অপেক্ষার পর ফাইনাল খেললেও শিরোপার দেখা পায়নি তারা। এরপর কেটেছে আরও ১০ বছর। এক দশক পর ফের বিশ্বকাপের ফাইনালে ভারত। ক্রিকেটের এই সংস্করণের বিশ্বকাপে এক ফাইনাল থেকে আরেকটি ফাইনাল খেলতে অপেক্ষায় থাকতে হয়েছে লম্বা সময়।
এর আগে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আটটি আসরে শিরোপার মুখ দেখে ছয়টি দেশ। তার মধ্যে পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, অস্ট্রেলিয়ার মতো ভারতও শিরোপার মুখে দেখেছে একবারই। অন্যদিকে, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও ইংল্যান্ড চ্যাম্পিয়ন হয়েছে দুই বার। যদিও, এবার সুপার এইট থেকেই বিদায় নিতে হয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। আর সেমিতে মাত্র একবারের চ্যাম্পিয়ন দল ভারতের কাছে ৬৮ রানে হেরে ঘরে ফিরেছে দুই বারের চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড। ফলে অনেকটাই আত্মবিশ্বাসী এবারের ভারতীয় দলটি। শিরোপার অপেক্ষায় রয়েছে তারা।
এবার জিতলে ১৭ বছর পর তাদের ঘরে উঠেবে শিরোপা। আগামীকালের ফাইনালে অপরাজিত দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারাতে না পারলে অপেক্ষার পথ আরও দীর্ঘায়িত হতে পারে তাদের।
বাংলাদেশ ও সাকিব আল হাসান
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ২০২৪ বাংলাদেশের জন্য ছিল অম্ল-মধুর অভিজ্ঞতার। ২০০৭ সালে প্রথম আসরে দ্বিতীয় রাউন্ডে খেলেছিল বাংলাদেশ। ১৭ বছর পর সুপার এইটে উঠেছিল সাকিব আল হাসানরা। আর শান্তর নেতৃত্বে এবারই প্রথম এক আসরে সবচেয়ে বেশি তিন ম্যাচ জিতেছে বাংলাদেশ। সাফল্যের বিচারে এটিই দলটির সেরা বিশ্বকাপ। এই আসরেই সাকিবের ঝুলিতে উঠেছে ব্যক্তিগত একাধিক অর্জন। একমাত্র বাংলাদেশি হিসেবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ৯টি আসরেই অংশ নিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি একমাত্র বোলার হিসেবে ক্রিকেটের ক্ষুদ্র সংস্করণের বিশ্বকাপে নিয়েছেন ৫০ উইকেট। সাকিব ছাড়া আর কোনো বোলার এখনও ৫০ উইকেট নিতে পারেননি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে।
প্যাট কামিন্সের টানা দুই হ্যাটট্রিক
চলমান টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে যেমন প্যাট কামিন্স গড়লেন অনন্য এক কীর্তি। বিরল কীর্তি বললেও ভুল হবে না। বিশ্বকাপের সুপার এইটে টানা দুই ম্যাচে হ্যাটট্রিক করে ইতিহাসের পাতায় নাম লেখান তিনি। টানা দুই ম্যাচে টি-টোয়েন্টিতে হ্যাটট্রিক নেই আর কারও। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেই এমন কীর্তি সর্বশেষ হয়েছিল ২৫ বছর আগে। তখন তো টি-টোয়েন্টি ছিলই না। এমন কীর্তি গড়া হয়নি ওয়ানডেতেও। পাকিস্তানি কিংবদন্তি ওয়াসিম আকরাম শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টানা দুই টেস্টে হ্যাটট্রিক করেছিলেন। অসি পেসার কামিন্স প্রথম হ্যাটট্রিকটি করেন বাংলাদেশের বিপক্ষে। এরপর আফগানিস্তান ম্যাচে করেন দ্বিতীয়টি।
এক ইনিংসে ডটের রেকর্ড
নেপালের বিপক্ষে গত ১৭ জুন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ইতিহাসে অনন্য এক রেকর্ড গড়েন তানজিম হাসান সাকিব। বাংলাদেশি এই পেসার সেদিন চার ওভারে সাত রান দিয়ে চার উইকেট পান। সেসব ছাপিয়ে মুখ্য হয়ে ওঠে সর্বোচ্চ ডটবলের রেকর্ড। সেই ইনিংসে সাকিব ডট দেন ২১টি, বিশ্বকাপে যা ছিল সর্বোচ্চ। একদিন পরই রেকর্ডটি ভাঙেন লোকি ফার্গুসন। ঝুলিতে মেডেনসহ ২৪টি ডট তোলেন এই নিউজিল্যান্ড তারকা।
লোকি ফার্গুসনের বোলিং নৈপুণ্য
লোকি ফার্গুসন পাপুয়া নিউগিনির বিপক্ষে চার ওভারের সবকটি মেডেন নেন। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ইতিহাসে এর আগে কোনো বোলার ইনিংসের ২৪ বলের ২৪টিই ডট নিতে পারেননি। আর এই মেডেন ওভারগুলোতে ফার্গুসন তুলে নেন তিন তিনটি উইকেট। তার এই অর্জনও ছিল এবারের বিশ্বকাপের আলোচনায়।