বর্ণিল আয়োজনে প্যারিস অলিম্পিকের উদ্বোধন
উদ্বোধনের দুই দিন আগেই অলিম্পিকে শুরু হয়েছে ফুটবল ও রাগবির মতো জনপ্রিয় ইভেন্ট। বাকি ছিল শুধু ‘গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ এর সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও বর্ণিল আয়োজন উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। সেটাও হয়ে গেল। ইতিহাস গড়া উদ্বোধনীতে আনুষ্ঠানিকভাবে পর্দা উঠল ৩৩তম প্যারিস অলিম্পিক গেমসের।
প্যারিস অলিম্পিকে অংশ নিচ্ছে ২০৬টি দেশ। ৩২টি খেলার ৩২৯টি ইভেন্টে শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে নামবেন ১০ হাজার ৫০০ জন অ্যাথলেট। মাঠের লড়াই শুরুর আগে সিন নদীতে বর্ণিল নৌকায় চড়ে ব্যতিক্রমী উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের অংশ হলেন প্যারিস অলিম্পিকে আগত অ্যাথলিট ও কর্মকর্তারা। বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ১১টায় শুরু হয় প্যারিস অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান।
নজরকাড়া নৌ প্যারেডের মধ্য দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠানের। এই প্রথম স্টেডিয়ামের বাইরে হলো অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। যা এক বিরল ইতিহাস বটে। মার্চপাস্টে অলিম্পিকের জন্মভূমি গ্রিস থাকে সবার আগে। সবার শেষে মার্চপাস্টে অংশ নেয় স্বাগতিক দেশ ফ্রান্স। নদীর পাড়ে পাটাতনের মতো জায়গায় নাচ ও পার্টিং সংয়ের সঙ্গে বেশ বড় বহর নিয়ে মার্চপাস্ট করে ফ্রান্স। স্বাগতিক দেশ হিসেবে ফ্রান্সই ছিল মার্চপাস্টে শেষ দল।
এরপর সিন নদীর বুকে ছুটল ধাতব ঘোড়া! তাতে নাইটদের মতো রুপালি পোশাকের একটি মেয়ে বসা ছিল। পিঠে তার অলিম্পিকের পতাকা। প্রযুক্তির সাহায্যে ধাতব ঘোড়া সিনের বুক পাড়ি দিয়েছে। দৃশ্যটি ছিল দেখার মতো। এরপর ফ্রান্সের ইতিহাসে ১০ জন সবচেয়ে বিখ্যাত মহিলার মূর্তি উম্মোচন করা হয়। সঙ্গে বর্ণনা করা হয় তাদের কৃতিত্বের।
অনুষ্ঠানে পারফর্ম করেছেন অনেকেই। মালি বংশোদ্ভুত ফরাসি সঙ্গীতশিল্পী আয়া নাকামুরা পারফর্ম করেছেন। ফ্রান্সের রিপাবলিকান গার্ডের ৬০ জন সুরকার ও সামরিক বাহিনীর ৩৬ জন গায়কের সঙ্গে পারফর্ম করেছেন তিনি। এছাড়াও লেডি গাগা ও সেলিন ডিওনের মতো জনপ্রিয় তারকারাও সুরের মূর্ছনায় মুখরিত করে তোলেন পুরো গ্যালারি। এসব পারফরম্যান্সে উঠে আসে ফ্রান্স ও অলিম্পিক গেমসের ইতিহাস-ঐতিহ্য।
মশাল হাতে দেখা মেলে ফরাসি ফুটবল কিংবদন্তি জিনেদিন জিদানকে। মূল অলিম্পিক স্টেডিয়াম স্তাদ দে ফ্রান্স থেকে তিনি অলিম্পিক মশাল নিয়ে দৌড়ে পৌঁছে দেন অন্যদের হাতে। চলতে থাকে মশাল দৌড়। জিদানের হাত থেকে মশাল যায় ফ্রেঞ্চ ওপেনের রেকর্ড ১৪ বারের চ্যাম্পিয়ন স্প্যানিশ তারকা রাফায়েল নাদালের হাতে। আইফেল টাওয়ার দিয়ে ছুটতে থাকে আলোর রোশনাই।
আরও কয়েক হাত ঘুরে মশাল যায় জুডোকা টেডি রাইনার ও স্প্রিন্টার মারিয়ে জোসে পিয়ার্সের হাতে। দে লা কনকর্ডের লাগোয়া বেলুনে আগুন দেন দুজনে। এর মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে পর্দা ওঠে প্যারিস অলিম্পিকসের। নদীর পাড়ে সমর্থকদের সরব উপস্থিতি। তীরবর্তী বাড়িগুলোর ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে ক্রীড়াপ্রেমীরা উপভোগ করেন উদ্বোধনী অনুষ্ঠান।
এই অনুষ্ঠানে আগত অতিথিদের তালিকাও নজরকাড়া। উপস্থিত ছিলেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রো, জাতিসংঘ মহাসচিব এন্তোনিও গুতেরেজ, স্পেনের রাজা কিং ফিলিপ, কাতারের আমির তামিম বিন হামাদ আল সানি, আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির (আইওসি) প্রেসিডেন্ট টমাস বাখসহ বিশ্বের বহু রাষ্ট্রনায়ক, রাজনীতিক, ক্রীড়া প্রশাসকগণ।