পাকিস্তানকে ধসিয়ে বাংলাদেশের স্বস্তির দিন
রাওয়ালপিন্ডি টেস্টের প্রথম দিন ভেসে যায় বৃষ্টিতে। দ্বিতীয় দিন আকাশ ছিল পরিস্কার। তেমনই ঝলমলে ছিল বাংলাদেশের বোলিং। বিশেষ করে মেহেদী হাসান মিরাজের স্পিনের কথা বলতেই হয়। অভিজ্ঞ এই অলরাউন্ডারের স্পিন বিষে নীল হয়ে যায় পাকিস্তান। সঙ্গে তাসকিন-নাহিদদের গতির ঝলক। সবমিলিয়ে প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নামা পাকিস্তান টিকে থাকতে পারল না একদিনও। দারুণ বোলিংয়ে পাকিস্তানকে ধসিয়ে রাওয়ালপিন্ডিতে স্বস্তির দিন পার করল বাংলাদেশ।
আজ শনিবার টেস্টের দ্বিতীয় দিন প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ২৭৪ রানে অলআউট হয়েছে পাকিস্তান। বিপরীতে দিনের শেষ সময়ে প্রথম ইনিংসে নেমে দুই ওভারে ১০ রানে দিন শেষ করে বাংলাদেশ। ২৬৪ রানে পিছিয়ে থেকে আগামীকাল রোববার টেস্টের তৃতীয় দিন শুরু করবে নাজমুল হোসেন শান্তর দল।
টেস্টের প্রথম দিন বৃষ্টির কারণে এক বলও মাঠে গড়ায়নি। হয়নি টসও। তাই আজ দ্বিতীয় দিনের খেলা শুরু হয় ১৫ মিনিট আগে। রাওয়ালপিন্ডি ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে বোলিং বেছে নেয় বাংলাদেশ। আগে বোলিং করতে নেমে দারুণ শুরু করে সফরকারীরা। ইনিংসের প্রথম ওভারেই বাংলাদেশকে সাফল্য এনে দেন এক বছরের বেশি সময় পর টেস্ট ক্রিকেটে ফেরা তাসকিন আহমেদ। ওভারের শেষ বলে দারুণ ডেলিভারিতে আব্দুল্লাহ শাফিককে সাজঘরে পাঠান তাসকিন।
তবে শুরুর ছন্দ প্রথম সেশনেই রূপ নেয় হতাশায়। দ্বিতীয় উইকেটে পাকিস্তানের হাল ধরেন শান মাসুদ সাইম আইয়ুব। এই জুটিতে প্রথম সেশনে আর উইকেট হারায়নি পাকিস্তান। বরং লাঞ্চের আগ পর্যন্ত ২৫ ওভারে এক উইকেট হারিয়ে স্কোরবোর্ডে ৯৯ রান তোলে পাকিস্তান।
প্রথম সেশনের পর ধারণা করা হচ্ছিল দ্বিতীয় সেশনেও বড় সংগ্রহ গড়বে স্বাগতিকরা। তবে, সেই ধারণা ভুল প্রমাণ করলেন মিরাজ-তাসকিনরা। মধ্যাহ্ন বিরতি থেকে ফিরেই বিদায় নেন অধিনায়ক শান মাসুদ। মিরাজের মিডল স্টাম্পে পিচ করা ডেলিভারি ভুল লাইনে খেলেন মাসুদ। বল তার প্যাডে আঘাত করতেই জোরাল আবেদনে আঙুল তোলেন আম্পায়ার। রিভিউ নিয়েও লাভ হয়নি পাকিস্তান অধিনায়কের। ২ চারে ৬৯ বলে ৫৭ রান করেন মাসুদ। তার বিদায়ে ভাঙে ১০৭ রানের দ্বিতীয় উইকেট জুটি।
এরপর ফিফটি তুলে নিয়েও ইনিংস বড় করতে পারেননি আইয়ুব। দলীয় ১২২ রানের মাথায় তাকে ফিরিয়ে বাংলাদেশকে স্বস্তি দেন মিরাজ। বলটা ঝুলিয়ে দিয়েছিলেন মিরাজ। টোপ দেখে লোভ সামলাতে পারেননি পাকিস্তানি ওপেনার। ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে এসে খেলতে গিয়েছিলেন। বল ব্যাটের পাশ দিয়ে চলে যায় লিটনের গ্লাভসে। স্ট্যাম্প ভাঙতে ভুল করেননি তিনি। ১১০ বলে ৫৮ রান এসেছে তার ব্যাট থেকে। এরপর দলীয় ১৫১ রানে তাসকিনের বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন আরেক ব্যাটার সৌদ শাকিল। ২৮ বলে ১৬ রানের বেশি করতে পারেননি তিনি।
চা বিরতির ঠিক আগে অভিজ্ঞ বাবর আজমকে ফিরিয়ে উইকেটের খাতায় নাম লেখান সাকিব আল হাসান। সাকিবের স্ট্যাম্প করিডোরে করা বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরেন বাবর। ৭৭ বলে ৩১ রান আসে তার ব্যাট থেকে।
এর পরের চমকটা দেখান মিরাজ। তৃতীয় সেশনে তাসকিন ও তিনি মিলে তুলে নেন পাকিস্তানের বাকি উইকেটগুলো। শেষ জুটি হিসেবে থাকা আবরার আহমেদ ও মির হামজার জুটিও ভাঙেন এই অলরাউন্ডার। আবরারকে নিজের শিকার বানিয়ে ফাইফারে নাম লেখান মিরাজ। এই নিয়ে টেস্ট ক্রিকেটে ১০বার এক ইনিংসে ৫ উইকেট করে নেওয়ার কীর্তি অর্জন করেন মিরাজ। এ ছাড়া বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে মোহাম্মদ রফিকের পর পাকিস্তানের মাঠে তিনিই প্রথম ৫ উইকেট পেলেন।
৫ উইকেট নিতে মিরাজ খরচ করেন ৬১ রান। এ ছাড়া ৫৭ রান দিয়ে ৩টি উইকেট নেন তাসকিন আহমেদ। একটি করে শিকার সাকিব আল হাসান ও নাহিদ রানার।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
পাকিস্তান ১ম ইনিংস: ৮৫.১ ওভারে ২৭৪ (শাফিক ০, সাইম ৫৮, মাসুদ ৫৭, বাবর ৩১, শাকিল ১৬, রিজওয়ান ২৯, সালমান ৫৪, খুররাম ১২, আলি ২, আবরার ৯, হামজা ০*; তাসকিন ১৭-২-৫৭-৩, হাসান ১৪-১-৬০-০, নাহিদ ১৫-১-৫৮-১, মিরাজ ২২.১-২-৬১-৫, সাকিব ১৭-৩-৩৪-১)।
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ২ ওভারে ১০/০ (সাদমান ৬*, জাকির ০*; হামজা ১-০-৫-০, খুররাম ১-০-১-০)।