প্রত্যাশার চাপ নিয়ে এবার ভারত সিরিজে চোখ মিরাজের
বল হাতে এক ইনিংসে পাঁচ উইকেটসহ সিরিজে সর্বোচ্চ ১০ উইকেটের মালিক। ব্যাট হাতেও কঠিন মুহূর্তে মাঠে নেমে গড়ে দিলেন বাংলাদেশের ভিত। একজন যোগ্য অলরাউন্ডার হিসেবে দলে যতটুকু ভূমিকা রাখা যায় তার সবটাই পাকিস্তান সিরিজে করেছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। প্রতিভার ছাপ রেখে হয়েছেন সিরিজ সেরা।
পাকিস্তানের মাটিতে ইতিহাস গড়ে দেশে ফেরা বাংলাদেশি এই অলরাউন্ডারের চোখে এবার ভারত মিশন। পাকিস্তানে ইতিহাস গড়ার আত্মবিশ্বাস নিয়ে এবার ভারতেও ফাইট দিতে চান। এনটিভি অনলাইনকে দেওয়া সাক্ষাৎকরে মিরাজ জানালেন, দেশটির মাটিতে অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতাকে ভুলে উপভোগ্য লড়াই উপহার দেওয়ার লক্ষ্য থাকবে তাদের।
পাকিস্তানের মাটিতে ইতিহাস গড়ে ফিরেছেন। এবারের সফর থেকে ফেরাটা একটু বিশেষ অনুভূতি দিচ্ছে কিনা?
মিরাজ : সত্যিই বলতে খুবই ভালো লাগছে। আমরা সময়টা উপভোগ করেছি। আপনি দেখুন, পাকিস্তানে আমরা যে সিরিজটা জিতেছি সেটা কেউ কখনও চিন্তাও করেনি। কেউ ভাবেনি এত সহজে আমরা পুরো সিরিজে ডোমিনেট করে জিততে পারব। কিন্তু আমরা সিরিজটা জিতেছি। এই বিশ্বাসটা আমাদের ভেতর ছিল যে আমরা বিশেষ কিছু করতে পারব। সবসময় আমরা চিন্তা করেছি যে, আমরা ম্যাচ জিততে পারব। এই বিশ্বাসটা সবার মধ্যে ছিল। যার প্রতিফলন মাঠে দেখেছে সবাই।
নিজেদের মধ্যে বিশ্বাস জেগেছিল বলছেন, এই বিশ্বাসের অনুপ্রেরণা কখন পেয়েছেন?
মিরাজ : বিশ্বাসটা এসেছে আমরা যখন দেশের মাটিতে ভালো খেলি, ভালো করি তখন অনেকেই বলে আমরা দেশে ভালো করি, বিদেশে ভালো করি না। আমরা যখন নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জিতলাম তখন আমাদের মধ্যে বিশ্বাসটা জন্মে যে বিদেশেও ভালো করা সম্ভব। নিউজিল্যান্ডকে তাদের মাটিতে হারানো মুখের কথা নয়। আমরা যখন সেটা করতে পারলাম তখন মনে হয়েছে আমরা বিদেশের মাটিতে আরও ভালো করতে পারি। আমরা বাইরের দেশে বড় বড় দলকে হারাতে পারি, সেটার প্রমাণ তো এবার মিলেছে। এই বিশ্বাসটা সামনের দিকেও আমাদের অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজে দেবে।
দেশ জিতেছে আপনি সেরা পারফর্মার এটা কতটা স্বস্তির?
উত্তর : দেশের জয়ে ভূমিকা রাখা তো দারুণ ব্যাপার। সব ক্রিকেটাররাই এটা চায়। নিজে ভূমিকা রাখতে পেরেছি। সেইদিক দিয়ে এটা অবশ্যই ভালো লাগার।
আপনি আপনার সিরিজ সেরার পুরস্কার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে প্রাণ হারানো একজন রিকশাচালকের পরিবারকে দেবেন বলেছেন। সেটা দিতে পেরেছেন কি না?
মিরাজ : হুম আমার সিরিজসেরার পুরস্কার সেই রিকশাচালকের পরিবারকে দেব বলে ঘোষণা দিয়েছিলাম। তবে এখনও তাদের সাথে দেখা হয়নি। দেওয়ার সুযোগ এখনও হয়নি। তবে, খোঁজ নিয়েছি। তাদের সাথে যোগাযোগ হয়েছে। আমার নিজের কথা বলা হয়নি। এক ভাই আছে তার মাধ্যমে যোগাযোগ হয়েছে। তাদের সাথে আলাপ করেছে। আশাকরছি আগামী পরসু দিন দেখা করে দেওয়ার চেষ্টা করব।
যখন পাকিস্তান সফরে যাচ্ছেন, দেশের টালমাটাল অবস্থা। এই অবস্থা থেকে এই সাফল্য। সে সময় দলের অবস্থা কেমন ছিল?
মিরাজ : ওই সময়টা তো অনেক ক্রাইসিস ছিল দেশের জন্য। শুধু আমাদের জন্য না পুরো দেশের জন্যই ক্রাইসিস মোমেন্ট ছিল। সবাই বুঝতেছিল না যে কী হবে, কোন দিকে যাবে পরিস্থিতি। আমরা সবাই একটা ধোঁয়াশার মধ্যে ছিলাম। অবশ্যই একটা শঙ্কা সবার মধ্যে কাজ করছিল। তবে, এখন আস্তে আস্তে পরিস্থিতি ঠিক হয়েছে। পরিবেশ সুস্থ হয়েছে। আশা করছি, যেভাবে চলছে সামনের দিকে ভালো কিছুই হবে।
নানা সময়ে আপনার ব্যাটিং-বোলিং দুই বিভাগে ভূমিকা রেখেও বাদ পড়তে হয়েছিল, গেল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও সেটাও হয়েছে। এই সময়গুলোতে নিজেকে কীভাবে শান্ত রাখেন? খারাপ সময়গুলো কীভাবে মোকাবিলা করেন?
মিরাজ : হ্যাঁ ক্যারিয়ারে নানা সময়ই এমন মুহূর্ত আসে। এই খারাপ সময়গুলোতে আমি সবচেয়ে বেশি যেটা করি সেটা হলো—ধৈর্যধারণ। নিজেকে আশ্বস্ত করি। ওই সময় ভালো ভালো মোমেন্টামগুলো নিয়ে ভাবি। নিজের সময়গুলো কাজে লাগাই। চেষ্টা করি কীভাবে আরেকটু উন্নতি করা যায়।
পাকিস্তানে ইতিহাস গড়ে এবারের গন্তব্য ভারত। দল ও নিজের প্রত্যাশার মাত্রাটা কোথায় রাখছেন?
মিরাজ : একটা সিরিজে ভালো করলে পরের সিরিজেও ভালো করার একটা প্রত্যাশার চাপ থাকে। ভারত সিরিজ নিয়েও আমাদের প্রত্যাশা আমরা যেন ভালো খেলতে পারি। প্রতিটি ক্রিকেটারই যেন নিজ নিজ অবস্থান থেকে সেরাটা দিতে পারি। দিন শেষে প্রতিটি ক্রিকেটারই ভালো খেলতে চায়। আমার নিজের প্রত্যাশাটাই তেমন। আমরা যেভাবে শেষ সিরিজটা পার করেছি তেমন একটা সিরিজ উপহার দেবার চেষ্টা থাকবে। নিজেদের সেরাটা দিয়ে ভারতের বিপক্ষে ফাইট দেওয়ার আশা করি।
ভারতের মাটিতে সিরিজটা একটু বেশি চ্যালেঞ্জিং মনে হচ্ছে কি না?
উত্তর : প্রতিটি সিরিজেই তো আসলে চ্যালেঞ্জ থাকে। তবে, দল এখন ফর্মে আছে। প্রত্যাশাও ভালো। যদিও ভারতের মাটিতে আমাদের অতীত খুবটা একটা ভালো না। তবে এবার সব ভুলে আমরা উপভোগ কার চেষ্টা করব। সবার মধ্যে যে আত্মবিশ্বাস আছে সেটা মাঠে কাজে লাগানোর চেষ্টা করব।