চেন্নাই টেস্ট
ভারতকে ৪০০ রানের আগেই থামাল বাংলাদেশ
হাসান মাহমুদ চেয়েছিলেন ভারতকে ৪০০ রানের আগে আটকাতে। বাংলাদেশেরই চাওয়া ছিল তা। বাংলাদেশ সফল হয়েছে তাতে। আর শেষটা এলো হাসানের হাত ধরেই। স্লিপে জাকির হাসানের ক্যাচ বানিয়ে ভারতের শেষ ব্যাটার হিসেবে সাজঘরে ফেরানে জাসপ্রীত বুমরাহকে। চেন্নাই টেস্টের দ্বিতীয় দিন সকালের প্রথম ঘণ্টা বাংলাদেশ রাঙাল নিজেদের মতো করে। ভারতের শেষ চার উইকেট তুলতে ১১.২ ওভারে রান দিয়েছে মোটে ৩৭। প্রথম ইনিংসে ৯১.২ ওভারে ভারত অলআউট ৩৭৬ রানে।
সকালে পেসাররা সুবিধা পাবে, এমনটি জেনেই আক্রমণে আসেন তাসকিন-হাসানরা। চেন্নাই টেস্টের দ্বিতীয় দিনে আজ শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) প্রথমে আঘাত হানেন তাসকিন আহমেদ। ৮৬ রানে অপরাজিত থেকে দিন শুরু করা রবীন্দ্র জাদেজা আর কোনো রান যোগ না করেই ফেরেন সাজঘরে। তাকে উইকেটের পেছনে লিটন দাসের ক্যাচে পরিণত করেন তাসকিন। দিনের প্রথম উইকেটের মতো দ্বিতীয়টিও তার শিকার। এই পেসারের বলে উড়িয়ে মারতে চেয়েছিলেন আকাশ দ্বীপ। বল অনেক উঁচুতে উঠলেও ক্যাচ নিতে অসুবিধা হয়নি বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তর। আউট হওয়ার আগে আকাশ করেন ১৭ রান।
বাংলাদেশের গলার কাঁটা হয়ে টিকে থাকা অশ্বিনকে ফিরিয়ে স্বস্তি এনে দেন তাসকিনই। তার করা স্ট্যাম্পের বাইরের বল সজোরে মারেন অশ্বিন। লক্ষ্য ছিল বাউন্ডারি। তবে, সেটি হতে দেননি বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। লুফে নেন ক্যাচ। এতে ভাঙে অশ্বিনের প্রতিরোধ। দলীয় ৩৭৪ রানে নবম ব্যাটার হিসেবে যখন আউট হন অশ্বিন, তার ব্যক্তিগত সংগ্রহ তখন ১৩৩ বলে ১১৩ রান।
নবম উইকেট পতনের পর শেষ আঘাত হাসানের। বুমরাহকে ফিরিয়ে ভারতকে অলআউট করার পাশাপাশি ইনিংসে নিজের পঞ্চম উইকেট তুলে নেন এই পেসার। টেস্ট ক্যারিয়ারের চতুর্থ ম্যাচে এটি হাসানের দ্বিতীয় ফাইফার। টানা দুই ইনিংসে ফাইফারের স্বাদ পেলেন তিনি।
এম.এ চিদাম্বরাম স্টেডিয়ামে ভারত সফরের প্রথম ম্যাচেই টস ভাগ্য জিতে নেন নাজমুল হোসেন শান্ত। গতকাল টস জিতে তিনি নেন সাহসী সিদ্ধান্ত, বেছে নেন বোলিং। যেটা চিপকের ইতিহাসে ৩৫ টেস্টের মধ্যে মাত্র দ্বিতীয়বার টস জিতে বোলিং নেওয়ার ঘটনা।
আগে বোলিং নিয়ে যে ভুল করেননি শান্ত সেটা প্রমাণ মিলল শুরুতেই। ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারে হাসান মাহমুদের হাত ধরে এসে যায় সাফল্য। ডানহাতি পেসারের অফ স্টাম্পের বাইরে পিচ করে একটু বেরিয়ে যাওয়া ডেলিভারি মোকাবিলায় স্লিপে ক্যাচ তুলে দেন রোহিত শর্মা। সেখানে থাকা বাংলাদেশ অধিনায়ক শান্ত ক্যাচ লুফে নিয়ে ভাসেন উচ্ছ্বাসে। ১৯ বলে ৬ রান করে সাজঘরে ফিরতে হয় ভারত অধিনায়ককে।
হাসানের পরের শিকার শুভমান গিল। নিজের পরের ওভারে কট বিহাইন্ড করে বিদায় করেন গিলকে। রানের খাতাও খুলতে পারেননি ভারতের এই টপ অর্ডার। জোড়া উইকেট নেওয়া হাসান প্রথম ঘণ্টাতেই আরেকবার হতাশায় ডোবান ভারতকে। তৃতীয় শিকার বানিয়ে বিদায় করেন বিরাট কোহলিকে। চারে নামা কোহলি উইকেটে থিতু হওয়ার চেষ্টা করছিলেন। দশম ওভারে এসে সেই চেষ্টা বৃথা করে দেন হাসান। বাংলাদেশি পেসারের অফ স্টাম্পের বাইরের বল ড্রাইভ করার চেষ্টায় ব্যর্থ হন কোহলি। ব্যাটের কানায় লেগে বল চলে যায় কিপার লিটন দাসের হাতে।
প্রথম সেশনে ২৩ ওভারে ৮৮ রান তুলতে তিন টপ অর্ডারকে হারিয়ে ফেলে ভারত। দ্বিতীয় সেশনে নেমে এই হতাশার মাঝে আবার ধাক্কা দেন হাসান। লাঞ্চ বিরতি থেকে ফিরেই নিজের চতুর্থ শিকার বানান রিশাভ পন্থকে। ২১ মাস পর টেস্টে ফেরা পন্থ ভারতের হাল ধরার চেষ্টায় ছিলেন। উইকেটে প্রায় থিতুও হয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু ঠিক ৩৯ রানের মাথায় তার প্রতিরোধ ভেঙে আরেকবার উল্লাসে ভাসেন হাসেন।
দ্বিতীয় সেশনে হাসানের সঙ্গে উইকেট উৎসবে যোগ দেন নাহিদ রানা ও মেহেদী হাসান মিরাজ। নাহিদের গতির কাছে পরাস্থ হয়ে ফিরেন জয়সওয়াল। হাফসেঞ্চুরির পর বেশিদূর যেতে পারেননি তিনি। নাহিদের ১৪৮ কিমি প্রতি ঘণ্টার শর্ট ডেলিভারিতে খোঁচা মেরে প্রথম স্লিপে ক্যাচ তুলে দেন ভারতীয় ওপেনার। ১১৮ বল খেলে ৫৬ রানে থামে তার ইনিংস।
পরের শিকার মিরাজের। দুই পেসারের মাঝে স্পিনার মিরাজ তুলে নেন লোকেশ রাহুলের উইকেট। দ্বিতীয় সেশনে ৮৮ রানের বিনিময়ে আরও তিনটি উইকেট তুলে নিয়ে এই সেশনটাও রাঙায় বাংলাদেশ।
কিন্তু প্রথম দুই সেশনের রঙিন উৎসব তৃতীয় সেশনে রূপ নেয় হতাশায়। এই সেশনের শুরু থেকেই বাংলাদেশের বোলার ওপর ছড়ি ঘোরান অশ্বিন ও রবীন্দ্র জাদেজা। চাপ সামলে দুজন মিলে সপ্তম উইকেটে উপহার দেন দুর্দান্ত জুটি। ৬ উইকেটে ৩৩৯ রান নিয়ে আজ দিন শুরু করে ভারত। অশ্বিন-জাদেজার ১৯৫ রানের জুটি বেশিদূর এগোতে পারেনি। জাদেজা আউট হলে ১৯৯ রানে থামে এই জুটি। এরপর বেশি কিছু করতে পারেনি ভারত।
বাংলাদেশের পক্ষে ৮৩ রানে পাঁচ উইকেট নেন হাসান মাহমুদ। ৫৫ রান খরচায় তাসকিন পান তিনটি। একটি করে উইকেট নেন নাহিদ রানা ও মেহেদী হাসান মিরাজ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ভারত প্রথম ইনিংস : ৯১.২ ওভারে ৩৭৬/১০ (জাইসওয়াল ৫৬, রোহিত ৬, গিল ০, কোহলি ৬, পন্ত ৩৯, রাহুল ১৬, জাদেজা ৮৬, অশ্বিন ১১৩, আকাশ ১৭, বুমরাহ ৭, সিরাজ ০* ; তাসকিন ২১-৪-৫৫-৩, হাসান ২২.২-৪-৮৩-৫, নাহিদ ১৮-২-৮২-১, মিরাজ ২১-২-৭৭-১, সাকিব ৮-০-৫০-০, মুমিনুল ১-০-৪-০)