বিসিবির অভিযোগ নিয়ে হাথুরুসিংহের পাল্টা জবাব
ক্রিকেটারের সঙ্গে অসদাচরণ ও চাকরির নিয়ম ভাঙার অপরাধে সদ্য সাবেক হওয়া প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহেকে সাসপেন্ড করে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। ৪৮ ঘণ্টার শাস্তির পর করা হয় বরখাস্ত। এরপর আগামী তিন সিরিজ ও এক টুর্নামেন্টের জন্য বিসিবি নিয়োগ দেয় নতুন কোচ ফিল সিমন্সকে। ফলে আনুষ্ঠানিকভাবেও হাথুরুর সঙ্গে বাংলাদেশের সব সম্পর্কের ইতি।
বাংলাদেশ অধ্যায় শেষের পর বিসিবির আনা অভিযোগ ও শাস্তির বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন সাবেক এই কোচ। আজ শুক্রবার(১৮ অক্টোবর) লম্বা এক বিবৃতিতে নিজের অবস্থান পরিস্কার করেছেন এই লঙ্কান কোচ।
গণমাধ্যমকে পাঠানো হাথুরুসিংহের বিবৃতিটির অনুবাদ নিচে দেওয়া হলো-
"আমি এই চিঠিটি লিখছি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) ২০২৩ বিশ্বকাপের সময় একজন খেলোয়াড়ের সাথে অসদাচরণ করা এবং অনুমতি ছাড়া বেশি ছুটি নেওয়ার বিষয়ে আমার সততা ও পেশাদারত্ব নিয়ে যে অভিযোগ করেছে সেটি নিয়ে।
এই অসংগতিপূর্ণ বক্তব্যের জবাব না দিয়ে আমি পারি না। আমার মনে হয়েছে, এর ব্যাখ্যা দেওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ। এসব অভিযোগ নিয়ে আমার দৃষ্টিভঙ্গি অনুসারে ঘটনাগুলো স্পষ্ট করা এবং আমার বক্তব্য উপস্থাপন করাও দরকার বলে আমি মনে করি।
প্রথমত, যে ঘটনার কথা বলা হয়েছে, সেটা যেখানে ঘটেছে, সেই ডাগআউট বিশ্বকাপের ম্যাচ চলাকালে সব সময় নজরদারিতে থাকে। ৪০ থেকে ৫০টি ক্যামেরা ম্যাচের প্রতিটি মুহূর্ত ধারণ করে। আর যদি সেখানে কিছু ঘটেই থাকে, আমি অভিযোগকারী বা কোনো সাক্ষীর সঙ্গে মুখোমুখি কথা বলারও সুযোগ পাইনি কেন!
সেদিন যদি এতটাই গুরুতর হয়ে থাকে, তাহলে সেই ক্রিকেটার সাথে সাথে কেন দলের ম্যানেজার বা কোনো কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করেনি? আর যদি অভিযোগ করা হয়ে থাকে, তাহলে আমাকে তখন কেন প্রশ্ন করা হয়নি? এটাই প্রশ্নের উদ্রেক করে যে এত মাস পর কেন কোনো ব্যক্তি ইউটিউবে এটা নিয়ে আলোচনার জন্ম দেবে।
দ্বিতীয়ত, ছুটি নেওয়ার বিষয়ে স্পষ্ট করে বলতে চাই যে যখনই ব্যক্তিগত ছুটি নিয়েছি, সেটা আমি সিইও বা ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের চেয়ারম্যানের অনুমতি নিয়েই নিয়েছি। বিসিবি আমাকে কখনোই বলেনি যে তারা আমার ছুটির বিষয় নিয়ে অসন্তুষ্ট। বরং আমি যখনই ছুটি চেয়েছি, বিসিবি তা অনুমোদন দিয়েছে। আমি তাদের অনুমোদন ছাড়া কখনোই ছুটিতে যাইনি।
নতুন বোর্ড সদস্যরা যখন অভিযোগ করল যে আমি অতিরিক্ত ছুটি নিয়েছি, তারা ঈদ বা শুক্রবারের মতো সরকারি ছুটিগুলো হিসাবে আনেনি। এমনকি সরকারি ছুটির সময় যে ছুটি কাটাতে পারিনি, এর কৃতিত্বও তারা আমাকে দেয়নি। আমার জানামতে, বাংলাদেশের শ্রমিক আইন অনুযায়ী শুক্রবার কাজ করার জন্য আমার পরবর্তী সময়ে ছুটি পাওয়ার কথা। এ ছাড়া বিসিবির একজন চাকরিজীবী হিসেবে আমার শুক্রবার ছুটি পাওয়ার কথা এবং বৃহস্পতিবার অর্ধদিবস ছুটি পাওয়ার কথা।
এটাও এখানে তুলে ধরা গুরুত্বপূর্ণ যে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) চলার সময় বিদেশি কোচদের ছুটি পাওয়া এখানকার সাধারণ নিয়ম। এমন নয় যে এটা আমার ক্ষেত্রেই ব্যতিক্রম ছিল; বরং আমার মেয়াদের আগেও অনেক বিদেশি কোচের ক্ষেত্রে এটাই রীতি ছিল। যাই হোক, বিপিএলের সময় নেওয়া ছুটি বিবেচনা করা হয়নি এবং এটা আমার চুক্তি অনুযায়ী পাওনা ছুটির বাইরেই ছিল।
বিসিবির আনা অভিযোগগুলোকে পূর্বপরিকল্পিত মনে হচ্ছে। নতুন সভাপতি দায়িত্ব নেওয়ার প্রথম দিনই প্রকাশ্যে প্রধান কোচকে সরিয়ে দেওয়ার ইচ্ছার কথা বলেছিলেন, তখন তিনি এর সঙ্গে বিসিবির আর্থিক সম্পর্কের বিষয়টিও উল্লেখ করেছিলেন। সঙ্গে যোগ করতে চাই, আরেকজন নতুন কোচ নিয়োগের মাত্র চার ঘণ্টা আগে কারণ দর্শানো নোটিশ পেয়ে আমি হতাশ হয়েছি। যদিও নোটিশে লেখা ছিল যে আমি নিজেকে নির্দোষ প্রমাণের জন্য ৪৮ ঘণ্টা সময় পাচ্ছি। ঘটনাগুলোর এমন ধারাবাহিকতা এ ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থার উদ্দেশ্যকে অনেক প্রশ্নবিদ্ধ করে।
এ পরিস্থিতিতে নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে আমাকে বাংলাদেশ ছাড়তে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। অভিযোগগুলো যেভাবে উপস্থাপিত হয়েছে, দ্রুত নতুন একজন প্রধান কোচের নিয়োগ এবং যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করাটা নতুন ম্যানেজমেন্টের উদ্দেশ্য এবং বিসিবির কর্মকর্তা–কর্মচারীদের প্রতি আচরণকেই চরম উদ্বেগজনক বলে প্রমাণ করে।
আমি আমার মর্যাদা রক্ষা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং এ বিষয়ে যেকোনো তদন্তে পূর্ণ সহায়তা করব। শেষ পর্যন্ত সত্যের জয় হবেই এবং যে খেলাটিকে আমি ভালোবাসি, সেটাতে ইতিবাচক অবদান রাখতে পারব।
বিষয়টি মনোযোগ দেওয়ার জন্য আপনাদের ধন্যবাদ।
আন্তরিকতার সঙ্গে,
চন্ডিকা হাথুরুসিংহে।