বাংলাদেশের ব্যাটিং ধসিয়ে আফগানদের জয়ের উচ্ছ্বাস
টানা ব্যর্থতায় বাংলাদেশ শিবিরে রাজ্যের হতাশা। সেই হতাশা মাড়িয়ে দিতে নিজেদের প্রিয় ফরম্যাটকে টনিক নিতে পারতো বাংলাদেশ। ভক্তরাও টানা দুই হোয়াইটসওয়াশের স্মৃতি ভুলে দেখতো জয়ের মুখ! কিন্তু সেই স্বপ্নও বৃথা গেল। উল্টো আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশ দল দেখাল সহজ ম্যাচ কীভাবে কঠিন করে হারা যায়!
টি-টোয়েন্টি ও টেস্টের ব্যর্থতাকে ওয়ানডেতেও টেনে নিয়ে গেল বাংলাদেশ দল। সহজ লক্ষ্য পেয়েও আফগানিস্তানের বিপক্ষে জয় তো দূরে নূন্যতম লড়াই করতে পারল না বাংলাদেশ। একের পর এক ব্যাটিং ব্যর্থতার মিছিলে প্রথম ওয়ানডেতে হার দেখল নাজমুল হোসেন শান্তর দল।
তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে আফগানিস্তানের কাছে ৯২ রানের বিশাল ব্যবধানে হেরেছে বাংলাদেশ। বড় হারে সিরিজেও ১-০ ব্যবধানে পিছিয়ে গেল লাল-সবুজের দল।
সংযুক্ত আরব আমিরাতে আগে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ৪৯.৪ ওভারে ১০ উইকেটে স্কোরবোর্ডে ২৩৫ রান তুলেছে আফগানিস্তান। জবাব দিতে নেমে ৩৪.৩ ওভারে ১৪৩ রানে থেমে যায় বাংলাদেশ।
আফগানদের নতুন সেনসেশন মোহাম্মদ গাজানফারের সামনেই বাংলাদেশের ব্যাটাররা ছিলেন অসহায়। ৬.৩ ওভারে মাত্র ২৬ রান দিয়ে এক মেডিনসহ তিনি নিয়েছেন ৬ উইকেট। রশিদ খান নিয়েছেন দুটি।
রান তাড়ায় শুরুতে উইকেট হারায় বাংলাদেশ। দলীয় ১২ রানে মোহাম্মদ গাজানফারের প্রথম বলে বোল্ড হয়ে গেলেন বাঁহাতি ওপেনার তানজিদ তামিম (৩)। শুরুর ধাক্কা সামলে সৌম্য সরকারকে নিয়ে জুটি বাধেন শান্ত। কিন্তু থিতু হয়ে দুজনেই ফিরলেন সাজঘরে। দলীয় ৬৫ রানে বিদায় নেন সৌম্য। আজমাতউল্লাহ ওমারজাইয়ের শর্ট বলে পুল করে ছক্কা মারার চেষ্টায় ডিপ ফাইন লেগে ক্যাচ দিলেন সৌম্য। ফেরার আগে ৬ চারে ৪৫ বলে ৩৩ রানে ফিরলেন বাঁহাতি ওপেনার।
এরপর দলীয় শতরান পার করে দিয়ে বিদায় নেন অধিনায়ক। মোহাম্মদ নবির বলে সুইপ করতে গিয়ে শর্ট ফাইন লেগে হাশমতউল্লাহকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। ফেরার আগে ৬৮ বলে করেন ৪৭ রান।
শান্ত ফেরার পরও ম্যাচ ছিল বাংলাদেশের হাতে। কারণ তখনও উইকেটে সেট ছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। আরেক প্রান্তে তাওহিদ। ড্রেসিংরুমে মাঠে নামার অপেক্ষায় মাহমুদউল্লাহ, মুশফিকুর রহিমদের মতো ব্যাটাররা।
কিন্তু এরপরও সহজ সমীকরণ মেলাতে পারেনি বাংলাদেশ। একের পর এক প্রতিপক্ষকে উইকেট উপহার দিয়েছেন ব্যাটাররা। উৎসবে মাতেন আফগানদের নতুন সেনসেশেন মোহাম্মদ গাজানফার। সহজ সমীকরণ মেলানো তো দূরে তার বোলিংয়ের সামনে দাঁড়াতেই পারেনি বাংলাদেশ।
অথচ বোলিংটা কি দারুণ হয়েছিল বাংলাদেশের। শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আগে ব্যাটিংয়ে শুরুতেই চরম হতাশা দেখে আফগানরা। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই উইকেট হারায় তারা।
বাংলাদেশি পেসার তাসকিন আহমেদের অফ স্টাম্পের বাইরের ডেলিভারি ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে খেলতে গিয়ে আউট হন রহমানউল্লাহ গুরবাজ। তার ব্যাটের বাইরের কানায় লেগে বল চলে যায় মুশফিকুর রহিমের হাতে। ৫ রানে বিদায় নেন গুরবাজ, দলীয় ৭ রানে প্রথম উইকেট হারায় আফগানিস্তান।
ওপেনিং জুটি ভাঙার পর দ্বিতীয় উইকেটে জুটি গড়তে চেয়েছিল আফগানরা। সেটি হতে দেননি মুস্তাফিজুর রহমান। দ্বিতীয় উইকেটে ২৩ রানের বেশি তুলতে পারেননি সেদিকুল্লাহ আতাল ও রহমত শাহ। মাত্র দুই রান করে সাজঘরের পথ ধরেন রহমত। দলীয় ৩০ রানে রহমতকে উইকেটের পেছনে মুশফিকুর রহিমের ক্যাচ বানিয়ে সাজঘরে ফেরান মুস্তাফিজ।
দ্বিতীয় উইকেট পতনের পর আবারও আঘাত হানেন মুস্তাফিজ। এবার তার শিকার আতাল। ৩০ বলে ২১ রান করে লেগবিফোর হয়ে বিদায় নেন তিনি। ৩৫ রানে ঘটে আফগানদের তৃতীয় উইকেটের পতন। একই ওভারে ফিজ তুলে নেন ওমরজাইকে। স্কোরবোর্ডে ৩৫ রান তুলতেই চার উইকেট হারায় আফগানরা।
চাপে পড়া দলকে উদ্ধার করতে গুলবাদিন নাইবের সঙ্গে জুতি গড়ার চেষ্টা করেন শাহিদি। তবে তাসকিন তার দ্বিতীয় স্পেলে এসে সেই চেষ্টা ভেস্তে দেন। নাইবকে নিজের দ্বিতীয় শিকার বানিয়ে করেন মাঠছাড়া। ডানহাতি পেসারের অফ স্টাম্পের ওপর শর্ট অব লেংথ ডেলিভারি পুল করে শর্ট মিড উইকেটে থাকা তানজিদ হাসানের হাতে ক্যাচ দিয়ে ২২ রানে ফেরেন নাইব।
এরপর মোহাম্মদ নবিকে জুটি গড়েন শাহিদি। নিজে তুলে নেন ব্যক্তিগত হাফসেঞ্চুরি। নবিও পান হাফসেঞ্চুরির দেখা। উইকেটে জমে যাওয়া দুই ব্যাটারকেও বিদায় করেন মুস্তাফিজ ও তাসকিন। প্রথমে শাহিদিকে বিদায় করে শতরানের জুতি ভাঙেন মুস্তাফিজ। বাঁহাতি পেসারের অফ স্টাম্পের বাইরের বল স্টাম্পে টেনে এনে আউট হন হাশমাতউল্লাহ শাহিদি। ফেরার আগে ২ চারে ৯২ বলে ৫২ রান করেন আফগান অধিনায়ক।
শাহিদি ফিরলেও বাংলাদেশকে ভোগান নবি। তিনি দলকে টানেন, নিজেও এগিয়ে যান শতকের পথে। অবশেষে তাসকিনের বলে হার মানে তার ইনিংস। ৮৪ রান করা নবিকে ডিপ স্কয়ার লেগে তানজিদের হাতে ক্যাচ বানিয়ে বিদায় করেন তাসকিন। ৭৯ বলে নবির ইনিংসে ছিল চার বাউন্ডারি আর তিন ছক্কা। নবি ফেরার পর শেষ পর্যন্ত ২৩৫ রানে গিয়ে থামে আফগানিস্তান।
বাংলাদেশের হয়ে সবগুলো উইকেটই পেয়েছে পেসাররা। মুস্তাফিজ ও তাসকিন সমান চার উইকেট করে পেয়েছেন। শরিফুল ইসলামের শিকার একটি।