বাংলাদেশকে হতাশ করে সিরিজ জিতল আফগানিস্তান
![](https://ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2024/11/12/inbound9151038967529244628.jpg)
প্রথম দুই ম্যাচে দুদলের জয় একটি করে। তাই তিন ম্যাচ সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচটি হয়ে দাঁড়িয়েছিল শিরোপা নির্ধারণী।এমন ম্যাচে বাংলাদেশ সুযোগ হারালেও আফগানিস্তান কোনো ভুল করেনি। রহমানউল্লাহ গুরবাজের দুর্দান্ত সেঞ্চুরি আর ওমজাইয়ের দৃঢ়তায় বাংলাদেশকে হতাশ করে সিরিজ নিজেদের করে নিয়েছে আফগানিস্তান।
সিরিজের শেষ ওয়ানডেতে বাংলাদেশকে ৫ উইকেটে হারিয়েছে আফগানিস্তান। এই জয়ে তিন ম্যাচের সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জিতল হাশমতউল্লাহ শাহিদির দল।
আগে টস জেতার সুবিধা ও মোটামুটি লড়াইয়ের পুঁজি, দুটোই ছিল বাংলাদেশের। কিন্তু লড়াই জমিয়েও ম্যাচের ফল নিজেদের পক্ষে আনতে পারল না বাংলাদেশ। এই হারে বাংলাদেশের ব্যর্থতার পাল্লাও আরও ভারী হলো। সাদা পোশাকে টানা দুই হোয়াইটওয়াশের পর এবার নিজেদের প্রিয় ফরম্যাটেও সিরিজ হারাল বাংলাদেশ।
সোমবার (১১ নভেম্বর) আগে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে ২৪৪ রান করেছে বাংলাদেশ। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৯৮ রান করেছেন মাহমুদউল্লাহ। ৯৮ বলে তার ইনিংস সাজানো ছিল ৭ টি চার ও তিন ছক্কায়।
বাংলাদেশের রান তাড়া করতে নেমে ৪৮.২ ওভারে ৫ উইকেটে ২৪৬ রান করে জয় তুলে নেয় আফগানিস্তান। আফগানদের জয়ের পথে দারুণ ইনিংস খেলে নায়ক বনে যান রহমানউল্লাহ গুরবাজ ও আজমতউল্লাহ ওমরজাই।
রান তাড়ায় বেশ সতর্ক শুরু করে আফগানরা। তবে দলীয় ৪১ রানের পর ওপেনিং জুটি আর বড় হতে দেননি নাহিদ রানা। ইনিংসের ৮ম ওভারে দ্বিতীয় বলে ১৫১ কিমি গতি তোলেন নাহিদ। চতুর্থ বলে তার গতি ওঠে ১৪৭ কিমি। ওই বলেই পরাস্থ হন আফগান ওপেনার সেদিকউল্লাহ আতাল। ১৪ রানে বোল্ড হয়ে বিদায় নেন তিনি।
শুরুর ধাক্কা সামলে দ্বিতীয় জুটিতে বাংলাদেশকে ভোগান রহমানউল্লাহ গুরবাজ ও রহমত শাহ। দুজনের জমে ওঠা জুটি ভেঙে স্বস্তি ফেরান মুস্তাফিজুর রহমান। ১৪তম ওভারে নিজের বলে নিজেই ক্যাচ নিয়ে রহমতকে ৮ রানে আউট করেন মুস্তাফিজ। এরপর আবার বোলিংয়ে এসে আফগান অধিনায়ক হাসমতউল্লাহ শাহিদিকেও বিদায় করেন কাটার মাস্টার। ৮৪ রানে ৩ উইকেট হারানোর পরও দমে যাননি গুরবাজ।
উইকেটে জমে গিয়ে একাই বাংলাদেশি বোলারদের ওপর ছড়ি ঘোরান গুরবাজ। একের পর এক দৃষ্টিনন্দন শটে পৌঁছে যান শতকের দুয়ারে। ১১৭ বলে ছুঁয়ে ফেলেন তিন অঙ্কের ম্যাজিকাল ফিগার। অবশ্য শতক ছোঁয়ার পর তার আগ্রাসন থামিয়ে দেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ইনিংসের ৩৯তম ওভারে মিরাজের বলে ছক্কা মারতে গিয়ে স্কয়ার লেগে ধরা পড়েন গুরবাজ। ফলে ১২০ বলে ১০১ রানে থামে তার ইনিংসটি।
এরপর উইকেটে আসা গুলবাদিন নাইবকে নিজের দ্বিতীয় শিকার বানান নাহিদ। ৪১তম ওভারে নাহিদের বল আকাশে উড়িয়ে উইকেটরক্ষক জাকের আলির হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন নাইব।
জোড়া ধাক্কার পর কিছুটা সময়ের জন্য বাংলাদেশ শিবিরে স্বস্তি ফেরে। তবে সেই স্বস্তি ভেস্তে দিয়ে আফগানদের নায়ক হয়ে ওঠেন মোহাম্মদ নবি ও আজমতউল্লাহ ওমরজাই। আফগানদের জেতানোর পথে ৭০ রানের ইনিংস উপহার দেন ওমরজাই। ২৭ বলে ৩৪ রান করে অপরাজিত থাকেন নবি।
এর আগে শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দায়িত্ব নেওয়া মেহেদী হাসান মিরাজ টস ভাগ্য জিতে নেন।আগে ব্যাটিং বেছে উড়ন্ত শুরু এনে দিয়েছিলেন তানজিদ তামিম। ফজল হক ফারুকির করা প্রথম ওভারটা বেশ সাবধানে সামলান তিন। তবে দুবার জীবন পেয়েও বেশিদূর স্থায়ী হলেন না।
ইনিংসের নবম ওভারে আজমতউল্লা ওমরজাই এসে ভেঙে দেন ওপেনিং জুটি। ওমরজাইয়ের বল ট্যাম্পে টেনে নিয়ে খেলতে গিয়ে বোল্ড হন সৌম্য। ২৩ বলে ২৪ রান করে ফিরে যান এই বাঁহাতি ওপেনার।
পরের ওভারে এসে প্রথম বলে তামিমকে মাঠছাড়া করেন মোম্মমদ নবি। আফগান তারকার বলে কাভার পয়েন্টে ক্যাচ দিয়ে ২৯ রানে ফেরেন এই বাঁহাতি ওপেনার। ৫৩ রানে জোড়া ধাক্কা খাওয়া বাংলাদেশের চাপ বাড়ান ওয়ানডাউনে নামা জাকির হাসান। দীর্ঘ দিন পর ফেরার ম্যাচে দুর্ভাগ্যজনক রান আউটে কাটা পড়লেন জাকির।
এরপর মাঠে নেমে আরেকবার বাংলাদেশকে হতাশায় ডোবান তাওহিদ। পাঁচে ব্যাট করতে নেমে রশিদ খানের বলে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন তিনি। ৭২ রানে ৪ উইকেট হারানো বাংলাদেশ যখন ধুঁকছিল তখন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে নিয়ে ইনিংস মেরামতের দায়িত্ব নেন মিরাজ। চাপ সামলে দুজনেই খেলেন সাবলীল। আগের চার ওয়ানডেতে ধারাবাহিক ব্যর্থ হওয়া মাহমুদউল্লাহ মিরাজের সঙ্গে দারুণ জুটি উপহার দেন।
টানা চার ওয়ানডেতে মোটে ছয় রান করা মাহমুদউল্লাহ তৃতীয় ম্যাচে দেন সমালোচনার জবাব। চাপের মুখে খারোটের বলে সিঙ্গেল নিয়ে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ২৯তম হাফসেঞ্চুরি তুলে নেন তিনি। ফিফটি ছুঁতে তার লাগে ৬৩ বল। মিরাজও এই সিরিজে রান পাচ্ছিলেন না। আগের দুটিতে রানের সুর বেধেও তালগোল পাকিয়েছেন। তবে আজ আর ভুল করেননি। মন্থর ইনিংস খেললেও উইকেটে মাহমুদউল্লার সঙ্গী হয়েছেন। ১০৬ বলে তুলে নিয়েছেন ব্যক্তিগত হাফসেঞ্চুরি।
দুজনের ১৪৫ রানের চমৎকার জুটি বাংলাদেশকে নিয়ে যায় শক্ত অবস্থানে। শেষ পর্যন্ত মিরাজকে ৬৬ রানে বিদায় করে এই জউটি ভাঙেন ওমরজাই। তবে, বিদায়ের আগে মিরাজ ও মাহমুদউল্লাহর গড়ে দেওয়া এই জুটিই শারজায় বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের জুটি। মিরাজের বিদায়ের পর রিয়াদের ব্যাটে চড়ে আফগানিস্তানকে ২৪৫ রানের লক্ষ্য ছুঁড়ে দেয় বাংলাদেশ।
আফগানিস্তানের হয়ে বল হাতে ৩৭ রান দিনে চার উইকেট নেন ওমরজাই। এক উইকেট নেন মোহাম্মদ নবি। রশিদ খানের শিকার শিকারও সমান একটি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ২৪৪/৮ (তানজিদ ১৯, সৌম্য ২৪, জাকির ৪, মিরাজ ৬৬, হৃদয় ৭, মাহমুদউল্লাহ ৯৮, জাকের ১, নাসুম ৫, শরিফুল ২*; ফারুকি ৭-০-৪১-০, গাজানফার ৭-০-৪৯-০, ওমারজাই ৭-০-৩৭-৪, নাবি ১০-২-৩৭-১ খারোটে ৯-০-৩৫-০, রাশিদ ১০-০-৪০-১)।
আফগানিস্তান: ৪৮.২ ওভারে ২৪৬/৫ (গুরবাজ ১০১, সেদিকউল্লাহ ১৪, রেহমাত ৮, শাহিদি ৬, ওমারজাই ৭০*, নাইব ১, নবি ৩৪*; শরিফুল ৮.২-০-৬১-০, নাহিদ ১০-১-৪০-২, নাসুম ১০-২-২৪-০, মুস্তাফিজ ৯-০-৫০-২, মিরাজ ১০-০-৫৬-১, সৌম্য ১-০-১২-০)।
ফল : ৫ উইকেটে জিতল আফগানিস্তান।