সুদিনের আশায় দেশের ফুটবল

হতাশার অপর নাম হয়ে দিন দিন দুঃখ বাড়িয়েছে বাংলাদেশের ফুটবল। এখানে সবার চোখ থাকে ক্রিকেটের ওপর। ক্রিকেটে ভালো করলে আনন্দে মাতে দেশ, খারাপ খেললে হয় মন খারাপ। জনপ্রিয়তায় ফুটবল কখনোই পিছিয়ে ছিল না। জীবনের সঙ্গে ক্রিকেট মিশে যাওয়ার আগে মানুষ ফুটবলেই খুঁজে নিত আনন্দ। ঢাকা লিগের ম্যাচ দেখতে গ্যালারিতে উপচে পড়ত দর্শকের ভীড়।
সোনালি অতীত পেছনে ফেলে ফুটবলে এখন জীর্ণদশা। নেই বড় তারকা, সাফল্য আসে কালেভদ্রে। বড় দলের সঙ্গে ড্র করতে পারাটাও অনেক কিছু মনে হয়। তবে, দিনগুলো বোধহয় পেছনে ফেলার সময় এসেছে। অন্তত গত কিছুদিনে ফুটবলকে ঘিরে সবার উন্মাদনা চোখে পড়ার মতো। যার নেপথ্যে হামজা দেওয়ান চৌধুরী। তার আগমনে ভোজবাজির মতো পাল্টে গেছে ফুটবলের চিত্র।
সাকিব আল হাসানের পর বাংলার ক্রীড়াঙ্গনে বৈশ্বিক তারকা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন হামজা। বিশ্বব্যাপী ফুটবলের জনপ্রিয়তা হিসেবে হামজা আগামীর বাংলাদেশের বিজ্ঞাপন হতে চলেছেন, তা নিঃসন্দেহে বলা যায়। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলা এই তারকা মাত্র এক ম্যাচ দিয়ে যে প্রভাব ফেলেছেন, হইচই পড়েছে গোটা এশিয়ায়। বর্তমানে দক্ষিণ এশিয়ায় তার মাপের ফুটবলার কমই আছেন।
হামজাকে দিয়ে যে উন্মাদনার শুরু, তা ধরে রাখলে আসছে দিনে দেশের ফুটবল এগিয়ে যাবে অনেকটা পথ। হামজার কল্যাণে বিদেশের লিগগুলোতে খেলা অন্যান্য বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ফুটবলাররাও আগ্রহ প্রকাশ করছেন লাল-সবুজের জার্সিতে খেলার। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) এদের মধ্যে কয়েকজনের সঙ্গে ইতোমধ্যে যোগাযোগ শুরু করেছে।
মাঝমাঠে দলের শক্তি বাড়িয়েছেন হামজা। তার গতি, রক্ষণ ও আক্রমণের সুযোগ তৈরি দলের জন্য বাড়তি পাওয়া। এখন প্রয়োজন পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনা। জাতীয় দলে বড় সমস্যা ফিনিশিংয়ে। ফিনিশিংয়ের অভাবে ভারতের বিপক্ষে সর্বশেষ ম্যাচে পয়েন্ট হারিয়েছে দল। যেখানে ভালোমানের একজন ফিনিশার থাকলে জয় নিয়ে ফিরতে পারত বাংলাদেশ।
আশার কথা, বাফুফের রাডারে থাকা বিদেশি ফুটবলারদের মধ্যে কয়েকজন আছেন ফরোয়ার্ড। যারা তাল মেলাতে পারবেন হামজার গতি ও পরিকল্পনার সঙ্গে। ঠিক এই জায়গায় স্বপ্ন দেখছে সমর্থকরা। হামজা জানিয়েছিলেন, তিনি একা কিছুই নন। দল হয়ে খেললে এবং সতীর্থদের সহযোগিতা পেলে ধীরে ধীরে উন্নতি করবে বাংলাদেশ। এমন মানসিকতারই আসলে প্রয়োজন, যেখানে অহেতুক উচ্চাশা না দেখিয়ে বাস্তবতা মেনে এগিয়ে যেতে হবে একটু একটু করে।