সবচেয়ে পাতলা ম্যাকবুক
অ্যাপলের নতুন পণ্য কী হবে তা নিয়ে অনেক দিন ধরেই মাথা ঘামাচ্ছিলেন প্রযুক্তি জগতের মানুষরা। নিন্দুকেরা বলছেন, স্টিভ জবসের মৃত্যুর পর বাজারে অ্যাপলের সেই আগের অবস্থান আর নেই। এবার তাই এক ঢিলে দুই পাখি মারার মতো একসাথে দুটি নতুন পণ্যের ঘোষণা দিলেন অ্যাপলের প্রধান নির্বাহী টিম কুক।
সোমবার সানফ্রান্সিসকোতে প্রথমে অ্যাপল ওয়াচের ঘোষণা দেন তিনি। এর পরই তিনি পরিচয় করিয়ে দেন সবচেয়ে পাতলা ম্যাকবুকের সাথে। অ্যাপলের ইতিহাসে সবচেয়ে পাতলা এই ম্যাকবুকটির আকার মাত্র ১৩ দশমিক ১ মিলিমিটার বা আধা ইঞ্চি।
১১ ইঞ্চি ম্যাকবুক এয়ারের তুলনায় যা ২৪ শতাংশ বেশি পাতলা। একই সাথে এটাই সবচেয়ে হালকা মাত্র ৯০০ গ্রাম বা দুই পাউন্ড। আর এ রকম পাতলা এবং হালকা ম্যাকবুক তৈরি করতে পুরো ব্যাপারটাই নতুন করে সাজাতে হয়েছে অ্যাপলের প্রকৌশলীদের। নতুন করে ভাবতে হয়েছে কিবোর্ড, ব্যাটারি এবং ট্র্যাকপ্যাড নিয়ে।
কিবোর্ডে নতুন বাটারফ্লাই মেকানিজম ব্যবহার করা হয়েছে এবং এই কিবোর্ড অন্য যেকোনো ম্যাকবুকের তুলনায় ৪০ শতাংশ বেশি পাতলা। প্রত্যেকটি বাটনের সাথেই দেওয়া হয়েছে ব্যাকলাইট। এটি কিবোর্ডটিকে অনেক বেশি সুন্দর ও আকর্ষণীয় করে তুলেছে।
নতুন এই ম্যাকবুকে ট্র্যাকপ্যাডকে আরো বড় এবং সুবিধাজনক করা হয়েছে। এখন আর ক্লিক করার জন্য আলাদা ট্যাব থাকছে না বরং একটি বড় প্যাড থাকছে যেখানে আঙুলের ছোঁয়া দিয়েই সব কাজ করা যাবে। আর এই প্যাড এতটাই সংবেদনশীল যে তা চার গুণ বেশি কার্যকর। ফলে প্যাডে আঙুল ছোঁয়ালেই ব্যবহারকারীর নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করবে ম্যাকবুক। অতিরিক্ত কোনো চাপ (অ্যাপল যেটাকে বলে ফোর্স ক্লিক) প্রয়োগ করতে হবে না। এটা অনেকটাই টাচস্ক্রিনের মতো কাজ করবে।
নতুন এই ম্যাকবুককে হালকা পাতলা করার জন্য আরো যে কসরত করতে হয়েছে অ্যাপল প্রকৌশলীদের তা হলো ম্যাকবুক থেকে আস্ত কুলার সরিয়ে ফেলা হয়েছে। গত বছর উইন্ডোজ ল্যাপটপগুলো থেকেও কুলিং ফ্যান সরিয়ে ফেলা হয়েছিল। এর বদলে ইন্টেলের কোর এম প্রসেসর ব্যবহার করা হয়েছিল। নতুন এই ম্যাকবুকেও তাই ব্যবহার করা হচ্ছে।
তবে কোর এম প্রসেসর ব্যবহার করায় সমস্যা হচ্ছে এর ফলে ব্যাটারির চার্জ দ্রুত শেষ হয়ে যায়। এই সমস্যা সমাধানে ম্যাকবুকজুড়ে কয়েকটি শিটে ব্যাটারি রাখা হয়েছে। এতে জায়গা যেমন বেশি লাগেনি তেমনি ব্যাটারির ব্যাকআপ ক্ষমতা বেড়েছে। অ্যাপল বলছে, এই ম্যাকবুকের মাধ্যমে টানা ৯ ঘণ্টা ওয়্যারলেস ইন্টারনেট ব্যবহার করা যাবে। আই টিউন্স থেকে ভিডিও দেখা যাবে টানা ১০ ঘণ্টা।
নতুন আরো একটি অবাক করা বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এই ম্যাকবুকে মাত্র একটি ইউএসবি-সি টাইপ পোর্ট রয়েছে। এটি দিয়েই ম্যাকবুকটিকে চার্জ দিতে হবে এবং অন্যান্য সব কাজ করতে হবে। এই ইউএসবি ক্যাবলটি ইথারনেট এবং এইচডিএমআই দুই ধরনের চার্জার থেকেই সংযোগ নিতে পারবে। এ ছাড়া হেডফোনের জন্য আরেকটি কানেক্টর রয়েছে।
পাতলা এই ম্যাকবুকে থাকছে ২৩০৪x১৪৪০ পিক্সেল রেজ্যুলেশনের ১২ ইঞ্চি রেটিনা ডিসপ্লে। ১ দশমিক ২ গিগাহার্জের ইন্টেল কোর এম, ৮ জিবি র্যাম এবং ২৫৬ জিবি সলিড স্টেট ড্রাইভ (এসএসডি)। আগামী ১০ এপ্রিল থেকে আগাম অর্ডার নেওয়া শুরু হবে। এর দাম শুরু হবে এক হাজার ২৯৯ ডলার। আপগ্রেড একটি ভার্সনও রয়েছে সবচেয়ে পাতলা ম্যাকবুকের যার দাম পড়বে এক হাজার ৫৯৯ ডলার। এতে থাকছে ১ দশমিক ২ গিগাহার্জের কোর এম প্রসেসর, ৮ জিবি মেমোরি এবং ৫১২ জিবি ফ্ল্যাশ স্টোরেজ। দুটি সংস্করণেই থাক ইন্টেলের এইচডি গ্রাফিক্স ৫৩০০।