ঘুরে আসতে পারেন রাঙামাটির আকর্ষণীয় ৭ পর্যটন কেন্দ্রে
চিরাচরিত জীবনযাত্রার ক্লান্তি ভুলে সবুজ পাহাড়, দৃষ্টিনন্দন লেক আর সরল জীবনযাপন করা আদিবাসীদের মধ্যে একান্তে কিছু সময় কাটাতে চান? প্রকৃতির এসব স্বাদ উপভোগ করতে ঘুরে আসতে পারেন রাঙামাটির আকর্ষণীয় কয়েকটি পর্যটন কেন্দ্র থেকে।
পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলার একটি রাঙামাটি। চট্টগ্রাম থেকে যাত্রা শুরু করলে ৭৭ কিলোমিটার রাস্তা পাড়ি দিয়ে আপনি পৌঁছে যাবেন রাঙামাটিতে। চলুন, একনজরে দেখে নেওয়া যাক রাঙামাটির আকর্ষণীয় সাত পর্যটন কেন্দ্র।
কাপ্তাই লেক
আপনি কি সর্বদা অ্যাডভেঞ্চারের খোঁজে থাকা ভ্রমণপিপাসু মানুষ? উত্তর যদি হ্যাঁ হয়, তবে কাপ্তাই লেকে কায়াকিং অথবা নৌকা ভ্রমণ আপনাকে দেবে অন্যরকম রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা। স্বর্গীয় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের প্রায় সব বৈশিষ্ট্য রয়েছে সমতলভূমি আর পাহাড়ি বনে ঘেরা মানবসৃষ্ট কাপ্তাই লেকে। জলপথে ভ্রমণের মাধ্যমে ঘুরে দেখতে পারবেন কাপ্তাই বাঁধ, রাঙামাটি শহর, রাঙামাটির ঝুলন্ত সেতু, নৌবাহিনী একাডেমি, শুভলং ঝর্ণা, কর্ণফুলী নদী, শেখ ইকোপার্কসহ মনোরম সব পর্যটন কেন্দ্র।
ঢাকার সায়েদাবাদ অথবা কমলাপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে সরাসরি যেতে পারবেন কাপ্তাইয়ে। সময় লাগবে সাত থেকে আট ঘণ্টা। এ ছাড়া ঢাকা থেকে ট্রেনে করে চট্টগ্রাম গিয়ে সেখান থেকেও কাপ্তাই যেতে পারবেন।
শুভলং ঝর্ণা
রাঙামাটি শহর থেকে মাত্র ২৫ কিলোমিটার দূরে শুভলং বাজারের পাশেই শুভলং ঝর্ণার অবস্থান। শুকনো মৌসুমে পানি কম থাকলেও বর্ষা মৌসুমে প্রায় ৩০০ ফুট উঁচু শুভলং ঝর্ণা থেকে বিপুল জলধারা আছড়ে পড়ে কাপ্তাই লেকে। এ ছাড়া শুভলং ঝর্ণা দেখতে যাওয়ার পথে এর আশপাশের সৌন্দর্যও বিমোহিত করবে আপনাকে। শুভলং ঝর্ণার কাছেই রয়েছে সুউচ্চ শুভলং পাহাড়।
স্পিডবোটের মাধ্যমে কাপ্তাই লেক ভ্রমণের মধ্য দিয়ে আপনি এই জায়গাটি ঘুরে দেখতে পারেন। রাঙামাটির রিজার্ভ বাজার বা পর্যটন কমপ্লেক্স থেকে আপনি স্পিডবোট ভাড়া করতে পারবেন। ধারণক্ষমতার ওপর ভিত্তি করে এর ভাড়া পড়বে এক হাজার ২০০ থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত। রিজার্ভ অথবা অন্যদের সঙ্গে শেয়ারেও ভাড়া নিতে পারেন নৌকা। রাঙামাটি থেকে শুভলং পৌঁছাতে সাধারণত দেড় ঘণ্টা মতো সময় লাগে।
রাজবন বিহার
রাঙামাটিতে পা রাখার সঙ্গে সঙ্গেই আপনি এখানকার প্রকৃতির পবিত্রতা অনুভব করতে পারবেন, যা আপনার মনের সব উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দূর করতে সাহায্য করবে। মনকে আরো প্রশান্তি দিতে ঘুরে আসতে পারেন রাঙামাটির অন্যতম প্রাচীন বৌদ্ধবিহার রাজবন বিহার থেকে।
রাঙামাটি শহরের প্রাণকেন্দ্রে বিহারটি অবস্থিত হলেও শহরের যান্ত্রিক কোলাহল এখানে অনুপস্থিত। কাপ্তাই লেক আর পাহাড়ের সবুজ বনানীর ছায়ায় ঘেরা রাজবন বিহার। রাঙামাটির রিজার্ভ বাজার থেকে জলপথে বা স্টেডিয়ামের পার্শ্ববর্তী সড়কপথে অল্প সময়েই যাওয়া যায় রাজবন বিহারে।
ঝুলন্ত সেতু
রাঙামাটি শহরের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ হলো ঝুলন্ত সেতু। শহরের শেষ প্রান্তে কাপ্তাই লেকের একাংশে ৩৩৫ ফুট লম্বা এই ব্রিজটি পর্যটকদের কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয়। এই সেতুকে ‘সিম্বল অব রাঙামাটি’ বলা হয়ে থাকে। দৃষ্টিনন্দন এই সেতু দুটি বিচ্ছিন্ন পাহাড়ের মধ্যে গড়ে দিয়েছে আত্মিক সম্পর্ক। এই ঝুলন্ত সেতুর ওপর থেকেই অবলোকন করা যায় কাপ্তাই লেকের অপরূপ সৌন্দর্য।
রাঙামাটি শহর থেকে মাত্র পাঁচ কিলোমিটার দূরেই এই ঝুলন্ত সেতুর অবস্থান। সিএনজি অটোরিকশা বা প্রাইভেট জিপ ভাড়া করে ঘুরে আসতে পারেন এখান থেকে।
সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট জাদুঘর
আদিবাসীদের জীবন ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জানার আগ্রহ থাকলে ঘুরে আসতে পারেন রাঙামাটি সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট জাদুঘর থেকে। রাঙামাটি পার্বত্য জেলার বিভিন্ন উপজাতীয় মানুষের মধ্যে বহুকাল ধরে প্রচলিত যেসব ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি রয়েছে, তার সংরক্ষণ ও বিকাশ সাধনের লক্ষ্যে এই জাদুঘর গড়ে তোলা হয়। এখানে রয়েছে বিভিন্ন আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ব্যবহার করা ঐতিহ্যবাহী গয়না, পোশাক, বাসনপত্র, অস্ত্র, ছবি, চিত্রকলা, ভাস্কর্য, প্রাচীন মুদ্রা এবং সংগীতের জন্য ব্যবহার করা নানা যন্ত্র।
১৯৭৮ সালে স্থাপিত এই জাদুঘর রাঙামাটি শহরের প্রবেশমুখের কাছেই অবস্থিত। শহর থেকে রিকশায় করেই যাওয়া যায় এখানে।
পেদা টিং টিং
সুবিশাল কাপ্তাই লেক আর পাহাড়ের কোল ঘেঁষে রয়েছে অসংখ্য ছোট দ্বীপ। এরই একটি দ্বীপে অবস্থিত পেদা টিং টিং রেস্টুরেন্ট। রসনাবিলাসী ভ্রমণপ্রেমীদের জন্য চমৎকার এক রেস্তোরাঁ এটি। এখানকার আদিবাসীদের রান্না করা খাবারগুলোর স্বাদ অতুলনীয়। কাপ্তাই লেক ভ্রমণে গেলে পেদা টিং টিং-এর খাবারের স্বাদ না নিলে আপনার ভ্রমণ থেকে যাবে অসম্পূর্ণ। রেস্টুরেন্টটি দেশীয় খাবার বাম্বু চিকেনের (বাঁশে সরবরাহ করা) জন্য বিখ্যাত।
রাঙামাটি শহর থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে এর অবস্থান। নৌকা ভ্রমণের মাধ্যমে ঘুরে আসতে পারে জনপ্রিয় পেদা টিং টিং রেস্টুরেন্ট থেকে।
কাপ্তাই জাতীয় উদ্যান
রাঙামাটি জেলায় অবস্থিত কাপ্তাই জাতীয় উদ্যান ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ বন ও পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক পাঁচ হাজার ৪৬৪ হেক্টর জায়গাজুড়ে প্রতিষ্ঠিত হয়। এই উদ্যানে বৃক্ষায়ন করা হয়েছিল ১৮৭৩, ১৮৭৮ ও ১৮৭৯ সালে। এর ফলে এখানে গড়ে উঠেছিল ক্রান্তীয় বর্ষাবন বা রেইন ফরেস্ট। কাপ্তাই জাতীয় উদ্যানে হরিণ, হাতি, বনবিড়াল, মেঘলা চিতা, বানরসহ নানা রকমের প্রাণীবৈচিত্র্য রয়েছে। বিপন্ন প্রজাতির বেশ কিছু পাখির সন্ধানও পাওয়া যায় এখানে। রিকশায় করেই রাঙামাটি শহর থেকে কাপ্তাই জাতীয় উদ্যানে যাওয়া যায়।
রাঙামাটি মানেই অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের রাজ্য। পাহাড়িকন্যা রাঙামাটির সৌন্দর্য পাখির ডানার মতই পেখম মেলে সব মৌসুমে। প্রকৃতির নিবিড় আলিঙ্গনে বাঁধা রূপের রানি রাঙামাটির পরতে পরতে রয়েছে নানা বৈচিত্র্য। রাঙামাটির গহিন অরণ্য, পাহাড়ি প্রকৃতির অমোঘ রূপের আকর্ষণ তাই পর্যটকদের কাছে অফুরন্ত।