চলুন যাই কাঙাল হরিনাথ স্মৃতি জাদুঘরে
লাল ইট আর মোজাইক টাইলসের কারুকাজে নির্মিত একটি ভবন। বাহারি ফুলের বাগানে ঘেরা ভবনটির নাম কাঙাল হরিনাথ স্মৃতি জাদুঘর। ভেতরে পরিপাটি করে সাজানো কয়েকশ বছর আগের ছাপানো পত্রিকা, লেখা কবিতা ও ছবিসহ নানা স্মৃতিচিহ্ন। কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী উপজেলার গড়াই নদীর তীরবর্তী কুণ্ডুপাড়ায় অবস্থিত এ জাদুঘর। জেলাশহর থেকে এর দূরত্ব প্রায় ১৬ কিলোমিটার।
নতুন প্রজন্মের কাছে কাঙাল হরিনাথের স্মৃতিকে তুলে ধরতে ২০১৭ সালের ৫ ডিসেম্বর জাদুঘর নির্মাণ করে সরকার। প্রবেশের পরই জাদুঘরের আঙিনায় দেখা মিলবে গ্রামীণ সাংবাদিকতার পথিকৃৎ কাঙাল হরিনাথের স্মৃতি-ভাস্কর্য। ভবনের নিচের তলায় রয়েছে ১০০ আসন বিশিষ্ট শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত সম্মেলনকক্ষ। জাদুঘরের দ্বিতীয় তলার দেয়ালে স্থাপন করা অ্যালবামে শোভা পাচ্ছে কাঙাল হরিনাথ ও তাঁর স্ত্রী, লালন শাহ এবং মীর মশাররফ হোসেনের ছবি। একই সঙ্গে হরিনাথ সম্পাদিত পত্রিকা ‘গ্রামবার্তা প্রকাশিকা’, মুদ্রণযন্ত্রে ব্যবহৃত কাঠের ব্লক ও বিভিন্ন যন্ত্রপাতিসহ ১৬৮টি নিদর্শন এবং ৬৭টি ছবি। এ ছাড়া জাদুঘরের অপর পাশে রয়েছে একটি গ্রন্থাগার। সাড়ে ৪০০ বই রয়েছে গ্রন্থাগারটিতে। বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীন জাতীয় জাদুঘর কর্তৃপক্ষ কাঙাল হরিনাথের স্মৃতিভরা জাদুঘরটি দেখভালের দায়িত্ব নিয়েছে। জাদুঘর থেকে এক কিলোমিটার দূরে রয়েছে কাঙাল কুঠির।
গ্রামের সাধারণ মানুষের উন্নতির জন্য এবং ইংরেজদের শোষণ-নিপীড়ন হতে তাঁদের রক্ষার জন্য কাঙাল হরিনাথ মজুমদার আজীবন সংগ্রাম করেছেন। ১৮৭৩ সালে কাঙাল হরিনাথ কুমারখালির বাড়ির এম এন প্রেসে মথুরনাথ মুদ্রণযন্ত্র স্থাপন করেন। এই যন্ত্রে গ্রামবার্তা প্রকাশিকা পত্রিকা ছাপানো হতো। কাঙালের কুঠিতে এখনো রয়েছে সেই ঐতিহ্যবাহী মথুরনাথ মুদ্রণযন্ত্রটি। পরিবারের কিছু দাবিদাওয়া থাকায় এখনো যন্ত্রটি সরকারের কাছে হস্তান্তর করা হয়নি বলে জানিয়েছে কাঙাল হরিনাথের পঞ্চম পুরুষ অশোক মজুমদারের স্ত্রী গীতা মজুমদার।
সাপ্তাহিক ছুটি উপলক্ষে প্রতি বৃহস্পতিবার বন্ধ থাকে এবং শুক্রবার বিকেল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকে জাদুঘর। এ ছাড়া প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকে জাদুঘরটি। জাদুঘরে প্রবেশমূল্য বাংলাদেশিদের জন্য ১০ টাকা এবং সার্কভুক্ত দেশের পর্যটকদের জন্য ২০০ টাকা এবং অন্যান্য দেশ থেকে আসা পর্যটকদের জন্য ৫০০ টাকা।
কুষ্টিয়া শহরে থাকার জন্য এন এস রোডের পাশে শাপলা, কোর্ট স্টেশনের পাশে আজমেরী এবং ডিসি কোর্ট এলাকায় দিশা, মজমপুরে অবস্থিত জাহাঙ্গীর হোটেল উন্নতমানের হোটেল। হোটেলগুলো এসি ও নন-এসি দুই ধরনের সুবিধা প্রদান করে।
বিশেষ খাবার
কুষ্টিয়ার তিলের খাজা, দধি এবং কাটারিভোগ মিষ্টি অনেক সুস্বাদু। কুষ্টিয়া শহরের মজমপুরে বীরেন, যুগল দধি ও মিষ্টান্ন ভাণ্ডার দধি এবং মিষ্টির জন্য বিখ্যাত।
যেভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে এস বি, শ্যামলী, হানিফসহ বিভিন্ন পরিবহন কুষ্টিয়ায় নিয়মিত যাতায়াত করে। এসি বাসে ৬০০ থেকে ১০০০ টাকা (ক্লাস অনুযায়ী) এবং নন-এসিতে ৪৫০ টাকা ভাড়া। বাস শহরের মজমপুর গেট এলাকায় নামিয়ে দেয়। মজমপুর টার্মিনাল থেকে অটোরিকশায় ১০ টাকা ভাড়া। টার্মিনাল থেকে বাসে করে কুমারখালি বাসস্ট্যান্ডে যেতে ২৫ টাকা ভাড়া। কুমারখালি বাসস্ট্যান্ড থেকে জাদুঘরে যেতে পাঁচ টাকা ভাড়া। এ ছাড়া মজমপুর থেকে কাঙাল হরিনাথের স্মৃতি জাদুঘর আটোরিকশায় ৪০ টাকা ভাড়া। জাদুঘর থেকে থেকে পাঁচ টাকা ভাড়ায় কাঙালের বাস্তুভিটা ঘুরে আসা যায়।