ড. শামসুজ্জোহার সমাধিস্থলে একদিন
রাজধানীর কোলাহল ছেড়ে কয়েক দিনের জন্য কোথাও বেড়াতে যেতে চাইলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়কে বেছে নিতে পারেন। যান্ত্রিক নগরী ঢাকার বাইরে ঘোরাফেরার জন্য ছুটির দিনগুলো আপনি ঘুরে আসতে পারেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে।
আর জোহা দিবসে আপনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে ড. শামসুজ্জোহা স্মরণে নির্মিত জোহা স্মৃতিফলক, স্মৃতিস্মারক স্ফুলিঙ্গ, জোহা চত্বর, জোহা হল, জোহার সমাধিস্থল ঘুরে আসতে পারেন। তো চলুন আর দেরি না করে ঘুরে আসি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে জোহার স্মৃতিধন্য বিভিন্ন স্থানে।
১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ডাকা আন্দোলনে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী ১৪৪ ধারা জারি করে আন্দোলনকে দমাতে চেয়েছিল। কিন্তু ১৮ ফেব্রুয়ারি সকালে শিক্ষার্থীরা সেই আইন ভেঙে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনে মহাসড়কে আন্দোলন শুরু করে। বিষয়টি জানতে পেরে ড. জোহা সেখানে উপস্থিত হন এবং শিক্ষার্থীদের শান্ত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে নিয়ে যেতে চেষ্টা করেন।
শিক্ষার্থীরা একপর্যায়ে মিছিল শুরু করে। ফলশ্রুতিতে পাকবাহিনী তাদের ওপর গুলি করার প্রস্তুতি নেয়। তখন ড. জোহা চিৎকার করে বলতে থাকেন—ডোন্ট ফায়ার, আই সেইড ডোন্ট ফায়ার। এরপর তিনি উপস্থিত পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে অনুরোধ করেন, তাদের ওপর যেন গুলি না করা হয়। কিন্তু তাঁর কথায় কর্ণপাত না করে পাকিস্তানি বাহিনীর সেনা ক্যাপ্টেন হাদি তাঁর দিকে লক্ষ্য করে গুলি করেন এবং সাথে সাথে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পরে রাজশাহী মিউনিসিপ্যাল অফিসে নিয়ে গিয়ে তাঁকে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। নিজের জীবনকে তুচ্ছ করে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের রক্ষার্থে এভাবে জীবন বিলিয়ে দেন এই বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে তাঁকে সমাহিত করা হয় মূল ফটকের সামনে। যে স্থানে তাঁকে গুলিবিদ্ধ করা হয়েছিল, ঠিক সেখানেই নির্মিত হয়েছে জোহা স্মৃতিফলক।
প্রতি বছর ১৮ ফেব্রুয়ারি তাঁর স্মৃতিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পালন করা হয় শিক্ষক দিবস। এ দিন প্রশাসনিকভাবে ছুটি পালন করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকে প্রবেশ করে কিছু দূর হেঁটে গেলে ড. জোহার সমাধি চোখে পড়ে। চার দিকের ফুলের সারি, পাতাবাহার গাছ আগলে রেখেছে তাঁর এই সমাধিকে। এই জায়গাটি জোহা চত্বর নামে পরিচিত। ফুল দিয়ে তাঁকে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এই মহান আত্মত্যাগের সম্মানে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁর নামানুসারে একটি আবাসিক হল নির্মাণ করেছে, যেটি ড. শামসুজ্জোহা হল নামে পরিচিত। চারুকলা বিভাগের সাবেক সভাপতি কনক কুমার পাঠকের হাতের ছোঁয়ায় আবাসিক হলটির প্রাঙ্গণে তাঁর স্মরণে স্মৃতিস্মারক স্ফুলিঙ্গ নির্মাণ করা হয়ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরতে পরতে আজও ছড়িয়ে আছে তাঁর পদচিহ্ন।
যেভাবে যাবেন
ড. শামসুজ্জোহার এ স্মৃতিস্তম্ভ ও সমাধিস্থলে যেতে চাইলে আসতে হবে রাজশাহী শহরে অবস্থিত দেশের অন্যতম বিদ্যাপীঠ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। ঢাকা থেকে সরাসরি সড়ক কিংবা রেলপথে সহজেই আসা যাবে। ভাড়া পড়বে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। এ ছাড়া বিমানযোগেও আসা যাবে। ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গগামী দেশ ট্রাভেলস, ন্যাশনাল ট্রাভেলস, শ্যামলী, গ্রামীণ ট্রাভেলস, হানিফ পরিবহণসহ বিভিন্ন পরিবহণে আসা যাবে। এ ছাড়া কমলাপুর থেকে রাজশাহীগামী সিল্কসিটি, বনলতা এক্সপ্রেস কিংবা পদ্মা এক্সপ্রেস ট্রেনেও যাওয়া যায়। সেখান থেকে অটো কিংবা রিকশায় চড়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় আসলে দেখা মিলবে ড. জোহার সমাধিস্থল ও স্মৃতিস্মারক স্ফুলিঙ্গ।