বান্দরবানের পবিত্র স্থান স্বর্ণ মন্দির
বান্দরবানে অবস্থিত বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের উপাসনালয়ের মধ্যে অন্যতম ‘বুদ্ধ ধাতু জাদি’ মন্দিরে বছরজুড়েই পর্যটকদের আনাগোনা থাকে। মন্দিরটি স্বর্ণ মন্দির নামেই বেশি পরিচিত।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি বান্দরবান শহর থেকে নয় কিলোমিটার দূরে বালাঘাটা এলাকার সুউচ্চ পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত এ মন্দিরটিতে দাঁড়িয়ে মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখা যায়।
স্থানীয় মারমাদের জন্য ১৯৯৫ সালে উ পাঞঞা জোত মহাথের এ মন্দিরটি নির্মাণ কাজ শুরু করেন। ২০০৪ সালে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বড় এ হীনযান বৌদ্ধ মন্দিরের নির্মাণকাজ শেষ হয়। বার্তা সংস্থা ইউএনবির এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এ তথ্য।
বৌদ্ধ (ধাতু) সম্প্রদায়ের কাছে বুদ্ধ ধাতু জাদি মন্দির একটি পবিত্র স্থান ও উপাসনালয় হিসেবে বিবেচিত। মিয়ানমারের কারিগরদের দিয়ে কাঠের তৈরি অনন্য এ মন্দিরে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বুদ্ধ মূর্তি রয়েছে।
নামমাত্র প্রবেশ ফি দিয়ে দর্শনার্থীরা এ নির্মাণশৈলী এবং এর মনোরম দৃশ্য দেখতে পারেন। মন্দিরটির ফটক, চারপাশের রেলিং ও জমিনজুড়ে সোনালি রঙের শিল্পকর্ম ও মুর্যাল রয়েছে। মন্দিরটির সবচেয়ে ওপরে থাকা গম্বুজটিকেও নানা রূপে সজ্জিত করা হয়েছে।
মূল মন্দিরের বাইরে থাকা বিভিন্ন আকৃতির ১২টি বৌদ্ধ মূর্তি সামগ্রিক নান্দনিকতাকে আরো বাড়িয়ে তুলেছে। প্রতিটি মূর্তিতে খচিত বিভিন্ন ‘মুদ্রা’ বৌদ্ধ ধর্মের শিক্ষার প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় এক হাজার ৬০০ ফুট উঁচুতে স্থাপিত এ মন্দিরটি দেখতে দেশ-বিদেশ থেকে বিভিন্ন সময় বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মানুষ আসে।
পূজা বা ধর্মীয় রীতিনীতি পালন করা ছাড়া সন্ধ্যা ৬টার পর কোনো পর্যটককে মন্দিরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না।
মন্দির প্রাঙ্গণে প্রতি বছর জানুয়ারির শেষে এবং ফেব্রুয়ারির শুরুতে মেলার আয়োজন করা হয়। পূর্ণিমার রাতে বুদ্ধকে স্মরণ করতে মন্দিরটিতে হাজার হাজার মাটির প্রদীপ জ্বালানো হয়।
নির্মাণ শুরুর বছরগুলোর তুলনায় বর্তমানে প্রচুর সংখ্যক পর্যটক মন্দিরটি দেখতে আসেন। তবে স্থানীয়রা জানায়, বাড়তি পর্যটকের আনাগোনা এখন মন্দিরের জন্য উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেননা, পর্যটকদের অনেকেই এ পবিত্র স্থানটিকে সম্মান জানায় না।
স্থানীয় একজনের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, এটি যে একটি পবিত্র স্থান, এ বিষয়টি বেশিরভাগ পর্যটকই বেমালুম ভুলে যায় এবং প্রবেশের সীমানা অতিক্রম করে পুরাণিদর্শন ও বিভিন্ন মূর্তির অবমাননা করে।
২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত দীর্ঘ নয় মাস মন্দিরটি বন্ধ রাখা হয়েছিল। স্থানীয় প্রশাসনের মতে, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পর্যটকরা বৌদ্ধ মন্দিরের পবিত্রতা নষ্ট করছে, বিভিন্নভাবে ভক্তদের হয়রানিও করছে।
এরপর মন্দিরের আশপাশের নিরাপত্তা জোরদার করার পর পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হলেও সাম্প্রতিক মাসগুলোতে তা আবারও আগের অবস্থায় ফিরে গেছে।
মন্দিরটি দেখতে আসা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জোবায়ের আহমেদ শাকিল জানান, স্থানীয় জনপদের খারাপ লাগার বিষয়টি বোঝা উচিত। স্বর্ণ মন্দিরের মতো পবিত্র দর্শনীয় স্থানগুলো পরিদর্শন করার সময় ধর্মীয় অনুভূতিতে যেন কোনো আঘাত না লাগে, সে বিষয়টিতে পর্যটকদের আরো সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত।
স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, ‘মন্দিরটি দেখতে আসা পর্যটকদের মধ্যে একে অসম্মান করার চেয়ে সম্মান দেখানোর লোকজনের সংখ্যাই অনেক বেশি।’