বালিয়াটি জমিদারবাড়িতে একদিন
মানিকগঞ্জের কয়েকটি ঐতিহাসিক স্থাপনার মধ্যে বালিয়াটি প্রাসাদ অন্যতম। এই প্রাসাদ স্থানীয়ভাবে বালিয়াটি জমিদারবাড়ি নামে পরিচিত।
আঠারো শতকের মাঝামাঝি গোবিন্দরাম শাহ এই জমিদারবাড়ি নির্মাণ করেন, যা প্রায় ৫.৮৮ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত। পুরো চত্বর উঁচু প্রাচীর দিয়ে ঘেরা। এতে রয়েছে সাতটি প্রাসাদসম ইমারত, ২০০টি কক্ষ। ব্রিটিশ শাসনামলে জমিদারেরা প্রায় দুইশ বছরের মতো এই এলাকা শাসন করে। এ সময়ে তারা নানা রকম গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা তৈরি করে। ১৯৮৭ সালে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এই প্রাসাদকে সংরক্ষিত পুরাকীর্তি হিসেবে ঘোষণা করে।
এই পুরাকীর্তি দেখতে আমরা রওনা দিই প্রায় ২৬ জন, যারা সবাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সদস্য। সবাই একসঙ্গে রাজধানীর নীলক্ষেতে নাশতা সেরে গাবতলীর উদ্দেশে বাসে যাত্রা শুরু করি। আধাঘণ্টা পর আমরা গাবতলী নেমে যাই। এরপর আমরা আরেকটি বাসে উঠে সাটুরিয়া উপজেলা শহরে গিয়ে নামি। সেখান থেকে অটোরিকশায় চড়ে যাই আমাদের গন্তব্যে।
জমিদারবাড়ির সামনে পৌঁছে প্রথমেই নজরে আসে পাথরের তৈরি চারটি সিংহমূর্তি। সিংহমূর্তির নিচে রয়েছে চারটি প্রবেশপথ। প্রথম প্রবেশপথের পরেই আছে একটি টিকেট কাউন্টার। সেখান থেকে টিকেট সংগ্রহ করে আমরা ভেতরে প্রবেশ করি।
প্রবেশ করে দেখলাম জমিদারবাড়ি কয়েকটি ভবনে বিভক্ত। পূর্ব বাড়ি, পশ্চিম বাড়ি, উত্তর বাড়ি, মধ্য বাড়ি এবং গোলা বাড়ি নামের বড় আকারের পাঁচটি ভবন আছে এর ভেতরে। জমিদারবাড়ির বিভিন্ন অংশ বালিয়াটি জমিদার পরিবারের উত্তরাধিকারীরা তৈরি করেন। মূল প্রাসাদ-সংলগ্ন একই রকম পাঁচটি অংশ আলাদাভাবে নির্মাণ করা হয়েছিল। পূর্ব দিকের একটি অংশ পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেলেও বাকি চারটি টিকে আছে এখনো।
মূল ভবনগুলোর সামনের দেয়ালজুড়ে নানা রকম কারুকাজ আর মূর্তি চোখে পড়ে। বালিয়াটি জমিদারবাড়ি ঘিরে তৈরি করা প্রাচীন আমলের সেই প্রাচীর এখনো টিকে আছে। চার দেয়ালের মাঝে এখন রয়েছে চারটি সুদৃশ্য ভবন। চারটি মহলের মাঝের দুটি দোতলা আর দুই পাশের দুটি তিনতলা ভবন। ভবনগুলোর পেছনের দিকে আছে বড় একটি পুকুর। শানবাঁধানো ছয়টি ঘাট আছে পুকুরের চারপাশে।
সবশেষে আমরা যাই দুই নম্বর ভবনের দোতলার জাদুঘরে। দ্বিতীয় তলায় একটি রংমহল রয়েছে। এখানে জমিদারদের ব্যবহৃত নিদর্শনাদি দর্শনার্থীদের জন্য রাখা হয়েছে। নিদর্শনের মধ্যে রয়েছে জমিদারদের ব্যবহৃত অসংখ্য সিন্দুক, ছোট-বড় আয়না, ঝাড়বাতি, লণ্ঠন, শ্বেতপাথরের ষাঁড়, শ্বেতপাথরের টেবিল, পালঙ্ক, আলনা, কাঠ, বেতের চেয়ারসহ আরও নিদর্শন। মজলিস কক্ষে মূল্যবান ঝাড়বাতি রয়েছে। মজলিস কক্ষটির দেয়ালে হাতে আঁকা ছবি আছে। এর অন্দরমহলে রয়েছে তিনটি অট্টালিকা। এখানে ছিল অতিথিদের থাকার জায়গা, রন্ধনশালা। সবচেয়ে আকর্ষণীয় ল্যাম্পগুলো।
যেভাবে যাবেন
ঢাকার গাবতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে জনসেবা বা এসবি লিংক গেটলক পরিবহনের বাসে করে মাত্র দুই ঘণ্টায় সাটুরিয়া পৌঁছে যাওয়া যায়। বাসভাড়া পড়বে জনপ্রতি ৮০ টাকা। সাটুরিয়া বাসস্ট্যান্ড থেকে মাত্র ৩০ টাকা রিকশা ভাড়ায় চলে যেতে পারবেন বালিয়াটি জাদুঘরে।
টিকেট মূল্য
বালিয়াটি জাদুঘরে জনপ্রতি টিকেটের দাম দেশি দর্শনার্থীদের জন্য ২০ টাকা, সার্কভুক্ত দর্শনার্থী ১০০ টাকা এবং বিদেশি দর্শনার্থী ২০০ টাকা। রোববার জাদুঘর পূর্ণদিবস বন্ধ থাকে এবং সোমবার বন্ধ থাকে অর্ধদিবস। ঈদের পরের দিন এই প্রাসাদ বন্ধ থাকে। সপ্তাহের বাকি দিনগুলোতে খোলা থাকে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত।