শহর থেকে দূরে
৫৩০ টাকায় ঘুরে আসুন ইলিশের শহর
কর্মব্যস্তময় টানা সপ্তাহ কাটানোর পর আপনি চান একটু বিরতি। আর ছুটির দিনে কোথাও একদিনে ঘুরে আসতে পারলে তো কোনো কথাই নেই। কিন্তু নগরজীবনের ব্যস্ততা থেকে মুক্তির উপায় আছে কি? শহর ছেড়ে দূরে কোথাও যাবেন, সে সময়টাও তো নেই আপনার, কারণ ছুটি মাত্র একদিনের!
তাই একদিনে ঢাকার সীমানা পেরিয়ে নদীপথে আপনি ঘুরে আসতে পারেন চাঁদপুর। তো আর দেরি কেন? চলুন ঘুরে আসি চাঁদপুরে।
আপনার লঞ্চ জার্নি শুরু হবে বুড়িগঙ্গা নদী থেকে। আস্তে আস্তে ধলেশ্বরী আর শীতলক্ষ্যা পাশ কাটিয়ে লঞ্চ গিয়ে উঠবে মেঘনায়। কেবিনে কাঁথা মুড়ি দিয়ে না ঘুমিয়ে, এদিক ওদিক না ঘুরে উঠে যান ছাদে। অসাধারণ দৃশ্য আপনার চোখে পড়বে,পূর্ণিমার চাঁদের আলোয় হয়তো পৃথিবীটাকে আপনার নতুন মনে হবে, চারপাশে সুনসান নীরবতা, চাঁদের আলোয় একটি বিশাল দানব সব কিছু পাশ কাটিয়ে গর্জন গর্জন করতে করতে এগিয়ে যাচ্ছে, আশপাশের প্রকৃতির রূপ দেখবেন অন্যভাবে, নিজেকে হয়তো বা মনে হবে ঘোরের মধ্যে আছেন, ‘রাত তিনটা পর্যন্ত পূর্ণিমার চাঁদটা উপভোগ করে নেমে আসতে পারেন নিচের ডেকে। ডেকে বিশাল জায়গা খালি থাকে। এরপর সবাই মিলে গান করতে করতে আপনি আবিষ্কার করবেন যে, আপনি আপনার গন্তব্যস্থলে পৌঁছে গেছেন।’
চাঁদপুরে যা দেখবেন
চাঁদপুরে নেমে কিছু সময় হাতে রেখে একটু ঘুরে নিতে পারেন আশপাশ। দেখার মতো জায়গার অভাব নেই। আর চাঁদপুরে এসে ইলিশ না খেয়ে বাড়ি ফেরার মতো বোকামি করবেন না। যদিও এখন আসল চাঁদপুরের ইলিশ খুঁজে পাওয়া কষ্টসাধ্য। তবে ভাগ্যে থাকলে হয়তো রুপালি ইলিশের স্বাদ নিতে পারবেন। লঞ্চঘাটের আশপাশেই বেশ কিছু রেস্তোরাঁ রয়েছে। চাইলে কালীবাড়ি মোড়ে গিয়েও খেতে পারেন। লঞ্চ জার্নির পর খাওয়াটা এককথায় অসাধারণ লাগবে। চেষ্টা করবেন হালকা কিছু খাবার সঙ্গে রাখতে। অনেক এনার্জি আছে এমন কিছু খেতে, ডিম ভাজি, পরোটা, আর চা দিয়ে শেষ করতে পারেন আপনার নাশতা, আপনার বিল আসবে ৫০ টাকা,
যেভাবে যাবেন
ঢাকার যেকোনো প্রান্ত থেকে আপনি সদরঘাট যাওয়ার গাড়ি পেয়ে যাবেন। তবে যাঁরা উত্তরা থেকে আসবেন, বনানী হয়ে গেলে আজমেরী গ্লোরিতে উঠতে পারেন।
আর রামপুরা হয়ে গেলে সুপ্রভাতে উঠে পড়তে পারেন, আপনি মিরপুর থেকে যেতে পারনে যে কোনো পরিবহনে। এ ছাড়া ঢাকা শহরের যেকোনো প্রান্ত থেকেই গুলিস্তান যাওয়ার সরাসরি বাস পেয়ে যাবেন। গুলিস্তান থেকে বাসে উঠলেই আপনাকে সদরঘাট নামিয়ে দেবে, ইচ্ছে হলে রিকশা নিয়েও যেতে পারেন, তবে আপনাকে গুনতে হবে ৩০-৪০ টাকা।
চাঁদপুরে যাওয়ার জন্য সেরা দুটি লঞ্চ হচ্ছে রফরফ-২ ও ময়ূর-৭। আপনি চাইলে যেকোনো একটাতেই উঠে পড়তে পারেন। যদি চেয়ারে বসে যেতে চান, তাহলে ভাড়া লাগবে ১৩০ টাকা (ময়ূর-৭ ঢাকা থেকে ছাড়ে দুপুর ১টা ৩০ মিনিটে, চাঁদপুর থেকে রাত ১২টা ১৫ মিনিটে। রফরফ-২ ঢাকা থেকে রাত ১২টায় ও চাঁদপুর থেকে দুপুর ১২টায় ছাড়ে)।
যা দেখবেন
এরপর সোজা চলে যাবেন বড় স্টেশনে, মিনিট দশেক হাঁটলেই পৌঁছে যাবেন, আমার মনে হয় মানুষের জীবনে একবার হলেও এই জায়গায় আসা দরকার। এত দারুণ জায়গাটা লিখেও হয়তো বা বোঝানো যাবে না। পদ্মা, মেঘনা, ডাকাতিয়া তিনটি নদীর মিলনমেলা হলো বড় স্টেশন, গিয়েই দেখতে পাবেন অত্যন্ত গোছানো একটি পার্ক, পার্কে একটু এগোলেই দেখবেন পাশে নৌকা আছে। নৌকায় দরদাম করে উঠে পড়ুন, ঘণ্টা ১০০ করে নেবে।
বেশ খানিক জায়গা ঘুরে আসুন, তিনটি নদীর জায়গাতেই মিলনমেলা কিন্তু তিনটি নদীই আলাদা করা যায়। তবে ভুলেও পানিতে নামার চিন্তা করবেন না, মোহনায় অসম্ভব রকম স্রোত থাকে।
এরপর ৯টা নাগাদ উপস্থিত হোন আপনি ঘাটে। হালকা নাশতা (আসতে পারে ৩০ টাকা), এরপর ঢাকার উদ্দেশে। ২টা নাগাদ সদরঘাটে চলে আসবেন। এরপর বাসযোগে পান্থপথ (২০ টাকা)।
মানিব্যাগের দিকে তাকিয়ে আপনার মনটা কেমন জানি আত্মতৃপ্তিতে ভরে উঠতে পারে পকেটে অবশিষ্ট থাকবে আরো ৫০ টাকা, এক কাপ রং চা পান করে আপনি বাসায় ঢুকে পড়তে পারেন।
খাবার-দাবার এবং খরচাপাতি
সদরঘাটে পৌঁছেই আপনি পেট পুজো করতে পারেন, সবজি, শুঁটকি ভর্তা আর ডাল দিয়ে।
৬০ (সবজি-শুঁটকি ভর্তা-ডাল-ভাত) +১৩০ (লঞ্চ ভাড়া) +৫০ (ডিম ভাজি-পুরোটা-চা) +১০০ (নৌকা ভাড়া) +১৩০ (লঞ্চ ভাড়া) +৩০ (বিস্কিট-কলা-চা) +২৫ (বাস ভাড়া) +৫ (রং চা) = ৫৩০টাকা