ঘুরে আসুন চালিবন্দর মহাশ্মশান দীপাবলি উৎসবে
কার্তিক মাসের অমাবস্যা তিথিতে সাধারণত শ্যামাপূজা বা কালীপূজা অনুষ্ঠিত হয়। হিন্দু পুরাণমতে, কালী দেবী দুর্গারই একটি শক্তি। কালীপূজা হচ্ছে শক্তির পূজা। জগতের সব অশুভ শক্তিকে পরাজিত করে শুভশক্তির বিজয়ের মধ্যেই রয়েছে কালীপূজার মূল ভাব।
সংস্কৃত ভাষার ‘কাল’ শব্দ থেকে কালী নামের উৎপত্তি। কালীপূজা হচ্ছে শক্তির পূজা। কালী দেবী তাঁর ভক্তদের কাছে শ্যামা, আদ্য মা, তারা মা, চামুণ্ডি, ভদ্রকালী, দেবী মহামায়াসহ বিভিন্ন নামে পরিচিত। এদিন হিন্দু সম্প্রদায় সন্ধ্যায় তাদের বাড়িতে ও শ্মশানে প্রদীপ প্রজ্বালন করে স্বর্গীয় পিতা-মাতা ও আত্মীয়স্বজনকে স্মরণ করেন। দুষ্টের দমন ও শিষ্টের লালনের মাধ্যমে ভক্তের জীবনে কল্যাণের অঙ্গীকার নিয়ে পৃথিবীতে আগমন ঘটে দেবী শ্যামা বা কালীর। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে শ্যামা দেবী শান্তি, সংহতি ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় সংগ্রামের প্রতীক। এ দিন সন্ধ্যায় পূজামণ্ডপে, বাড়িতে, শ্মশানে প্রদীপ প্রজ্বালন করা হয়। এ উৎসব তাই দীপাবলি নামেও পরিচিত।
সিলেট শহর থেকে খুব কাছের দূরত্বে চালিবন্দর মহাশ্মশান। প্রতি দীপাবলির প্রাক্কালে অনুষ্ঠিত হয় দীপাবলি উৎসব। হাজার হাজার মানুষ অংশ গ্রহণ করে এই অনুষ্ঠানে।
ইতিহাস
‘দীপাবলি’ নামটির অর্থ ‘প্রদীপের সমষ্টি’। এই দিন হিন্দুরা ঘরে ঘরে ছোট মাটির প্রদীপ জ্বালান। এই প্রদীপ জ্বালানো অমঙ্গল বিতাড়নের প্রতীক। বাড়িঘর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে সারা রাত প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখলে ঘরে লক্ষ্মী আসেন বলে উত্তর ভারতীয় হিন্দুরা বিশ্বাস করেন। বাংলার দীপান্বিতা কালীপূজা বিশেষ জনপ্রিয়। এই উৎসব সাড়ম্বরে আলোকসজ্জা সহকারে পালিত হয়। তবে এই পূজা প্রাচীন নয়। ১৭৭৭ খ্রিস্টাব্দে কাশীনাথ রচিত শ্যামাসপর্যাবিধিগ্রন্থে এই পূজার সর্বপ্রথম উল্লেখ পাওয়া যায়। কথিত আছে, নদীয়ার রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায় অষ্টাদশ শতকে তাঁর সব প্রজাকে শাস্তির ভীতিপ্রদর্শন করে কালীপূজা করতে বাধ্য করেন। সেই থেকে নদীয়ায় কালীপূজা বিশেষ জনপ্রিয়তা লাভ করে। কৃষ্ণচন্দ্রের পৌত্র ঈশানচন্দ্রও বহু অর্থব্যয় করে কালীপূজার আয়োজন করতেন। অমঙ্গল বিতাড়নের জন্য আতসবাজিও পোড়ানো হয়।বিশেষত উত্তর ভারতে দীপাবলির সময় নতুন পোশাক পরা, পরিবার ও বন্ধুবান্ধবদের মধ্যে মিষ্টি বিতরণের প্রথাও আছে।
যা দেখবেন
চালিবন্দর মহাশ্মশানের প্রবেশ দ্বার থেকে মঙ্গলপ্রদীপের আলোতে আলোকিত ভুবন। বছরের অন্য সময় অন্ধকার থাকলে ও দীপাবলির রাতে আলোকিত হয়ে ওঠে। শত শত মঙ্গল প্রদীপের আলোয় আলোকিত চারিধার। কেউ এসেছেন তাদের পূর্বপুরুষদের স্মৃতির উদ্দেশে মঙ্গল আলোক প্রজ্বালন করতে। আপনি চাইলে অংশ নিতে পারেন সবার সঙ্গে। আর যাঁরা ছবি তুলতে ভালোবাসেন তাঁদের জন্য অসাধারণ জায়গা। আলো আঁধারের মাঝে তুলতে পারবেন মনের মতো করে ছবি। তবে বন্ধুরা, আপনাকে যেতে হবে সন্ধ্যার পরপর।
যাবেন যেভাবে
প্রথমে ট্রেন অথবা বাস যোগে পৌঁছাতে হবে সিলেট শহরে। ভাড়া নেবে ট্রেন অথবা বাসে ৩০০ থেকে ১২০০ টাকা। আর সিলেট শহর থেকে খুব কাছেই চালিবন্দর মহাশ্মশান। রিকশাভাড়া নেবে মাত্র ৩০ টাকা রেলস্টেশন অথবা বাস টার্মিনাল থেকে।