ঘোরাঘুরি
রহস্যময় জাদুঘরে
![](https://ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2017/11/20/photo-1511175887.jpg)
পাখি, পতঙ্গ কিংবা সরীসৃপ ব্যবহার হচ্ছে শিক্ষা ও গবেষণার উপাদান হিসেবে। কোনোটি রাখা হয়েছে কাঁচের পাত্রে, ফরমালিনে ডুবিয়ে। আবার কোনোটি অবিকল জীবিত অবয়বে। জাদুঘরটিতে প্রায় পাঁচ শতাধিক প্রজাতি সংরক্ষিত আছে। যা বাংলাদেশের অন্য কোনো প্রাণিবিদ্যা জাদুঘরে নেই। আর জাদুঘরটিতে ঢুকলে দেখা মিলবে, রঙিন পাখার ময়ূর তার সামনে পেঁচানো ফনা তোলা বিষধর সাপ আর পাশেই কুমির। সঙ্গে রয়েছে পশুপতি সিংহ আর হাজার রকমের মাছ, সামুদ্রিক কোরাল, শঙ্খ, শামুক, ঝিনুক। একসঙ্গে এত প্রজাতির প্রাণীর দেখা মেলা কল্পনাতীত।
এগুলোর মধ্যে অনেক প্রাণী এরই মধ্যে অবলুপ্ত হয়েছে। কিন্তু অতি সহজেই এসব বিলুপ্তপ্রায় দুর্লভ প্রাণীর দেখা মেলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ‘অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমান মেমোরিয়াল মিউজিয়ামে’।
জন্মকথা
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রয়াত শিক্ষক মুস্তাফিজুর রহমানের উদ্যোগে ১৯৬৯ সালে জাদুঘরটি প্রতিষ্ঠিত হয়। তাঁর নামানুসারেই এটির নাম রাখা হয়েছে ‘অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমান মেমোরিরাল মিউজিয়াম’। জাদুঘরটি এতটাই সমৃদ্ধশালী যে এটিকে বাংলাদেশে প্রাণিবিদ্যার ক্ষেত্রে অদ্বিতীয় জাদুঘর বলা হয়ে থাকে।
যা দেখতে পাবেন
এটি এমনই এক জাদুঘর যেখানে কুমির, ঘড়িয়াল, অজগরসহ নানা সাপ, ময়ূরসহ নানা পাখি, বানর প্রভৃতি বহু প্রাণীর মমি করা দেহাবশেষ রাখা আছে। এগুলো আপনি জাদুঘরটির চারদিকে ঘুরে ঘুরে দেখতে পাবেন। তবে প্রাণীগুলো ঠিক কবে ইহলোকের মায়া ত্যাগ করেছে, তা আপনি জানতে ও বুঝতে পারবেন না। তবে প্রাণীগুলো দেখলে আপনার কাছে এতটাই জীবন্ত মনে হবে যে আপনি বুঝতে পারবেন না।
এ ছাড়া জাদুঘরটি আপনি দেখতে পাবেন- পরিফেরা পর্ব থেকে কর্ডাটা পর্যন্ত প্রায় ৪৪২ প্রজাতির এক হাজার ৫৪৩টি প্রাণীর প্রক্রিয়াজাত করে সংরক্ষণ করা দেহ। এদের মধ্যে পাখি, সরীসৃপ, স্তন্যপায়ী সব ধরনের প্রাণীই রয়েছে। এ ছাড়া সামুদ্রিক মাছ, বিরল প্রজাতির জীবন্ত ফসিল পেট্রোমাইজন ও মেক্সিন, ১৯ প্রজাতির ৩৩টি কোরাল এবং ৪৫ প্রজাতির মলাস্কাল সেলও আছে। এখানে মানুষের কঙ্কালের পাশাপাশি রয়েছে হাতি ও ঘোড়ার কঙ্কালও।
এসব প্রাণীর মধ্যে ১৪২ প্রজাতির ফসিল রয়েছে যা বর্তমানে দুর্লভ। এখানে কিছু প্রাণীকে শুকনো অবস্থায় আবার কিছু সংরক্ষণ করা হয়েছে ফরমালিন দিয়ে। এ ছাড়া শুধু রাজশাহী নগর ও সংলগ্ন এলাকা থেকে এ পর্যন্ত ৯৬ প্রজাতির মাছ সংগ্রহ করা হয়েছে।
সময়সূচি ও দর্শনার্থীর ফি
সপ্তাহে শুক্র ও শনিবার বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকে। এই দুই দিন ছাড়া বাকি পাঁচদিন আপনি জাদুঘরটি দেখতে যেতে পারেন। সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত সব সময় জাদুঘরটি খোলা থাকে। জাদুঘরটি দেখার জন্য দর্শনার্থীদের কাছ থেকে কোনো ফি নেওয়া হয় না।
যেভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে সড়ক অথবা রেলপথে আপনাকে প্রথমেই রাজশাহীতে যেতে হবে। সড়কপথে রাজশাহীতে যাওয়ার জন্য আপনি দিনরাত ২৪ ঘণ্টাই বাস পাবেন। এসি ছাড়া হানিফ, শ্যামলী, ন্যাশনাল এবং দেশ পরিবহন জনপ্রতি এ পথে ভাড়া নেয় ৪৫০ টাকা। এ ছাড়া আরামদায়ক সেবার জন্য ন্যাশনাল, দেশ এবং হানিফ পরিবহন ৭০০ থেকে এক হাজার টাকা জনপ্রতি ভাড়া নিয়ে থাকে। আর ট্রেনে যাওয়ার জন্য আপিন পাবেন তিনটি ট্রেন। ঢাকা থেকে রাজশাহী যেতে চাইলে সকাল ৬টায় ধূমকেতু এক্সপ্রেস, দুপুর ২টা ৪০ মিনিটে সিল্কসিটি এক্সপ্রেস এবং রাত ১১টা ১০ মিনিটে পদ্মা এক্সপ্রেস পাওয়া যাবে। ঢাকা থেকে রাজশাহীর ট্রেন ভাড়া পড়বে স্পেশাল এসি ১১৭৩ টাকা, এসি সিটে ৭৮২ টাকা, শোভন চেয়ার ৩৪০ টাকা।
থাকার জায়গা
রাত যাপন করার জন্য রাজশাহীতে অনেক ভালো জায়গা রয়েছে। এ শহরে থাকার জন্য বিভিন্ন মানের বেশ কিছু হোটেল আছে। এসব হোটেলে ২০০ থেকে চার হাজার টাকায় বিভিন্ন মানের রুম পাওয়া যাবে। অন্যতম হোটেলগুলো হলো : রাজশাহী চিড়িয়াখানার সামনে পর্যটন মোটেল, সাহেববাজারে হোটেল মুক্তা ইন্টারন্যাশনাল, বিন্দুর মোড় রেলগেটে হোটেল ডালাস ইন্টারন্যাশনাল, গণকপাড়ায় হোটেল নাইস ইন্টারন্যাশনাল, মালোপাড়ায় হোটেল সুকর্ণা ইন্টারন্যাশনাল, সাহেববাজারে হামিদিয়া গ্রান্ড হোটেল, শিরোইলে হকস ইন, লক্ষ্মীপুর মোড়ে হোটেল গ্যালাক্সি, সাহেববাজারে হোটেল নিউ টাউন ইন্টারন্যাশনাল।