ঘোরাঘুরি
চালন্দা গিরিপথে একদিন
নয়নাভিরাম সৌন্দর্যের লীলাভূমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। এক হাজার ৭৫৪ একর আয়তনের এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ এলাকাজুড়ে বনাঞ্চল। এখানে যেমন রয়েছে বৈচিত্র্যময় বন্যপ্রাণী, তেমনি রয়েছে উঁচু-নিচু পাহাড়। কখনো এসব পাহাড়ের কোলজুড়ে বয়ে গেছে পাহাড়ি ছড়া, কখনো বা উৎপন্ন হয়েছে ঝর্ণা ও গিরিপথ।
এমনই এক অজানা গিরিপথের সন্ধান মিলেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০১১ সালে জানাজানি হয় প্রকৃতির বিস্ময় ‘চালন্দা গিরিপথ’। বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ভ্রমণপিপাসু শিক্ষার্থী ওই গিরিপথের ‘আবিষ্কারক’। এর পর থেকে চবির অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীদের খাতায় যুক্ত হয় চালন্দা গিরিপথ। প্রতিদিনই অনেকে দলবেঁধে ঘুরে আসেন নৈসর্গিক সৌন্দর্যের আধার ওই গিরিপথে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ঝুপড়ির পশ্চিমে পাহাড়ি ছড়ার পানি দিয়ে ৫০ মিনিট পশ্চিমে হাঁটার পর ছাড়ার বাঁয়ে বা দক্ষিণে হাঁটলে এই এ দৃশ্য চোখে পড়ে। মাথার ওপর রোদ, পাহাড়ের গাঁ বেয়ে নেমে আসা শীতল পানি অন্য রকম এক অনুভূতি এনে দেয়। এখানে দুটি পথ রয়েছে। একটি মূল চালন্দায় যাওয়ার পথ, অন্যটি সীতাকুণ্ড পর্যন্ত যাওয়া পথ। তাই সঠিক পথের ধারণা না থাকলে ভুল পথে হাঁটতে হাঁটতে সীতাকুণ্ড চলে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। গিরিপথের ভেতরে প্রবেশ করলে শরীরটা কেমন যেন হিমশীতল হয়ে ওঠে। দুই পাহাড়ে হাত ও পায়ের সমন্বয়ে এগিয়ে যেতে হয় সামনে অনেকটা পথ। দুপাশে পাহাড়ের কারুকাজ। যেন শিল্পীর তুলিতে আঁকা এক অনবদ্য সৃষ্টি। এই লোমহর্ষকপূর্ণ গিরিপথের ভেতরে ঢুকলে আশপাশ থেকে শোনা যায় পাখির কিচিরমিচির শব্দ।
গিরিপথে প্রায় আধকিলোমিটার ঝুঁকিহীনভাবে যাওয়া সম্ভব হলেও এরপর একটু ভেতরে প্রবেশ করতেই অনুভব হবে ভুতুড়ে পরিবেশ। আরো ভেতরে যাওয়াটাই একরকম দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে। ক্ষণে ক্ষণে বাড়তে থাকে ঝুঁকির মাত্রাও। একটু আনমনা হলেই চরম বিপদের আশঙ্কা। তবে বিপদের আশঙ্কা থাকলেও আনন্দের কমতি হয় না। তাই পিচ্ছিল এই গিরিপথ ভ্রমণে সতর্ক থাকতে হয় অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয়দের।
প্রস্তুতি
যাঁরা যেতে চান, তাঁরা অবশ্যই ১০ জনের অধিক দল নিয়ে যাবেন এবং একটা করে লাঠি রাখবেন। যাওয়ার সময় হালকা কাপড় নিয়ে যাওয়া ভালো। কারণ, কিছু কিছু জায়গায় হাঁটু পরিমাণ পানি রয়েছে সেখানে।
পথে যা দেখবেন
ছড়ার পানিতে হাঁটতে হাঁটতে লক্ষ করবেন, পাহাড়ের গাঁ বেয়ে নেমে আসছে বিশুদ্ধ পানি, যা আপনি পান করতে পারবেন। এই পানি পান করে পাহাড়ে চাষাবাদকারী কৃষকরা তাঁদের তৃষ্ণা মেটান। এ ছাড়া যাত্রাপথে দেখা হবে পাহাড় থেকে কাঠ কেটে আনা কাঠুরিয়ার সঙ্গে। কখনো বা দেখা মিলবে সমতল এলাকায় চাষাবাদে ব্যস্ত কৃষকের। শুধু তাই নয়, ভাগ্য ভালো থাকলে দেখা পেতে পারেন পাহাড়ে স্থায়ী বাসিন্দা সাপসহ বিভিন্ন সরীসৃপ প্রাণীর।
সতর্কতা
চালন্দাগিরি পথে যেমন পদে পদে বিপদ অপেক্ষা করে, ঠিক তেমন যাওয়ার সময় ভাগ্য খারাপ থাকলে আপনি পড়ে যেতে পারেন ছিনতাইকারীর খপ্পরে। তাই যাওয়ার আগে অবশ্যই এ বিষয়ে সতর্ক নজর রাখবেন।