ঘোরাঘুরি
তাজের প্রেমে...
![](https://ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2017/12/05/photo-1512467978.jpg)
তাজমহল এক প্রেমের নাম। প্রেম আর ভালোবাসায় ভর করেই তাজমহলের গড়ে ওঠা।সুতরাং আর দেরি কেন?ঘুরে আসুন আগ্রার তাজমহল।
আপনি যখন কলকাতা থেকে ট্রেনে বা প্লেনে করে আগ্রায় নামবেন, তখন থেকেই তাজমহলের একটা অন্য রকম অনুভূতি আপনাকে নাড়া দেবে। এরপর হোটেলে একটু বিশ্রাম নিয়ে আপনি যখন তাজমহল দেখতে বের হবেন নানা রকম রোমাঞ্চকর অনুভূতি খেলা করবে আপনার ভেতর। অনেক দিনের স্বপ্ন দেখা, না দেখে ভালোবেসে ফেলা কারো সাথে অনেক অপেক্ষার পর, অনেক ত্যাগের বিনিময়ে প্রথম দেখা হওয়ার অনুভূতির মতো।
টিকেট কেটে লাইনে দাঁড়ানোর পর, হালকা তল্লাশির শেষে যখন তাজমহলের ফটকে প্রবেশ করবেন, হয়তো ঢুঁকেই হতাশ হয়ে পড়তে পারেন তাজমহল দেখতে না পেয়ে। কারণ সামনে বিশাল সবুজ ঘাসের লন আর লাল পুরোনো আমলের স্থাপনা। ভাববেন ভুল জায়গায় এসে পড়েছেন বোধহয়। কিন্তু না, একটু সামনে এগিয়ে দুই পাশের সবুজ লনের মাঝখানে দাঁড়াতেই দেখতে পাবেন বিশাল লোহার গেট। সেই মুঘল আমলের। যে গেটের ভিতর দিয়েই আপনি প্রথম দর্শন পাবেন প্রিয় তাজমহলের। দূরে, ধবধবে সাদা, শ্বেত পাথরে সেজে দাঁড়িয়ে আছে যমুনার পাড়ে। আর অপেক্ষা করা আপনার পক্ষে সম্ভব হবে না, তাই ঢুকে পড়ুন ঝটপট। বিশাল গেটের ভেতর দিয়ে ওপাশে গিয়েই আপনি দেখা পাবেন এত দিনের অপেক্ষার, আপনার সামনে শ্বেত পাথরে সেজে, হেসে দাঁড়িয়ে আছে প্রিয় তাজমহল। সামনে বিশাল বিশাল ফুলের বাগান, সবুজের মখমলের মতো মিহি ঘাসের গালিচা, নানা রকম ছোট-বড়-মাঝারি পাতা বাহারের সাঁজে সেজে আছে পুরো তাজমহলের খোলা আঙিনা। যত ধীরে পারুন হাঁটুন। ধীরে ধীরে চারপাশের ফুল বাগান, ফোয়ারা, বসার বেদী, ছবি তোলার বেঞ্চি, শান বাঁধানো সিঁড়ি, বর্ণিল সবকিছুর খুব ধীরে ধীরে উপভোগ করতে করতে এগোতে থাকুন তাজমহলের মূল আঙিনায়। আপনার একদম সামনেই দাঁড়িয়ে আছে আপানার অনেক দিনের স্বপ্ন দেখা তাজমহল ।
উঠে পড়ুন তাজমহলের বেদিতে। আগে চারপাশটা ঘুরে ঘুরে দেখুন সময় নিয়ে। চলে যান তাজমহলের পিছনে যমুনার পাড়ে দাঁড়ানো তাজমহলের দেয়ালের কাছে। যেখানে ধীর লয়ে বয়ে চলেছে শুষ্ক যৌবনা যমুনা। যমুনার ওপারে ভঙ্গুর কালো তাজমহলের অসম্পূর্ণ দেয়ালের ধ্বংসাবশেষ আপনাকে বুঝিয়ে দেবে শাহজাহানের শেষ জীবনের দিনের কথা। কেমন কেটেছিল তাঁর দূরের আগ্রা ফোর্টে বন্দিদশায়। তাজমহলের দুই পাশে রয়েছে আরো দুটি অনন্য স্থাপনা, একটা অতিথিশালা আর একটি মসজিদ। সময় থাকলে ঘুরে দেখতে পারেন ওগুলোও। এরপর পুরো তাজমহলের বাইরের অংশ ভালো করে দেখা হলে যেতে পারেন তাজমহলের ভিতরে আছে মমতাজের সমাধি আর শাহজাহানের আবেগের, ভালোবাসার আর অমর প্রেমের ছড়াছড়ি। প্রতিটি পাথরে, পাথরের খাঁজে, ভাঁজে, নানা আসবাব আর ঐতিহ্যের সবকিছুতে। মমতাজের প্রতি শাহজাহানের অনিঃশেষিত ভালোবাসার পরশ।
এরপর, তাজমহল ঘুরে দেখা শেষ হলে, যখন ফেরার পথ ধরবেন, দেখবেন কেমন একটা আকর্ষণের আপনি ঠিক হেঁটে যেতে পারছেন না বা আপনার মন ফিরে যেতে চাইছে না। একটা অদ্ভূত বাঁধনে, মায়ায়, টানে আর আবেগে বাঁধা পড়ছেন যেন। ফিরে যেতে যেতেই মন খারাপ হয়ে যাবে। এমন ভালোলাগার আর ভালোবাসার জায়গা ছেঁড়ে চলে যাওয়ার ব্যথায়। তবুও যান, একবার ঘুরে আসুন, স্পর্শ করে দেখুন প্রিয় তাজমহলকে তার বিশালতা, ভালোবাসা আর অসীম আবেগকে।
ফিরে এসে যখন স্মৃতিচারণা করবেন বা নিজেদের ছবি দেখবেন, দেখবেন আবারও প্রেমে পড়েছেন।
কীভাবে যাবেন : ঢাকা থেকে আগ্রার তাজমহল যাওয়া আজকাল আর তেমন ককোনো কঠিন কাজ নয়। বেশ কয়েকভাবেই যাওয়া যায় আগ্রাতে। ঢাকা থেকে কলকাতা হয়ে প্লেনে আগ্রা বা ঢাকা থেকে দিল্লি প্লেনে, দিল্লি থেকে ট্রেন, বাস বা ট্যাক্সিতে আগ্রা। অথবা ঢাকা থেকে কলকাতা বাস বা ট্রেনে গিয়ে কলকাতা থেকে আগ্রা প্লেনে। সবচেয়ে কম খরচে যাওয়ার উপায় হচ্ছে ঢাকা থেকে বাস বা ট্রেনে কলকাতা, কলকাতা থেকে ট্রেনে আগ্রা। থাকার হোটেল পাবেন ১০০০ টাকা থেকে যত দামি চান। আর খাবার খরচ ভারতের অন্যান্য শহরের মতোই স্বাভাবিক ও সাধ্যের মধ্যে।