ছুটির দিনে
একাত্তরের স্মৃতিচিহ্ন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর
বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের দীর্ঘ সংগ্রামে অকুতোভয় বাঙালির বিপুল আত্মদান ও মুক্তির স্বপ্নকে বহন করে চলছে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর । যারা একাত্তরের যুদ্ধ দেখেনি তাঁরা কেউই মুক্তিযুদ্ধের সেই নৃশংসতা দেখেননি। মুক্তিযুদ্ধ নামটা শুনলেই আমাদের মাথায় বইয়ে ও লোকমুখে শোনা সেই গল্প ভেসে আসে। তাই একাত্তরের চেতনায় উজ্জীবিত করতে নতুন প্রজন্মের কাছে স্মৃতিচিহ্ন হয়ে আছে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর।
একাত্তরের চেতনাকে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ধরে রাখতে নির্মাণ করা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরটি। দৃষ্টিনন্দন এ জাদুঘরের প্রবেশপথেই প্রথমেই নজর কাড়বে পানির ভেতরে জ্বলজ্বল করে জ্বলতে থাকা সেই অম্লান শিখাটি। ঠিক তার ওপরে তাকালেই চোখে পড়বে দেয়ালে খোদিত কবিতার উজ্জ্বল পঙক্তিমালা—‘সাক্ষী বাংলার রক্তভেজা মাটি/সাক্ষী আকাশের চন্দ্রতারা/ভুলি নাই শহীদের কোনো স্মৃতি/ভুলব না কিছুই আমরা’। ভবনটির বাইরের অংশে ওপরের দিকে তাকালে দেখতে পাবেন সত্যিকারের যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টার; যা আমাদের মুক্তিযুদ্ধে ব্যবহার করা হয়েছিল।
ঢাকার ভেতরে শিশুদের নিয়ে কম সময়ের মধ্যে ঘুরে আসতে পারেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর থেকে । মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্যশৈলী সময়কে করে তুলবে আরো উপভোগ্য। অন্যদিকে আপনাকে কল্পনায় নিয়ে যাবে আমাদের ঐতিহ্য, সংগ্রামের কাছে। তো চলুন পরিবারসহ একদিন কিছুটা সময় ঘুরে আসি মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে।
যা আছে দেখার
প্রায় দুই বিঘা জায়গার ওপর নির্মিত এই ভবনটি এক লাখ ৮৫ হাজার বর্গফুটের ওপর নির্মাণ করা হয়েছে। নয়তলা ভবনটিতে রয়েছে ছয়টি গ্যালারি, যার মধ্যে চারটি খোলা আছে। এগুলো প্রতিটি গ্যালারিতে রয়েছে ইতিহাসের অন্যতম অধ্যায় ও নিদর্শন। বাকি দুটি গ্যালারির নির্মাণকাজ চলছে।
প্রথম গ্যালারিটির শিরোনাম রাখা হয়েছে, আমাদের ঐতিহ্য, আমাদের সংগ্রাম। এখানে রয়েছে প্রাচীন যুগের ইতিহাস, ইংরেজ শাসন আমল থেকে ভাষা আন্দোলন ও বাঙালি সংস্কৃতির নিদর্শন।
দ্বিতীয় গ্যালারিটির শিরোনাম, আমাদের অধিকার, আমাদের অহংকার। ১৯৭১ সালের সকল ঘটনাবলি থেকে শুরু করে ধারাবাহিক ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে। বাঙালির ওপর পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর নিপীড়ন-ধ্বংসযজ্ঞ ও বাঙালির প্রতিরোধের ইতিহাস নানা উপকরণের মধ্য দিয়ে তুলে ধরা হয়েছে
তৃতীয় গ্যালারিটির শিরোনাম, আমাদের যুদ্ধ, আমাদের মিত্র। যা আমাদের মুক্তিযুদ্ধে আর মুক্তিযোদ্ধাদের নানা ঘটনা, ব্যবহারের নানা অস্ত্র থেকে শুরু করে ব্যবহৃত নানা জিনিসপত্র ।
চতুর্থ গ্যালারিটির শিরোনাম, আমাদের জয়। একাত্তরের ১ আগস্ট থেকে বাঙালির চূড়ান্ত বিজয় পর্যন্ত নানা সময়ের স্মৃতি রয়েছে এখানে।
নতুন প্রজন্মকে নানা বিষয়ে জানাতে রয়েছে আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়া। এ ছাড়া বিশাল ভবনটিতে রয়েছে আড্ডাঘর, উন্মুক্ত মঞ্চ, পাঠশালার ব্যবস্থা।
যেভাবে যাবেন
ঢাকার রাজধানীর আগারগাঁওতে এফ ১১/ এ-বি, সিভিক সেক্টরে রয়েছে জাদুঘরটি। খুব সহজেই বাস, সিএনজি বা রিকশায় করে চলে আসতে পারেন। সহজ হবে, আগারগাঁও পঙ্গু হাসপাতালের ঠিক উল্টো দিকে কাউকে জিজ্ঞেস করলেই দেখিয়ে দেবে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর।
প্রবেশমূল্য ও সময়সূচি
অপ্রাপ্তবয়স্ক শিশুদের জন্য ১০ টাকা এবং প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য জনপ্রতি ২০ টাকা প্রবেশমূল্য করা হয়েছে।
জাদুঘরের গ্রীষ্মকালীন সময়সূচি সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত সপ্তাহে ছয়দিন খোলা থাকে। শীতকালীন সময়সূচি সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। রোববার সাপ্তাহিক ছুটি।