ছুটির দিনে
বোস কেবিনে একদিন
কালের সাক্ষী নারায়ণগঞ্জ শহরের বোস কেবিন। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ এমনকি স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে বোস কেবিনের অবদান স্মরণীয় হয়ে আছে। নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর মতো অনেক নেতা এই বোস কেবিনের চা পানে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলেছেন। প্রায় ৯৬ বছর ধরে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে আছে বোস কেবিনের চায়ের যশ ও সুনাম। বন্ধুরা নগরজীবনের ক্লান্তি যারা দূর করতে চান তারা খুব সহজেই ঘুরে আসতে পারেন এই বোস কেবিনে। আর খরচ মাত্র ৭২ টাকা
শুরুর কথা
নারায়ণগঞ্জ ১ ও ২ নম্বর রেল গেটের মাঝামাঝি, ফলপট্টির কাছাকাছি রেললাইনের পাশেই ১৯২১ সালে একটি টং ঘরে এই বোস কেবিনের যাত্রা শুরু হয়। এর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন নৃপেন্দ্র চন্দ্র বসু। তিনি ভুলুবাবু নামেই বেশি পরিচিত। কেবিনের প্রতিষ্ঠাতা নৃপেন্দ্র চন্দ্র বসু ওরফে ভুলু বোস বিক্রমপুরে জন্মগ্রহণ করেন। যিনি ১৯২০ সালে এন্ট্রাস পাস করেন। সে সময় তিনি দারোগার চাকরি পেয়েও তা করেননি। তাঁর চিন্তায় তখন ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের পর বাঙালিদের মধ্যে এক গোপন সশস্ত্র আন্দোলন গড়ে ওঠে। ওই স্বদেশি আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন ২১ বছরের যুবক ভুলু বোস। কলকাতা থেকে সিদ্ধান্ত হওয়া ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের চিঠি আদান-প্রদানের বাহক ছিলেন তিনি। কিন্তু এ চিঠি আদান-প্রদান নিয়ে একটি সমস্যা দেখা দেয়। কীভাবে কলকাতার সেই চিঠি তিনি নির্দিষ্ট ঠিকানায় পাবেন তা নির্ধারিত ছিল না। এ সমস্যার সমাধানের জন্য ১৯২১ সালে নারায়ণগঞ্জ শহরের ১ নং রেলস্টেশন ও স্টিমার ঘাটের কাছে বোস কেবিন প্রতিষ্ঠিত হয়। এই কেবিনের ঠিকানায় ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের চিঠি আসত। ১৯৩৭ সালে নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু নারায়ণগঞ্জ এলে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে যায়। খবর পেয়ে দাদা ভুলুবাবু, কড়া ও হালকা লিকারের দুই কেতলি চা বানিয়ে ছোটেন নেতাজির কাছে। সেই চা খেয়ে খুবই খুশি হয়েছিলেন নেতাজি। আশীর্বাদ করে বলেছিলেন, ‘তুমি একদিন ভালো করবে, বড় হবে।’
খাবারের মেন্যু
বোস কেবিনে সকালের নাস্তায় পাওয়া যায় পরোটা, দাম ৫ টাকা। ডাল ও হালুয়া ১০ টাকা। ডিমের ৬ রকমের পদ ছাড়াও খাসি ও মুরগির মাংস। দুপুর ১২টা থেকে পাওয়া যায় আলুরচপ ১৫ টাকা। পোলাও ৫০ টাকা। মোরগ পোলাও ৮০ টাকা। কারি ৯০ টাকা। মাটন কাটলেট ৫৫ টাকা। চিকেন ফ্রাই ৭৫ টাকা এখানে দুপুরে ভাত বিক্রি হয় না।
নেতাজি যে চা খেয়ে প্রশংসা করেছিলেন, কড়া লিকারের সেই চা বড় কাপে পান করতে পারবেন মাত্র ১৫ টাকায়। সবসময় এখানে চা পাওয়া যায়। অনেকে এখানে আসে কেবল কাটলেটের স্বাদ নিতে। বোস কেবিনের কাটলেট এক কথায় অসাধারণ। প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকে বোস কেবিন। শুরু থেকেই এই নিয়মে চলছে। ছুটির দিনগুলোতে এখানে তিল ধারণেও জায়গা থাকে না।
ঢাকা থেকে যেভাবে বোস কেবিনে আসবেন
গুলিস্তান থেকে উৎসব, বন্ধন, বিআরটিসি বা শীতল বাসে সরাসরি নারায়ণগঞ্জের কালীরবাজার নেমে রিকশায় বা হেঁটে চেম্বার রোডে গেলেই পেয়ে যাবেন বোস কেবিন। আপনার বাসে ভাড়া লাগবে ৩৬ থেকে ৫৫ টাকা। আপনি চাইলে ট্রেনে কমলাপুর থেকে সরাসরি নারায়ণগঞ্জে আসতে পারেন জনপ্রতি ১৫ টাকা খরচ করতে হবে অথবা আপনি চাইলে ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়েও আসতে পারেন।