ছুটির দিনে
ভিমরুলির ভাসমান পেয়ারা বাজারে একদিন
বেড়াতে কে না ভালোবাসে? কর্মব্যস্ত নাগরিক জীবনের একঘেয়েমি দূর করতে ভ্রমণের কোনো বিকল্প নেই। অবারিত সবুজের মধ্যে একটুখানি প্রাণভরে নিশ্বাস নিতে মানুষ বের হয় তার চেনা গণ্ডি ছেড়ে। ভ্রমণপিপাসু মানুষ প্রতিনিয়ত খুঁজে ফেরে নতুন নতুন জায়গা। তাই আপনি ও ঘুরে আসতে পারেন এমন একটি জায়গা থেকে। প্রকৃতির নিবিড় ঘনিষ্ঠতা, জলে নৌকায় ঘুরে আসতে পারেন ব্যাংকক বা কলকাতার মতো বাংলাদেশের সবচেয়ে বৃহত্তম ভাসমান পেয়ারা বাজার থেকে।
কোথায় অবস্থিত এবং পরিচিতি :
পেয়ারা বাগানটি অবস্থিত বরিশালের তিন জেলা ঝালকাঠি, বরিশাল, পিরোজপুরের সীমান্তবর্তী এলাকায়। ২৬টি গ্রামের প্রায় ৩১ হাজার একর জমির ওপর গড়ে উঠেছে এই পেয়ারা বাগান। এ হাট বছরজুড়ে বসলেও প্রাণ ফিরে পায় পেয়ারার মৌসুমে। বরিশালের ভিমরুলি গ্রামের আঁকাবাঁকা ছোট্ট খালজুড়ে সপ্তাহের প্রতিদিনই সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে বিকিকিনি। পেয়ারাবোঝাই শত শত নৌকা। মজার বিষয়, এখানে আসা সব নৌকার আকার আর ডিজাইন প্রায় একই রকম। মনে হয় যেন একই কারিগরের তৈরি সব নৌকা। ভিমরুলির বাজারের সবচেয়ে ব্যস্ত সময় হলো দুপর ১২টা থেকে বিকেল ৩টা।
যেভাবে যাবেন :
এ অঞ্চলটিতে অনেকভাবে যাওয়া যায়। আপনি চাইলে নৌ, স্থল বা আকাশপথে যেতে পারেন। সবচেয়ে ভালো হলো নদীপথ, অর্থাৎ লঞ্চে যাওয়া।
১. নৌপথ : ঢাকা-বরিশাল-স্বরূপকাঠি-ঢাকা
সদরঘাট থেকে প্রতিদিন রাত ৮টায় বরিশালের উদ্দেশে ছেড়ে যায় অনেকগুলো বিলাসবহুল লঞ্চ। কোনো একটা পূর্ণিমার রাতে উঠে পড়লে বোনাস হিসেবে পাবেন মনোরম জ্যোৎস্না বিলাস। এর জন্য আপনাকে ভাড়া গুনতে হবে ভিআইপি কেবিনের জন্য ৫০০০ থেকে ৭০০০ টাকা, সেমি ভিআইপি কেবিন ৪০০০ থেকে ৪৫০০ টাকা, ফ্যামিলি কেবিন ২৫০০ থেকে ৩৫০০ টাকা, ডাবল কেবিন ১৭০০ থেকে ১৮০০ টাকা, সিঙ্গেল কেবিন ৯০০ থেকে ১০০০ টাকা এবং ডেকে জনপ্রতি ২৫৫ টাকা।
আপনাকে সকাল ৭টায় বরিশাল নামিয়ে দেবে। সেখান থেকে নাশতা করে লেগুনা ঠিক করে ফেলুন স্বরূপকাঠি যাওয়ার জন্য। এক লেগুনায় ১৪ জন যাওয়া যায়। রিজার্ভ ভাড়া পড়বে ৪০০-৫০০ টাকা। ছোট গ্রুপ সিএনজি টাইপ টেম্পো ভাড়া করে নিন ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা দিয়ে। এরপর ১টা ৩০ মিনিট জার্নির পর পৌঁছে যাবেন স্বরূপকাঠি। সেখান থেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকা ভাড়া করে নিন সারা দিনের জন্য। ভাড়া পড়বে ২০০০ থেকে ৩০০০ টাকা। আকারভেদে প্রতিটি নৌকায় ১৫ থেকে ২০ জন মানুষ ধরে। কিছু ছোট নৌকাও পাওয়া যায় তবে খুব কম।
কোন লঞ্চে যাবেন :
ঢাকা-বরিশাল রুটে রেয়েছে অসংখ্য বিলাসবহুল লঞ্চ। তার মধ্যে প্রধান হলো :
এমভি সুরভী-৯ (০১৭১১৯৮৩৫৩৪), এমভি পারাবত-১১ (০১৭৮৯৪৪৮০৮৮), এমভি সুন্দরবন-১০ (০১৭৫৮ ১১৩০১১), এমভি কীর্তনখোলা-১০ (০১৭৭৮৭৮৬৯৫৪), এমভি কীর্তনখোলা-২ (০১৭১১৩৪৪৭৪৭)।
২. স্থলপথ :
ঢাকার গাবতলী থেকে সাকুরা পরিবহনের এসি বাসও যায় বরিশাল। ভাড়া ৮০০ টাকা। এ ছাড়া ‘হানিফ’, ‘ঈগল’, ‘সুরভী’ ও ‘সাকুরা’ পরিবহনের নন-এসি বাসও যায়, ভাড়া ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা। এ ছাড়া ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে বরিশাল যাওয়ার জন্য রয়েছে ‘সুগন্ধা’ পরিবহনের বাস।
ঘোরাঘুরি :
একটা ছাউনি লাগিয়ে নিতে বলবেন ট্রলারওয়ালাকে। তারপর বলবেন, প্রথমেই সরাসরি ভিমরুলি নিয়ে যেতে। কারণ ভিমরুলি হলো এ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় ভাসমান পেয়ারা বাজার। ঘণ্টা দেড়েক সময় লাগবে তাতে। ভিমরুলি গিয়ে ঘণ্টাখানেক ঘুরে দেখুন ওখানকার বেচাকেনা। ১টা বাজলেই সরে পড়ুন এখান থেকে। এরপর বোটওয়ালাকে বলুন আটঘর স্কুলের কাছে নৌকার বাজারে নিয়ে যেতে। এরপর চলে যান কুড়িয়ানা বাজারে। সেখানে দুপুরের খাবার খেয়ে বোটে উঠুন। এবার বোটওয়ালাকে বলুন বানারীপাড়া/ নেছারাবাদ নামিয়ে দিতে। দুই জায়গাতেই বাস বা অটো পাবেন বরিশালের। বাসে বা অটোতে করে গুঠিয়া নেমে যান। ঘুরে দেখুন গুঠিয়া মসজিদ। ওখানে গুঠিয়ার সন্দেশ খেতে ভুলবেন না। এরপর অটোতে দুর্গাসাগর দীঘি।
কোথায় খাবেন :
কুড়িয়ানা বাজারে সকাল সন্ধ্যা হোটেল নামে একটি দোকান আছে (স্থানীয়ভাবে বৌদির হোটেল নামে পরিচিত)। এর রান্না খুবই ভালো। পাঁচ থেকে সাতজন গেলে আগে বলার দরকার নেই। বড় গ্রুপ গেলে অর্ডার দিয়ে যাবেন। বৌদির রেস্টুরেন্টে বসে তাজা মাছ দিয়ে দুপুরে খেয়ে নিন।
কোথায় থাকবেন :
যদিও এই ট্যুরে থাকার প্রয়োজন হয় না। সারা দিন ঘুরে আপনি রাতে লঞ্চ ধরে ফিরে আসতে পারেন। তারপর থাকতে চাইলে জেলা শহরের সাধারণ মানের হোটেলই একমাত্র ভরসা। ভালো কোনো হোটেলে থাকতে চাইলে যেতে হবে বরিশাল সদরে।
সতর্কতা :
যেহেতু পুরো ভ্রমণটা নদীকেন্দ্রিক, সেহেতু কিছু সতর্কতা অবলম্বন জরুরি। অবশ্যই রেইনকোট, লাইফ জ্যাকেট নিয়ে আসবেন। মোবাইল টাকা-পয়সা রাখার জন্য ওয়াটারপ্রুফ ব্যাগ বা পলিথিন নিয়ে আসলে ভালো হয়। জায়গাটা একটু প্রত্যন্ত, তাই জরুরি কিছু ওষুধ নিতে ভুলবেন না। দয়া করে যেখানে সেখানে ময়লা ফেলে পরিবেশ নষ্ট করবেন না।