ঈদের ছুটিতে
১৩৩০ টাকায় লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে
সিলেটের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান প্রকৃতিপ্রেমী আর ভ্রমণ পিয়াসীদের জন্য আদর্শ এক স্থান বলা চলে। খুব কম খরচে, প্রায় বিনা পরিশ্রমে আপনি এখান থেকে নিতে পারবেন প্রকৃতির অপূর্ব সান্নিধ্য। আর আসছে ছুটির দিনগুলোতে সহজেই ঘুরে আসতে পারেন লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে।
যা দেখবেন
মূলত জীববৈচিত্র্য এ বনের প্রধান আকর্ষণ। জীববৈচিত্র্যে ভরপুর এই উদ্যানে দেখা মেলে নানা প্রজাতির বিড়ল পশুপাখির। এই উদ্যানে ৪৬০ প্রজাতির দুর্লভ উদ্ভিদ ও প্রাণী রয়েছে। তারমধ্যে চাপালিশ, সেগুন, আগর, জারুল, আকাশমনি, লোহাকাঠ, আওয়ালসহ ১৬০ প্রজাতির উদ্ভিদ। ২০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, ২৪০ প্রজাতির পাখি, ৬ প্রজাতির সরীসৃপ রয়েছে।
উল্লেখযোগ্য বন্যপ্রাণীর মধ্যে হরিণ, লজ্জাবতী বানর, মুখপোড়া হনুমান, বনরুই গন্ধগোকুল, বাগডাশা, বনমোরগ, সজারু, অজগর সাপ, গুইসাপ, হনুমান, শেয়াল, মেছোবাঘ, চিতাবিড়াল, বনবিড়াল, কাঠবিড়ালী, বন্যকুকুর উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়া রয়েছে পাহাড়ি ময়না, ধনেশ, মথুরা, সবুজ ঘুঘুসহ বিচিত্র নানা ধরনের পাখি। লাউয়াছড়া উদ্যানই বিলুপ্ত প্রায় উল্লুকের সবচেয়ে বড় বিচরণ এলাকা। বনের সৌন্দর্যকে কাছ থেকে দেখার জন্য আছে তিনটি ট্রেইল। এক, দেড় ও তিন ঘণ্টার ভিন্ন এই ট্রেইলগুলোতে ট্রেকিং করে খুব কাছ থেকে এই বনের রূপ উপভোগ করতে পারবেন।
ট্রেকিংয়ে সহায়তার জন্য আছে গাইড। চাইলে সাথে করে গাইড নিয়ে নিতে পারবেন। উঁচু-নিচু ও আলো-আঁধারের চোখ ধাঁধানো খেলা, পাখির কিচিরমিচির, ঝিঝি পোকার গান সব কিছু মিলিয়ে অদ্ভুত জাদুতে আপনাকে বিমোহিত করে রাখবে বেড়ানোর সময়টুকু। এ ছাড়া লাউয়াছড়া উদ্যানের ভিতরেই আছে খাসিয়াপুঞ্জি, পানের বরজ, চা বাগান ও ঝিরি। লাউয়াছড়ার বনের মাঝদিয়ে চলে গেছে ঢাকা-সিলেট রেললাইন। রেললাইনের দুইপাশে গাছগাছালি। এই জায়গাটিও দর্শনার্থীদের কাছে খুব প্রিয়। রেললাইনের পাশ দিয়ে কিছুক্ষণ হেঁটে বেড়াতে পারেন। এ ছাড়া লাউয়াছড়া যাওয়ার পথে চোখে পড়বে চা-বাগান, উঁচুনিচু টিলা, আনারস, লিচু ও লেবু বাগান। রাস্তার দুপাশেই সবুজের ছড়াছড়ি, মনে হবে যেন সবুজের একটি স্বর্গরাজ্য।
যেভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে যেতে ট্রেন হচ্ছে সবচেয়ে ভালো মাধ্যম। ঢাকা থেকে ট্রেনে করে শ্রীমঙ্গল যেতে কমলাপুর কিংবা বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশান হতে উপবন, জয়ন্তিকা, পারাবত অথবা কালনী এক্সপ্রেস ট্রেনকে বেছে নিতে পারেন আপনার ভ্রমণ সঙ্গী হিসাবে। শ্রেণিভেদে জনপ্রতি ট্রেনে যেতে ভাড়া ২৬৫ থেকে ১০০০ টাকা। ট্রেনে যেতে সময় লাগে পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা। বাসে করে ঢাকা থেকে শ্রীমঙ্গল যেতে ফকিরাপুল অথবা সায়েদাবাদ থেকে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা ভাড়ায় হানিফ এন্টারপ্রাইজ, শ্যামলী পরিবহন, সিলেট এক্সপ্রেস, এনা ইত্যাদি নন এসি বাস পাওয়া যায়। বাসে যেতে সময় লাগে ৪ ঘণ্টার মতো। শ্রীমঙ্গল পৌঁছে সেখান থেকে আপনার চাহিদা অনুযায়ী কোনো গাড়ি নিয়ে যেতে পারবেন লাউয়াছড়া উদ্যানে। ইজিবাইক/সিএনজি/জিপ/মাইক্রোবাস যেকোনো কিছুতেই যাওয়া যায়। যাওয়া-আসা ও সেখানে ঘুরে বেড়ানোর সময়সহ রিজার্ভ নিলে সিএনজি ৪০০-৫০০ টাকা নিবে। আর আপনি চাইলে দিনে এসে দিনেই ফিরে যেতে পারবেন লাউয়াছড়া উদ্যানে থেকে। আর থাকতে চাইলে শ্রীমঙ্গল শহরে গিয়ে থাকতে হবে।