পূজায় ঘোরাঘুরি
দেখে আসুন রমনা কালী মন্দির
রমনা কালী মন্দির ভারতীয় উপমহাদেশের সবচেয়ে বিখ্যাত মন্দির সমূহের মধ্যে অন্যতম একটি । এটি রমনা কালী বাড়িনামে ও সমাধিক পরিচিত । এটি প্রায় এক হাজার বছরেরও পুরাতন বলে বিশ্বাস করা হয় কিন্তু ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি আবার নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল । বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার রমনা পার্কের (যার বর্তমান নাম সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ) অবস্থিত । বর্তমানে বাংলার সংস্কৃতিতে এ মন্দিরের উল্লেখ্য ভূমিকা আছে । আসছে পূজায় আপনি ঘুরে আসতে পারেন রমনা কালী মন্দির থেকে।
শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় রমনা কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন । প্রায় ৫০০ বছর আগে শ্রীনারায়ণের যোশী মঠের সন্ন্যাসী গোপাল গিড়ি ঢাকায় এসে রমনায় প্রথমে একটি আখড়া স্থাপন করেন । তখন এই আখড়া কাঠঘর নামে অভিহিত হয়।পরে এখানে মূল মন্দিরটি নির্মাণ করেন হরি চরণ গিরি। হরিচরণ গিরিকর্তৃক নির্মিত নতুন মন্দিরটি বাঙালি হিন্দু স্থাপত্য রীতি বহন করে ছিল।
ঘোড় দৌড়ের মাঠের মাঝখানে প্রাচীর ঘেরা মন্দিরে ভদ্রকালীর মূর্তি সুন্দর একটি কাঠের সিংহাসনে স্থাপিত ছিল। এই মূর্তির ডান দিকেই ছিল ভাওয়ালের কালী মূর্তি। মন্দিরের উত্তর-পূর্ব ও পশ্চিমে ছিল পূজারী সেবায়েত ও অন্য ভক্তদের থাকার ঘর। পাশে একটি শিব মন্দির, একটি নাট মন্দির ও সিংহ দরজা ছিল। সে সময়কার মানুষের পানীয় জলের সমস্যা মিটাতে ভাওয়ালের রানী বিলাস মনি কালীবাড়ির সামনের দীঘিটি কাটিয়েছিলেন। তবে ইংরেজ আমলের নথিপত্র অনুসারে দীঘিটি কাটিয়ে ছিলেন ইংরেজ ম্যাজিস্ট্রেট ড’স। বর্তমানে এই দীঘিটি রমনার কালী মন্দির ও মা আনন্দময়ী আশ্রমের স্মৃতি বহন করছে। রমনা কালী মন্দিরের উত্তর পাশে ছিল মা আনন্দময়ী আশ্রম। শাহবাগের মা নামে পরিচিত এই সন্ন্যাসিনী ছিলেন ঢাকার নবাবের শাহ বাগবাগানের তত্ত্বাবধায় করমনী মোহন চক্রবর্তীর স্ত্রী। বাজিতপুর থেকে চাকরি নিয়ে তিনি ঢাকায় এসেছিলেন । আনন্দময়ী তাঁর সাধক স্বামীর নাম দিয়ে ছিলেন বাবা ভোলানাথ। শাহবাগে অবস্থান কালে এরা দুজন বিশেষ করে মা আনন্দময়ী আধ্যাত্মিক শক্তির ধারক হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন। কালিবাড়ী মন্দিরটি ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী মন্দির ও আশ্রমটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। মন্দিরের সেবায়েতসহ প্রায় ১০০ সন্ন্যাসী, ভক্ত এবং সেখানে বসবাসরত সাধারণ মানুষ নিহত হয়। এ সময় কালী মন্দিরের পুরোহিত ছিলেন শ্রীমৎ স্বামী পরমানন্দ গিরি।
যা দেখবেন-
বিশাল এলাকা নিয়ে মন্দির । চারপাশ গাছপালায় আবিষ্ট। ছায়াঘেরা পরিবেশ, নগর জীবনের কোলাহল গ্রাস করবে না আপনাকে। আপনি চাইলেই গাছের ছায়ায় বসে যেতে পারবেন। তা ছাড়া মায়ের মন্দিরে গিয়ে মাতৃ মূর্তি দর্শনের পরে সেখানে কিছু সময় প্রার্থনা করে আসতে পারবেন।
কীভাবে যাবেন
রমনা কালী মন্দিরর মূল প্রবেশ পথ হলো বাংলা একাডেমির বিপরীতে। এ ছাড়া সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পূর্ব দিকের গেইট দিয়েও এখানে যাতায়াত করা যায়। ঢাকার যেকোনো জায়গা থেকে আপনি রমনা কালী মন্দিরে যেতে পারেন।