শীতের ছুটিতে
দীঘায় একদিন
ঝাউ বনের কোল ছুঁয়ে নীল আকাশের নিচে হাঁটতে হাঁটতে ঢেউ ভাঙা সমুদ্রের হাতছানিতে মন ভালো করতে চাইলে সপ্তাহের শেষে হাতে বাড়তি দু-একদিনের ছুটি নিয়ে সোজা চলে আসতে পারেন পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম সমুদ্র সৈকত দীঘাতে। শহর কলকাতা থেকে মাত্র ১৮২ কিলোমিটার দূরে ধু ধু বালিয়াড়ি আর উত্তাল সমুদ্রের গর্জন আপনার কর্মব্যস্ত জীবনে নিঃসন্দেহে বাড়তি অক্সিজেন জোগাবে তা বলাই বাহুল্য।
কী দেখবেন?
সমুদ্র সৈকত দীঘার মনোমুগ্ধকর রূপ বলতে সুবিশাল দীঘা সমুদ্র সৈকত। এখানে একটি রয়েছে ওল্ড দীঘা অন্যটি নিউ দীঘা। তবে ওল্ড দীঘাতেই পর্যটকদের ভিড় সব থেকে বেশি হয়। এখানে রাস্তা থেকে বাঁ দিকে কিছুটা নেমে গেলেই দেখা মিলবে সুবিশাল সমুদ্রের। বিশাল বিশাল ঢেউ নাচতে নাচতে দিগন্তের ওপার থেকে এসে আছড়ে পড়বে ক্রমাগত আপনার পায়ের নিচে।
তবে ওল্ড দীঘায় সমুদ্র স্নানের ক্ষেত্রে একটু সাবধান থাকা প্রয়োজন। এখানে সমুদ্রের পানিতে মাঝে মাঝেই চোরা টান থাকে। যে কারণে সতর্কতামূলক সব প্রচারও রয়েছে এখানে। এই ওল্ড দীঘাতেই রয়েছে বাজারঘাট, হোটেল সব থেকে বেশি পরিমাণে।এখানেই অল্প পয়সায় কিনে নিতে পারেন হরেক রকমের শামুক ও ঝিনুকের নানা সামগ্রী।
ওল্ড দীঘা থেকেই মাত্র আড়াই কিলোমিটার দূরে রয়েছে নিউ দীঘা। নিউ দীঘার সমুদ্র সৈকত ওল্ড দীঘার থেকে অনেকটাই বড় ও নয়নাভিরাম। এখানে ভিড়ও ওল্ড দীঘার তুলনায় অনেকটাই কম। নিউ দীঘার সমুদ্র সৈকতে হাঁটতে হাঁটতে দিগন্ত বিস্তৃত সফেদ সমুদ্রের গর্জন আপনাকে আনমনা করে তুলতেই পারে। নিউ দীঘা সৈকতের অদূরে দাঁড়িয়ে রয়েছে ঝাউয়ের সারি।
নিউ দীঘার বুকে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় বা সূর্যাস্ত দেখতে সত্যিই অপূর্ব। অবশ্য ওল্ড দীঘাতেও সূর্যোদয় বা সূর্যাস্ত একই রকমের সুন্দর লাগে। দীঘাতে গিয়ে সমুদ্রের রূপ দেখার পাশাপাশি একবার ঢুঁ মারতে পারেন সামুদ্রিক অ্যাকোরিয়ামে। এই অ্যাকোরিয়ামের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। দীঘা সৈকত থেকে আরো একটু প্রশস্ত ও প্রশান্ত সমুদ্র সৈকতে যেতে চাইলে একটা গাড়ি ভাড়া নিয়ে সোজা চলে যেতে পারেন কিছুটা দূরে উদয়পুর সমুদ্র সৈকতে। নিরিবিলি সমুদ্রের বালুকাবেলা ধরে পানিতে পা ডুবিয়ে হাঁটতে হাঁটতে নীল আকাশের সঙ্গে মিতালি পাতিয়ে নিতেই পারেন কিছুক্ষণ। দীঘা থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে আরো সুন্দর সমুদ্র সৈকতের খোঁজে যেতে চাইলে যেতে পারেন শংকরপুর সমুদ্র সৈকতে। এখানে সমুদ্রের পাশাপাশি দেখা মিলবে জেলেদের মাছ ধরার হরেক রকমের নৌকার। শংকরপুরে এসে মন চাইলে ঘুরে আসতে পারেন স্থানীয় বেশ কয়েকটি মন্দিরেও। দীঘা থেকে কিছুটা ঘুরে আসতে পারেন তালসারি সমুদ্র সৈকতেও। এক সৈকতে পাওয়া যায় নানা ধরনের খাবার। তালসারি সুমুদ্র সৈকতের অদূরে দাঁড়িয়ে রয়েছে নারকেল আর খেজুর গাছের সারি। এ ছাড়া দীঘার কোল ছুঁয়ে রয়েছে বিনোদনের ছোট বড় নানান জায়গা। দীঘায় এসে মন চাইলে গাড়ি ভাড়া নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন আশপাশের এই ধরনের বিভিন্ন সমুদ্র সৈকত কিংবা অন্যান্য স্থানগুলোতেও। আর মন চাইলে দীঘার কোলে বসে সমুদ্রের ঢেউ গুনতে গুনতেই পার করে দিতে পারেন কয়েকদিন। মোটের ওপর সমুদ্রের ছোঁয়ায় মন ভিজিয়ে অবসর যাপন করতে চাইলে সুন্দরী দীঘা আপনাকে বছরের সব সময়ই দুই হাত বাড়িয়ে আমন্ত্রণ জানাবে।
কীভাবে যাবেন
কলকাতার ধর্মতলা থেকে ও হাওড়া স্টেশন সংলগ্ন এলাকা থেকে প্রতিদিন প্রচুর বাস ছাড়ে দীঘার উদ্দেশে। প্রতি ঘণ্টায় দীঘা যাওয়ার জন্য পাওয়া যায় বাস। চার থেকে সাড়ে চার ঘণ্টা লাগে কলকাতা থেকে দীঘা যেতে। এ ছাড়া কলকাতা সংলগ্ন শহরতলী বারাসত, হাবড়াসহ বিভিন্ন এলাকা থেকেও রোজ সকালে দীঘার বাস ছাড়ে। বেসরকারি চার্টার্ড বাস ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের বাস ছাড়ে প্রতিদিন। ভাড়া ১৫০ থেকে ২৫০ রুপির মধ্যে।
কোথায় থাকবেন
দীঘাতে প্রচুর হোটেল ও লজ রয়েছে। তবে লজ ভাড়া করতে হলে আগে থেকেই ভাড়া করে যাওয়া ভালো। তবে হোটেলের অভাব নেই দীঘাতে। ওল্ড দীঘাতে মধ্যবিত্তের নাগালের মধ্যে প্রচুর হোটেল রয়েছে। নিউ দীঘাতেও রয়েছে বিভিন্ন মাপের হোটেল। যা আপনার পকেট নিশ্চিন্তে পারমিট করবে। দীঘাতে ৪০০ রুপি থেকে শুরু করে এক হাজার ৫০০ রুপির মধ্যে হোটেল ভাড়া পাওয়া যায়।
খাওয়া দাওয়া
সামুদ্রিক মাছের হরেক রকম পদের জন্য বিখ্যাত দীঘা। শংকর, পমফ্রেটসহ সামুদ্রিক নানা প্রজাতির মাছে ভাজা, ঝোলসহ বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছের পদ প্রায় সব হোটেলেই পাওয়া যায়। ১০০ থেকে ১৫০ রুপি ব্যয় করলে মাছ-ভাত দিয়ে মোটের ওপর পেট ভরেই খাওয়া যায় একবেলা।