যুক্তরাষ্ট্রের ‘পিস টর্চ অ্যাওয়ার্ড’ পেলেন বাংলাদেশের নাজমুন

কখনো সাহারা মরুভূমি, কখনো বিপদসংকুল আফ্রিকার জঙ্গল, আবার কখনো সমুদ্রের তলদেশ—নানা রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার সাক্ষী বাংলাদেশের মেয়ে বিশ্বপরিব্রাজক নাজমুন নাহার। এখন পর্যন্ত লাল-সবুজের পতাকা উড়িয়েছেন বিশ্বের ১৩৫টি দেশে। মিলল আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও। ১৩৫ দেশ ভ্রমণের ঐতিহাসিক রেকর্ড অর্জনের পর নাজমুন পেলেন আন্তর্জাতিক পুরস্কার ‘পিস টর্চ অ্যাওয়ার্ড’। পেলেন ‘ডটার অব দি আর্থ’ উপাধি।
নাজমুন জানালেন, এর আগে সম্মানজনক এ পুরস্কার পেয়েছেন মানবজাতির কল্যাণে জীবন উৎসর্গ করা মহীয়সী নারী মাদার তেরেসাসহ অনেকে। এ প্রাপ্তিতে খুবই উচ্ছ্বসিত বিশ্বভ্রামণিক।
গত ২৭ অক্টোবর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে স্থানীয় সময় দুপুর ৩টায় কুইন্সের শ্রী চিন্ময় ওয়াননেস হার্ট সেন্টারের অ্যাসপিরেশন গ্রাউন্ডে নাজমুন নাহারকে দেওয়া হয় ‘পিস টর্চ অ্যাওয়ার্ড’ ও ‘ডটার অব দি আর্থ’ উপাধি। বিশ্বখ্যাত ক্রীড়াবিদ, তিন হাজার ১০০ মাইল দৌড়ে বিজয়ী নিউজিল্যান্ডের মেয়ে মিস হরিতা নাজমুন নাহারের গলায় সোনার মেডেল পরিয়ে দেন।
শ্রী চিন্ময় ওয়াননেস হার্ট সেন্টারের পরিচালক ড. মহাতপা পালিতের নেতৃত্বে শাড়ি পরিহিত ১০ মার্কিন নারী বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত ও শান্তির গান গেয়ে নাজমুনকে সংবর্ধনা দেন। ওই সময় তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হয় শান্তির মশাল।
নাজমুন নাহার বাংলাদেশকে বিশ্বদরবারে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি বিশ্বশান্তি, নারীর সমতা ও ক্ষমতায়নসহ জাতি-ধর্ম-বর্ণের মানুষের মুক্তির লক্ষ্যে ১৯ বছর ধরে বাংলাদেশের লাল-সবুজের পতাকা হাতে ঘুরছেন বিভিন্ন দেশে। এরই মধ্যে ১৩৫ দেশ ভ্রমণের ইতিহাস গড়েছেন তিনি। তার স্বীকৃতিস্বরূপ পেলেন ‘পিস টর্চ অ্যাওয়ার্ড’। নাজমুনের এই অর্জন বাংলাদেশের জন্য গৌরবের।
নাজমুন নাহার এখন নিউইয়র্কে অবস্থান করছেন। আজ বুধবার সকালে মুঠোফোনে এনটিভি অনলাইনকে পুরস্কারপ্রাপ্তির অনুভূতি ব্যক্ত করেন তিনি। বলেন, ‘আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে শান্তির মশালটি মাদার তেরেসা হাতে নিয়ে উত্তোলন করেছেন বিশ্বশান্তির প্রতীক হিসেবে, সেই শান্তির মশাল আমিও উত্তোলন করেছি। পিস টর্চ বিয়ারার অ্যাওয়ার্ড আমার অর্জনের ঝুলিতে এক অনন্য পাওয়া। আমার এই অর্জন বাংলাদেশের সব শিশু ও তরুণের জন্য উৎসর্গ করলাম, যারা আলোর মশাল জ্বালিয়ে এভাবেই মানবতার জন্য কাজ করে যাবে পৃথিবীব্যাপী।’
নাজমুন জানান, প্রথম পিস টর্চ বিয়ারার পুরস্কারটি নয়বার অলিম্পিক স্বর্ণপদকজয়ী ও পিস রানের মুখপাত্র কার্ল লুইসকে দেওয়া হয়েছিল। এরপর থেকে মিখাইল গর্বাচেভ, নেলসন ম্যান্ডেলা, মায়া অ্যাঞ্জেলোসহ বিশ্ববিখ্যাত ব্যক্তিরা পেয়েছেন। এ ছাড়া পিস টর্চ অ্যাওয়ার্ডটি স্লোভেনিয়ার রাষ্ট্রপতি ড. ড্যানিলো টার্কে, তিমুর লেস্টের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ডা. মারি অ্যালকাতিরি, নিউইয়র্কের সংগীতজ্ঞ ফিলান্ট্রোপিস্ট ও হিপহপ অগ্রগামী রাসেল সিমন্স, মার্কিন দৌড়বিদ মেব কেফলেজিঘি পেয়েছেন।
এর আগেও বেশ কয়েকটি পুরস্কার পান নাজমুন নাহার। এসবের মধ্যে রয়েছে অনন্যা পুরস্কার, মিস আর্থ কুইন অ্যাওয়ার্ড, ইয়ুথ গ্লোব অ্যাওয়ার্ড, অতীশ দীপঙ্কর গোল্ড মেডেল, জন্টা ইন্টারন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড, রেড ক্রিসেন্ট মোটিভেশনাল অ্যাওয়ার্ড।
২০০০ সালে প্রথম দেশের বাইরে পা রাখেন প্রতিবেশী ভারতে। এরপর এশিয়ার কয়েকটি দেশ ভ্রমণ করেন। ২০০৬ সালে উচ্চশিক্ষার জন্য যান ইউরোপের দেশ সুইডেনে। ভর্তি হন লুন্ড ইউনিভার্সিটিতে। এরপর অবারিত হয় নাজমুনের দিগন্ত। ২০০৭ সালে ফিনল্যান্ড দিয়ে ইউরোপ ভ্রমণ শুরু। এরপর পূর্ব আফ্রিকা, দক্ষিণ আমেরিকা, ক্যারিবীয় দ্বীপরাষ্ট্র, আরব ও ওশেনিয়া অঞ্চল, পশ্চিম আফ্রিকা—১৯ বছরে ১৩৫টি দেশ ভ্রমণ। রেখেছেন প্রতিটি মহাদেশে পা। ১৩৫তম দেশ হিসেবে কোস্টারিকা ভ্রমণ করেন নাজমুন।
নাজমুন নাহারের স্বপ্ন বাংলাদেশের স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরপূর্তির মধ্যেই জাতিসংঘের সদস্যভুক্ত ১৯৩টি দেশ ভ্রমণের। আরো স্বপ্ন, স্বাধীনতা না পাওয়া সাতটি দেশ ভ্রমণের। দুইশ দেশে পা রাখলেই পৃথিবীর প্রথম মানবী হিসেবে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে ঠাঁই হবে এই পরিব্রাজকের, জানালেন নাজমুন নিজেই।
বাবা শখ করে নাম রেখেছিলেন সোহাগী। পুরো নাম নাজমুন নাহার। কে জানত, লক্ষ্মীপুরের এই সোহাগীই পৃথিবীর এত দেশে পদধূলি রাখবেন! অবশ্য আরব ঘুরেছিলেন তাঁর দাদা। শৈশবে দাদুর মুখেই ভ্রমণের গল্প শোনা। সেই থেকে মাথায় চাপে ভ্রমণের ভূত। বাকিটা ইতিহাস।
নাজমুন পৃথিবীর এক দেশ থেকে অন্য দেশে হাজার হাজার মাইল সড়কপথে একা ভ্রমণ করে চলেছেন নিজ দেশের পতাকা হাতে। এর আগে নারী হিসেবে শতাধিক স্বাধীন দেশ ঘোরার স্বীকৃতিস্বরূপ জাম্বিয়া সরকারের কাছ থেকে পেয়েছেন ‘ফ্ল্যাগ গার্ল’ (পতাকাকন্যা) উপাধি।