ছুটির দিনে
মায়াবী ঝর্ণা ‘সংগ্রামপুঞ্জি’
জাফলংয়ের শীতল জলে শরীর ভেজানোর পর আরো কিছুক্ষণ ভিজতে মন চাইছে? কিন্তু এখানে তো বেশ কিছুক্ষণ থেকেছি। অথবা আগেও একবার এসেছিলাম এখানে—এমন মনে হতে পারে। এখন নতুন কোনো উপলক্ষ হলে মন্দ কি? দেশের অন্যতম পর্যটন স্পট জাফলংয়ের পাশেই অচেনা এক জায়গা অতি সম্প্রতি নজরে এসেছে পর্যটকদের। জায়গাটার নাম ‘সংগ্রামপুঞ্জি’। মায়াবী ঝর্ণা আর সবুজ প্রকৃতির জন্য এরই মধ্যে ভ্রমণপিপাসুদের কাছে এটি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এবার তাহলে সংগ্রামপুঞ্জি যেতে হয়?
কিছুটা ঘোর লেগে যেতে পারে। জাফলংয়ের বল্লাঘাট এসে নদী পার হলেই কি সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণা? না, নদী পার হয়ে বাজার; বাজার পেরোতেই চারপাশের পরিবেশ দেখে থ মেরে যাওয়ার উপক্রম! ভুলে কি কোনো সবুজে ঘেরা বনে চলে এলাম? তা তো না, কোনো বনও মনে হচ্ছে না। খাসিয়াদের বাগান এটি। খাসিয়াপল্লী গড়ে উঠেছে এই বাগানের আশপাশেই। ঘন লম্বা সুপারি ও নাম না জানা অসংখ্য বৃক্ষ চিরে বেয়ে উঠেছে পানের গাছ। মাঝেমধ্যে দোতলা বাঁশের খাসিয়াদের ঘরবাড়ি যেন প্রাকৃতিক এই দৃশ্যটাতে শেষ প্রলেপ দিয়েছে। মন চাইছে, ঘন সবুজের সমারোহ আঁকা এ বাগানে থাকি অনন্তকাল। মাঝেমধ্যে বাতাসে ভেসে আসে খাসিয়া শ্রমিকদের পানপাতা সংগ্রহ ও কাঠ কাটার শব্দ। জাফলং জিরো পয়েন্ট থেকে এ পথটুকু চাইলে অন্যভাবে আসা যায়। তবে খাসিয়া বাগানের অপরূপ সৌন্দর্য মিস না করতে চাইলে হেঁটে আসাই উচিত।
জিরো পয়েন্ট থেকেই দেখা যায় সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণা। হেঁটেই তপ্ত বালু পার হয়ে আপনাকে পৌঁছাতে হবে সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণা। কাছে গিয়ে নিজের চোখে না দেখলে কেউ বিশ্বাস করবে না এখানকার সৌন্দর্য। ঝর্ণার কাছে এসে একটু থমকে তবে উঠতে চেষ্টা করবেন পাহাড়ের গা ঘেঁষে বেড়ে ওঠা পাথুরে এ ঝর্ণায়। একদম পাহাড়ের ওপর থেকে শুরু হওয়া জলপ্রপাতের বড় পাথরের কারণে প্রথমে ভাগ হয়ে গেছে দুই ভাগে। দুই ভাগ থেকে চার ভাগে। এভাবে লম্বা একটা সময় বিভিন্ন খণ্ডে ভাগ হয়ে শেষ হয়েছে একটা ছোট্ট তীব্র, সুন্দর ঝর্ণার মধ্য দিয়ে। নিচের সেই ছোট ঝর্ণায়ও একসঙ্গে পাঁচ-ছয়জন দাঁড়িয়ে গোসল করা যায়। এ এক অপূর্ব দৃশ্য। বড় বড় পাথর এমনভাবে সাজানো যেন মনে হয় সিঁড়ি। পাথুরে ঝর্ণাবেষ্টিত এই সিঁড়ি বেয়ে প্রথমেই একেবারে পাহাড়ের ওপরে ঝর্ণাটার কাছে চলে যায় যে কেউ। শহুরে খোলস ছেড়ে প্রকৃতির মহানুভবতার কাছে আত্মসমর্পণের এই তো সুযোগ! বাইরে কড়া রোদেও সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণা সাদরে বরণ করে নিতে চায় তার অপরূপ স্নিগ্ধতা দিয়ে। এ এক শান্তির পরশ, অপরূপ সৌন্দর্যে মুগ্ধতার পালা। এখানে এলে সময় যেন আপেক্ষিক হয়ে যায়। হৈ-হুল্লোড়, সেলফি আর পাথুরে সিঁড়িতে এক ঝর্ণা থেকে আরেক ঝর্ণার স্বাদ নিতে নিতে কখন যে ফেরার সময় হয়ে যাবে, টেরই পাবেন না! ফিরতি পথে পা থেকে জুতা খুলে হাতে নিয়ে তপ্ত বালুর মধ্যে হাঁটার পালা জাফলং জিরো পয়েন্টের দিকে। মিনিট বিশেকের মধ্যেই জাফলং জিরো পয়েন্ট। তারপর নিজ গন্তব্যে। সময়ের ব্যবধানে হয়তো অনেক জায়গায় যাওয়া হবে; কিন্তু সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণায় যদি না আসেন, তাহলে জাফলং ভ্রমণটা অপূর্ণই থেকে যাবে।
কীভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে বাসে অথবা ট্রেনে সিলেট। বাসের চেয়ারকোচে ৪৭০-৫০০ টাকা আর ট্রেনের চেয়ার ৩০০-৩৫০ টাকায় আসতে পারবেন সিলেট শহরে। এখানে রাত কাটিয়ে তবে আপনাকে কোনো একসময় রওনা হতে হবে এই রুটে। সিলেট থেকে লোকাল বাস কিংবা লেগুনায় করে জাফলং বাজারে। মামার বাজারে নামিয়ে দেবে। ওখান থেকে জাফলং জিরো পয়েন্টের দিকে হেঁটে যেতে হবে কিছুক্ষণ। এরপর দুই ভাগে যেতে পারেন।
এক. জাফলং জিরো পয়েন্ট পার হয়ে সোজা মিনিট বিশেক হাঁটলে সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণা দেখতে পাবেন। তবে এদিক দিয়ে গেলে খাসিয়াপল্লীর বাগান দেখতে পারবেন না।
দুই, মামার বাজার থেকে জাফলং জিরো পয়েন্টের দিকে কিছু রাস্তা হেঁটে মা রেস্টুরেন্টের সামনে দিয়ে বাঁয়ে মোড় নিতে হবে। ওখান থেকে নৌকা নিয়ে সংগ্রামপুঞ্জি বাজার। জনপ্রতি ১০ টাকা ভাড়া নেবে। বাজারে কাউকে খাসিয়াপল্লী বাগান বললেই দেখিয়ে দেবে। বাগানের ভেতরের রাস্তার ১০ মিনিটের মতো হাঁটলেই সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণা।
জাফলংয়ের পিয়াইন নদী পার হতে ভাড়া নৌকার সাহায্য নিতে হবে। নৌকায় পার হতে আনুমানিক ২০০-২৫০ টাকা নেবে।