ছুটির দিনে
নদীর নাম জাদুকাটা
নদীমাতৃক এ দেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে বহু নদ-নদী। নানাভাবে গড়ে ওঠা এসব নদীর প্রকৃতি ভিন্ন ভিন্ন। দুই পাহাড়ের মাঝখান দিয়ে নেমে এসেছে এ রকমই এক নদী। যেমন অদ্ভুত তার সৌন্দর্য, তেমন অদ্ভুত তার নাম। বিমুগ্ধ করার মতো। মায়াবী নদীটির নাম ‘জাদুকাটা’। জাদুকাটা নদীর জাদু সবাইকে কাবু করতে যথেষ্ট। জাদুকাটা নদীর গভীরতা কম। আর এর পানি এতটাই স্বচ্ছ যে নিচের বালুকণা পর্যন্ত স্পষ্ট দেখা যায়। নদীর একপাশে বিস্তীর্ণ বালুচর, অন্যপাশে সবুজ পাহাড়ের হাতছানি। কে না চায় এমন এক পরিবেশে নিজেকে একটু হারিয়ে ফেলতে!
সুনামগঞ্জ জেলা শহর থেকে জাদুকাটার দূরত্ব ২০ কিলোমিটার। কিন্তু ঠিক এ নদী পর্যন্ত ভালো কোনো রাস্তা নেই। যেতে হবে ভাড়া করা মোটরবাইকে। এসব সমস্যা নিমেষেই হাওয়া হয়ে যাবে জাদুকাটার দর্শনে। সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে চলে যেতে পারেন সুরমা নদীর সাহেববাড়ীর ঘাটে। সেখান থেকে নৌকাযাত্রা। আধঘণ্টা পর দেখা মিলবে মণিপুরী ঘাটের। ঘাটে নেমে ভাড়ার মোটরবাইকে আবার যাত্রা শুরু। পলাশ বাজার, ধরপুর বাজার পেছনে ফেলে, চিনাকান্দি বাজার ছাড়িয়ে বাইক আপনাকে একেবারে নিয়ে যাবে পাহাড়ের কাছে। ডান দিকে চোখ দিলেই দেখা মিলবে মেঘালয়ের। এরপর বিজিবি ক্যাম্পের পাশ দিয়ে মোটরবাইক নিয়ে নেমে যেতে পারেন জাদুকাটার বালুচরে। মেঘ আর পাহাড়ের সমন্বয়ে এখানে হারিয়ে যেতে বাধ্য হবেন আপনি।
সড়কপথেও যেতে পারেন, তবে মোটরবাইকের হাত থেকে রেহাই নেই। জাদুকাটায় যেতে কমপক্ষে একটু নদী ও কিছুটা মোটরবাইকে ভ্রমণ না করে উপায় নেই। তবে ওরস ও পুণ্যস্নানের সময় এখানে এলে আপনাকে যানবাহন সংকটের মুখে পড়তে হবে। পাশের মূল সড়ক থেকে পুরো রাস্তাটা আপনাকে আসতে হবে হেঁটে।
তবে সব কষ্ট মাড়িয়ে যতক্ষণে পায়ের নিচে জাদুকাটার ঠান্ডা জলের পরশ আর মাথার ওপরে পাহাড় এসে পড়বে, তখন অনুভূতি অন্য রকম। পাহাড়ের পিঠ বেয়ে বের হয়ে বাংলাদেশে এসেছে জাদুকাটা নদী। দেখে মনে হবে, নদীর উৎসমুখে দুই পাশ থেকে পাহাড় ঝুলে আছে। পেছনে আরো একটি পাহাড়ের দেখা মিলবে সেখানে। জাদুকাটার পূর্বে শাহ আরেফিনের (রহ.) আস্তানা ও লাউড়েরগড় গ্রাম। সেই গ্রামের দক্ষিণ কোণের নদীতীরে রয়েছে হিন্দুধর্মাবলম্বীদের তীর্থস্থান। প্রতিবছর চৈত্র মাসে প্রায় একই সময়ে শাহ আরেফিনের আস্তানায় ওরস ও জাদুকাটা নদীতীরে পুণ্যস্নান হয়। দুই উৎসব ঘিরে সে সময় নদীতীরে বসে দুই ধর্মের মানুষের মিলনমেলা। হাজার হাজার মানুষের ঢল নামে নদীর গা ঘেঁষে। একসময় এই জাদুকাটা নদীর তীরেই ছিল প্রাচীন রাজ্য লাউড়ের রাজধানী। সময়ের পরিক্রমায় সেখানে এখন রাজ্য নেই, নেই রাজধানীও। প্রাচীন সেই রাজ্যের নামের সঙ্গে মিলিয়ে এখনো গ্রামটির নাম ‘লাউড়েরগড়’। এখানে এসে গ্রামটি ঘুরেও দেখতে পারেন।
কীভাবে যাবেন
জাদুকাটা নদী সুনামগঞ্জ জেলার হাওর অঞ্চলে অবস্থিত। সুনামগঞ্জ গিয়ে জাদুকাটা নদী ঘুরে আসতে পারেন। ঢাকা থেকে সুনামগঞ্জ যাওয়ার সরাসরি বাস রয়েছে। এনা, হানিফ, শ্যামলী, ইউনিকসহ অনেক বাস এই পথে চলে। সুনামগঞ্জ থেকে সরাসরি চলে যেতে পারেন জাদুকাটা নদীর তীরে। সুনামগঞ্জ শহর থেকে নৌকায় মণিপুরীঘাটে। পরে মোটরবাইকে। একবারের ভাড়া ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। সারা দিনের জন্য নিলে ভাড়া পড়বে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা। অন্যভাবে সড়কপথেও আপনি যেতে পারেন। সে ক্ষেত্রে পুরো পথটায় যেতে হবে মোটরবাইক বা ছোট যানবাহনে। সব মিলিয়ে জাদুকাটায় পৌঁছাতে মোটরবাইকে আপনাকে চড়তেই হবে। জাদুকাটার তীরে পৌঁছে নৌকা ভাড়া করতে হবে। দরদাম করে নেওয়াই ভালো। এক হাজার ৫০০ থেকে দুই হাজার টাকা চাইবে।
সুনামগঞ্জে থাকার ব্যবস্থা আছে। দলবেঁধে ঘুরতে গেলেই বেশি আনন্দ হবে। ইচ্ছে করলে ঘোরাফেরা শেষে দিনের আলোতেই আবার জেলা শহরে ফেরা যাবে।