শীতে ঘোরাঘুরি
কবিগুরুর শ্বশুরের নিমন্ত্রণে
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর । এই নাম শুনতেই আমাদের মাথায় ভেসে ওঠে কত আবেগ, অসংখ্য গান, কবিতা, উপন্যাস আর ছোট গল্পের সমাহার।আর কবিগুরু যার প্রেমে মুগ্ধ হয়ে এত ভালোবাসার গান রচনা করেছেন তিনি কি না আমাদের বাংলাদেশি এক নারী।হ্যাঁ! কবিপত্নী মৃণালিনী দেবীর কথাই বলছি।মৃণালিনী দেবীর বাড়ি অর্থাৎ রবি ঠাকুরের শ্বশুরবাড়ি বাংলাদেশের খুলনা জেলার ফুলতলা উপজেলার দক্ষিণডিহি গ্রামে।চাইলেই খুব সহজে ঘুরে আসতে পারেন কবিগুরুর শ্বশুরবাড়ি থেকে।
কীভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে আকাশ, রেল কিংবা সড়ক পথে যেতে পারেন খুলনা। তবে আকাশ পথে যেতে হলে প্রথমে আপনাকে ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে যেতে হবে যশোর।পরবর্তী সময়ে বাস কিংবা রেলে করে পৌঁছে যাবেন খুলনা। এজন্য আপনাকে গুনতে হবে প্রায় চার হাজার টাকা।তবে ট্রেনে চেপে সরাসরি খুলনা চলে যেতে পারেন । এজন্য আপনাকে গুনতে হবে সর্বনিম্ন ৩৯০ টাকা থেকে এক হাজার ৩৯০ টাকা। সড়ক পথে আপনি দুই ভাবে যেতে পারেন।
ঢাকা-আরিচা পথে অথবা ঢাকা-মাওয়া পথে। ঢাকা-আরিচা পথে নন এসি অথবা এসি বাস আছে হানিফ পরিবহন, ঈগল পরিবহন, গ্রিন লাইন, এ কে ট্রাভেলসের।নন এসিতে খরচ পড়বে ৫৫০ টাকা।আর এসি বাসে সর্বনিম্ন এক হাজার ১০০ টাকা থেকে দুই হাজার ২০০ টাকা।
যা দেখবেন
খুলনা শহর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরেই দক্ষিণডিহি গ্রাম। এজন্য আপনাকে খুলনা থেকে অটো, মাহেন্দ্র অথবা সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে যেতে হবে পথের বাজার পর্যন্ত। সেখান থেকে ভ্যানে করে যেতে হবে দক্ষিণডিহি গ্রামে। খুলনা শহর থেকে দক্ষিণডিহি যেতে জনপ্রতি খরচ হবে ৫০-৬০ টাকা।
রবি ঠাকুরের শ্বশুরবাড়ি রবীন্দ্র কমপ্লেক্স নামে পরিচিত। রবীন্দ্র কমপ্লেক্সে পৌঁছালেই দেখতে পাবেন মনোরম এক দোতলাবাড়ি। কবিপত্নী মৃণালিনী দেবীর বাবা বেনিমাধব ছিলেন ঠাকুর পরিবারের বেতনভুক্ত কর্মচারী। বর্তমানে এখানে আপনি যে দোতলা বাড়ি দেখতে পাবেন এই জায়গায় বেনিমাধবের দোচালা টিনের ঘর ছিল।বিয়ের পর টিনের ঘর ভেঙে নির্মাণ করা হয় এই বাড়ি।
দোতলা বাড়িজুড়েই আছে রবি ঠাকুরের বিভিন্ন সময়ে ধারণকৃত ছবি এবং কবির সাহিত্যকর্মের হাতে লেখা অনুলিপি। এটির সিঁড়ির কারুকার্য আপনাকে মুগ্ধ করবে। তবে এই রবীন্দ্র কমপ্লেক্স ভ্রমণের আদর্শ সময় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্ম অথবা মৃত্যুদিন, অর্থাৎ মে অথবা আগস্ট মাসে। বছরের এ সময়ে মেলার আয়োজন হয়।বিভিন্ন জায়গা থেকে কবিভক্তের সমাগম হয় এই সময়।
একটি বিষয় জানলে আপনি অবাক হবেন মৃণালিনী দেবীর প্রকৃত নাম কিন্তু মৃণালিনী দেবী ছিল না।তাঁর নাম ছিল ভবতারিণী দেবী ওরফে পদ্ম ওরফে ফুলি ওরফে ফেলি। ভবতারিণীর বয়স যখন ১১ বছর তখন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাথে বিয়ে হয়।বিয়ের পর ঠাকুর পরিবারে রীতি অনুযায়ী নাম রাখা হয় মৃণালিনী দেবী।
খাবার-দাবার
আর একটি বিষয়, ভোজন রসিকদের জন্য রয়েছে সুখবর। রবীন্দ্র কমপ্লেক্সের একেবারেই কাছে রয়েছে বিখ্যাত বেজেরডাঙ্গা মুসলিম হোটেল।এখানকার চুই ঝাল দিয়ে গরুর মাংস এবং খাশির মাংস অত্যন্ত বিখ্যাত।এই মাংসের স্বাদ না নিলে আপনার ভ্রমণ অপূর্ণ রয়ে যাবে।
খেয়াল রাখবেন
খুলনার পানি লবণাক্ত।যদি লবণ পানিতে কারো সমস্যা থাকে তবে মিনারেল ওয়াটার কিনে খেতে পারেন।
খুলনার মানুষ আন্তরিক। তবুও অপরিচিত মানুষের দেওয়া খাবার এড়িয়ে চলুন।