নাগর্নো-কারাবাখ সংকট : সমঝোতার কথা বলল আর্মেনিয়া
দশ দিন ধরে লড়াই চলছে আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের মধ্যে। এর মধ্যে এই প্রথম সমঝোতার কথা বললেন আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী। সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলে ও আলজাজিরা এ খবর জানিয়েছে।
বিতর্কিত নাগর্নো-কারাবাখ অঞ্চল নিয়ে আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের যুদ্ধ দশম দিনে গড়িয়েছে। এখন পর্যন্ত যুদ্ধ থামার কোনো ইঙ্গিত মেলেনি। আর্মেনিয়ার দাবি, বিতর্কিত নাগর্নো-কারাবাখের রাজধানী কার্যত ধুলায় মিশিয়ে দিয়েছে আজারবাইজানের সেনারা। আজারবাইজানও আর্মেনিয়ার বিরুদ্ধে একই অভিযোগ তুলেছে। তবে এরই মধ্যে সামান্য আশার আলো দেখা গেছে।
আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী নিকোল পাশিনিয়ান গতকাল মঙ্গলবার সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, আজারবাইজান চাইলে নাগর্নো-কারাবাখ নিয়ে পারস্পরিক সমঝোতায় আসার কথা ভাবা যেতে পারে। অন্যদিকে, ইরান আবারও আশঙ্কা প্রকাশ করে জানিয়েছে, যেভাবে বিভিন্ন গোষ্ঠী এই যুদ্ধে অংশ নিচ্ছে, তাতে অচিরেই দুই দেশের লড়াই একটি আঞ্চলিক যুদ্ধে পরিণত হতে পারে।
আর্মেনিয়া ও আজারবাইজান—দুটি দেশের সঙ্গেই ইরানের সীমান্ত রয়েছে। গত সোমবারের পর গতকাল মঙ্গলবার আবারও নিজেদের সীমান্ত নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে ইরান। ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি ফোনে কথা বলেছেন আজারবাইজানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে। ইরানের প্রেসিডেন্ট বলেছেন, বিভিন্ন দেশের নানা গোষ্ঠী এই যুদ্ধে অংশ নিয়েছে। ফলে যেকোনো সময় একটি আঞ্চলিক যুদ্ধ লেগে যেতে পারে। এবং তা ঘটলে গোটা অঞ্চলের শান্তি বিঘ্নিত হবে। ফলে দ্রুত সমাধানের রাস্তা খুঁজে বের করা দরকার।
নাগর্নো-কারাবাখ অঞ্চলের এ যুদ্ধে বিভিন্ন গোষ্ঠীর অংশগ্রহণ যে রয়েছে, তা প্রথম থেকেই বলছিলেন বিশেষজ্ঞরা। সিরিয়ার সরকার স্বীকার করেছে, যুদ্ধে সিরিয়ার যোদ্ধারা অংশ নিয়েছে। আরো কয়েকটি জঙ্গিগোষ্ঠীর অংশগ্রহণের কথাও শোনা যাচ্ছে। তুরস্কের সরাসরি যোগদান নিয়েও সরব হয়েছে আর্মেনিয়া।
গত ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে রাশিয়ার মিত্র আর্মেনিয়া ও তুরস্কের মিত্র আজারবাইজানের মধ্যে সংঘাত চলছে।
এদিকে গতকাল মঙ্গলবার আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, রাশিয়ার সঙ্গে তাঁদের দীর্ঘদিনের চুক্তি রয়েছে। যার ভিত্তিতে আর্মেনিয়ার প্রয়োজনে রাশিয়া তাঁদের সাহায্য করবে। আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, আজারবাইজান যুদ্ধ চালিয়ে গেলে রাশিয়া আর্মেনিয়াকে সাহায্য করবে এবং তার ফলে দেশের সীমান্ত সুরক্ষিত থাকবে বলেই তাঁর বিশ্বাস। তবে একই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, আজারবাইজান চাইলে পারস্পরিক সমঝোতার কথা ভাবা যেতে পারে। এই প্রথম সমঝোতার কথা বলা হলো।
সমঝোতা কোন পথে?
নাগর্নো-কারাবাখ আজারবাইজানের অংশ। কিন্তু সেখানে বসবাস করেন আর্মেনীয় মানুষ। আজারবাইজানের কর্তৃত্ব তারা মানে না। ফলে সেখানে স্বাধীন সরকার গড়ে উঠেছে। যাদের পেছন থেকে সাহায্য করে আর্মেনিয়া। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর থেকেই নাগর্নো-কারাবাখ অঞ্চল নিয়ে আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছে। ১৯৯২ থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত নাগর্নো-কারাবাখ নিয়ে দুদেশের মধ্যে যুদ্ধ হয়েছে। ৩০ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। ফলে নতুন করে সমঝোতা করতে হলে দুদেশকে নিজেদের স্বার্থের সঙ্গে আপস করতে হবে। নাগর্নো-কারাবাখের স্বাধীন সরকারের বক্তব্যও এ ক্ষেত্রে জরুরি। তবে বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, যুদ্ধ থামাতে হলে সমঝোতার রাস্তায় যেতেই হবে দুটি দেশকে। এবং যেভাবে যুদ্ধের বিরুদ্ধে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ তাদের ওপর চাপ তৈরি করেছে, তাতে এ ছাড়া আপাতত তাদের আর কোনো উপায়ও নেই।