পুলিশের গুলিতে ‘পঙ্গু’ মার্কিন কৃষ্ণাঙ্গ জ্যাকব ব্লেক
![](https://ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2020/08/26/jacob_blake_gettyimages-1228190520_1280.jpg)
মার্কিন পুলিশের গুলিতে আহত কৃষ্ণাঙ্গ যুবক জ্যাকব ব্লেক আর আগের মতো সুস্থ-স্বাভাবিকভাবে হাঁটাচলা করতে পারবেন না। গুলিতে ব্লেক ‘পঙ্গু’ হয়ে গেছেন। অস্ত্রোপচারের পরও আশার আলো দেখাতে পারেননি চিকিত্সকেরা। ব্লেকের আইনজীবী বেন ক্রাম্প গতকাল মঙ্গলবার এই দুঃসংবাদ দিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিন অঙ্গরাজ্যের কেনোশা শহরে গত রোববার এই কৃষ্ণাঙ্গ যুবক জ্যাকব ব্লেককে গুলি করে পুলিশ। রাস্তার ধারে পার্ক করে রাখা তাঁর গাড়ির মধ্যে তিন সন্তানকে রেখে কোনো একটা প্রয়োজনে গিয়েছিলেন। ফিরে এসে গাড়ির দরজা খুলে চালকের আসনে বসার সময় পুলিশ পেছন থেকে ব্লেকের ওপর গুলি চালিয়ে দেয়। সন্তানরা চোখের সামনে পুলিশের গুলিতে তাদের বাবাকে আহত হতে দেখে। মোবাইল ফোনে তোলা ওই ঘটনার ভিডিওর ক্লিপিংস সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্মে ছড়িয়ে পড়ায় গতকাল সোমবার থেকে অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে যুক্তরাষ্ট্র। পরে কেনোশা শহরে কারফিউ জারি করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হয়।
জ্যাকব ব্লেকের পারিবারিক আইনজীবী গতকাল মঙ্গলবার জানান, উইসকনসিনের পুলিশ গত রোববার জ্যাকব ব্লেককে বিনা কারণে একাধিকবার গুলি করে।
জ্যাকব ব্লেকের আইনজীবী বলেন, ‘ব্লেকের শরীর প্যারালাইজড (অসাড়) হয়ে গেছে। তিনি যদি আবার হাঁটতে পারেন, সেটা হবে অলৌকিক ঘটনা।’
যে শ্বেতাঙ্গ পুলিশ কর্মকর্তা জ্যাকব ব্লেককে গত ২৩ আগস্ট গুলি চালিয়েছেন, তাঁকে যাতে গ্রেপ্তার করা হয়, তার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন তাঁর আইনজীবী। এ ঘটনায় জড়িত বাকিদেরও যাতে চাকরি থেকে বহিষ্কার করা হয়, ব্লেকের পরিবারের পক্ষ থেকে সে দাবিও জানানো হয়েছে।
পুলিশের গুলি খাওয়ার পর ২৯ বছর বয়সী জ্যাকব ব্লেক এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। শরীর থেকে গুলি বের করতে সার্জারি করতে হয়েছে। পুলিশ পেছন থেকে গুলি করায় গুলি লাগে ব্লেকের মেরুদণ্ডে। টুকরো টুকরো হয়ে যায় মেরুদণ্ড। তাই অস্ত্রোপচারের পরও মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়াতে পারবেন না কেনোশা শহরের কৃষ্ণাঙ্গ যুবক জ্যাকব ব্লেক। ব্লেকের আইনজীবীর কথায়, এরপরও যদি জুনিয়র জ্যাকব ব্লেক হাঁটতে পারেন, সেটাকে অলৌকিক ঘটনা ছাড়া কিছু বলা যাবে না।
জ্যাকব ব্লেকের বাবা জানান, তাঁর ছেলেকে পরপর সাতটি গুলি করেছেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের একটি সংবাদপত্রের কাছে জ্যাকব ব্লেকের বাবা দাবি করেছেন, তাঁর ছেলের শরীরে আটটি গুলির ক্ষত দেখা গেছে। ফলে জ্যাকব ব্লেকের ঠিক কয়টি গুলি লেগেছে, তা নিয়ে বিতর্ক আছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছিলেন, তাঁরা পরপর সাতটি গুলির শব্দ পেয়েছেন।
কেনোশার এই গুলি চালানোর ঘটনায় জ্যাকব ব্লেকের আইনজীবী বেন ক্রাম্পের নেতৃত্বে একটি আইনি দল পুলিশ বিভাগের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি শুরু করেছে। ঘটনার পর থেকে উইসকনসিনের পুলিশ মুখে কুলুপ এঁটেছে। যে পুলিশ কর্মকর্তারা এ ঘটনায় জড়িত, তাঁদের নামও প্রকাশ্যে আনা হয়নি। যদিও উইসকনসিন ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস ঘটনার তদন্তে নেমেছে।
সম্প্রতি পুলিশের হেফাজতে আরেক মার্কিন কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর জেরে উত্তপ্ত হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। সে পরিস্থিতি কিছুটা দমে আসতে না আসতেই কেনোশা শহরের ঘটনা গত রোববার রাতে সে নিভে আসা আগুনে ঘি ঢেলেছে। বিক্ষোভকারীরা ট্রাকসহ একাধিক গাড়িতে আগুন দেওয়াই শুধু নয়, রাস্তায় ভাঙচুর করেন। রাস্তার ধারের বহু ভবনের জানালার কাচ ঢিল মেরে ভেঙে দেওয়া হয়েছে। পুলিশ বিক্ষোভকারীদের নিরস্ত্র করতে গেলে সংঘর্ষ বেধে যায়। পরিস্থিতি সামাল দিতে দাঙ্গা পুলিশ মাঠে নামে। কারফিউ জারি করে বিক্ষোভকারীদের সরানো হয়। জানা গেছে, গুলিবিদ্ধ জ্যাকব ব্লেক এখন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
জ্যাকব ব্লেককে গুলিতে আহত করার ঘটনার পর উইসকনসিনের ডেমোক্রেটিক গভর্নর টনি এভারস ঘটনার নিন্দা করেন। টুইট বার্তায় গভর্নর বলেন, ‘রোববার জ্যাকব ব্লেককে যেভাবে গুলি করা হয়েছে, তার নিন্দা করছি। নিজের এসইউভির (গাড়ির) দরজা খুলে চালকের আসনে বসার সময় তিন শিশুসন্তানের সামনে পেছন থেকে ব্লেককে গুলি করা হয়। ব্লেক বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি। তাঁর অবস্থা অত্যন্ত গুরুতর।’ গোটা ঘটনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে গভর্নর আশ্বস্ত করেছেন।
এর আগে গত মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রের মিনিয়াপোলিসে কৃষ্ণাঙ্গ নাগরিক জর্জ ফ্লয়েড হত্যার ঘটনায় মার্কিন পুলিশের বর্বরতার বিরুদ্ধে গোটা বিশ্ব নিন্দায় সরব হয়েছিল।