ফাহিম হত্যাকাণ্ড : জামিন পাননি ব্যক্তিগত সহকারী
‘পাঠাও’-এর সহপ্রতিষ্ঠাতা ফাহিম সালেহ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া তাঁর ব্যক্তিগত সহকারী ডেভন হাসপিলকে জামিন দেননি যুক্তরাষ্ট্রের ম্যানহাটন আদালত। গতকাল শনিবার হাসপিল জামিন আবেদন করলে বিচারক জোনাথন স্ভেটকি তা নাকচ করে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এ ছাড়া আগামী ১৭ আগস্ট তাঁকে আবারও আদালতে হাজির করার নির্দেশ দেওয়া হয়। সংবাদমাধ্যম দ্য নিউইয়র্ক পোস্ট এ খবর জানিয়েছে।
হাসপিলের আইনজীবী স্যাম রবার্টস ও নেভিল মিচেল বলেন, ‘আমরা সত্য প্রকাশের একদম প্রাথমিক পর্যায়ে আছি। এ মামলা স্থায়িত্ব দীর্ঘ ও জটিল হতে যাচ্ছে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। হাসপিলের আইনজীবী হিসেবে আমরা জনগণকে খোলা মনে বিষয়টি দেখতে অনুরোধ করছি।’
এর আগে গত শুক্রবার ডেভন হাসপিলকে নিউইয়র্কের সহো এলাকার একটি ভবনের লবি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশের উপস্থিতি বুঝতে পেরে ওই সময় হাসপিল পালানোর চেষ্টা করছিলেন বলে ওই ভবনের তত্ত্বাবধায়ক জানান।
শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে নিউইয়র্কের গোয়েন্দাপ্রধান রডনি কে বলেন, ‘হাসপিল ফাহিম সালেহর সহকারী ছিলেন। তিনি ফাহিমের আর্থিক ও ব্যক্তিগত বিষয়গুলো দেখভাল করতেন।’
গোয়েন্দারা বলছেন, ফাহিম সালেহকে পেশাদার খুনিদের কায়দায় হত্যা করা হয়েছে। এ হত্যাকাণ্ডের পেছনে অর্থের বিষয় জড়িত।
গোয়েন্দারা ধারণা করছেন, সম্প্রতি ফাহিম জানতে পেরেছিলেন, হাসপিল তাঁর কাছ থেকে প্রায় ৯০ হাজার ডলার চুরি করেছেন। যদিও ফাহিম বিষয়টি পুলিশকে না জানিয়ে অর্থ ফেরত পাওয়ার বিষয়ে একটি পরিকল্পনা করেছিলেন। তিনি হাসপিলকে কিস্তিতে পুরো টাকা পরিশোধের সুযোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু টাকা পরিশোধ না করার জন্য হাসপিল ফাহিমকে খুনের পরিকল্পনা করে।
পুলিশ বলছে, ফাহিমের অ্যাপার্টমেন্টে গত সোমবার দুপুরেই এ হত্যাকাণ্ড ঘটে। লিফট থেকে বের হওয়ার পর অ্যাপার্টমেন্টে ঢোকার আগে হত্যাকারীর সঙ্গে ফাহিমের ধস্তাধস্তি হয়। ওই সময় টিজার গান ব্যবহার করে ফাহিমকে অজ্ঞান করা হয় এবং পরে অ্যাপার্টমেন্টের ভেতরে নিয়ে ফাহিমের গলা আর ঘাড়ে কয়েকবার ছুরি মেরে হত্যা করা হয়। সেদিন ওই হত্যাকারী চলে গিয়ে পরদিন মঙ্গলবার দুপুরে লাশ গুম করার জন্য আবার ফিরে আসে। তখন ইলেকট্রিক করাত দিয়ে কেটে ব্যাগে ভরার চেষ্টা করার সময় ফাহিমের বোন দরজায় বেল দিলে হত্যাকারী পেছনের সিঁড়ি দিয়ে পালিয়ে যায়।
নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় গত মঙ্গলবার বিকেলে ফাহিম সালেহর খণ্ড-বিখণ্ড মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
পুলিশের বরাত দিয়ে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ডেইলি নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গত মঙ্গলবার শহরের ম্যানহাটন এলাকার নিজ অ্যাপার্টমেন্ট থেকে ফাহিমের দেহ, মাথা ও হাত-পা খণ্ড খণ্ড অবস্থায় পাওয়া যায়।
জানা যায়, ওই ফ্ল্যাটে ফাহিম একাই থাকতেন। দীর্ঘ সময় খোঁজ না পেয়ে মঙ্গলবার জরুরি ৯১১ নম্বরে ফোন করেন তাঁর বোন। এরপর পুলিশ এসে অ্যাপার্টমেন্টের সপ্তম তলা থেকে ফাহিমের মরদেহ উদ্ধার করে।
ডেইলি নিউজের ওই প্রতিবেদনে আরো জানানো হয়, ফাহিম যখন লিফটে উঠছিলেন, তখন দ্বিতীয় এক ব্যক্তি তাকে অনুসরণ করছিলেন বলে গোপন ক্যামেরায় ধরা পড়েছে।
কে এই ফাহিম সালেহ?
অনলাইনের খবরে ফাহিম সালেহকে একজন মিলিয়নেয়ার প্রযুক্তিবিষয়ক উদ্যোক্তা হিসেবে বর্ণনা করেছে যুক্তরাজ্যের ডেইলি মেইল।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরবে বাংলাদেশি মা-বাবার সংসারে জন্ম নেওয়া প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ফাহিম সালেহ। জন্মের পর পরিবারের সঙ্গে নিউইয়র্কে চলে যান তিনি। সেখানেই তাঁর বেড়ে ওঠা ও পড়াশোনা। পড়াশোনা শেষে ফাহিম সালেহ নিউইয়র্কেই বসবাস করতেন।
২০১৪ সালে ঢাকায় এসে প্রযুক্তিভিত্তিক বেশ কিছু ব্যবসার উদ্যোগ নিয়েছিলেন ফাহিম সালেহ। অনেকগুলো প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলেও ‘পাঠাও’ উদ্যোগটি তাঁকে সফলতা এনে দেয়। শুরুতে শুধু পণ্য পরিবহন সার্ভিস নিয়ে কাজ করলেও পরে রাইড শেয়ারিং সেবা চালু করে পাঠাও।
বাংলাদেশে পাঠাও প্রতিষ্ঠায় ফাহিম সালেহর সঙ্গে আরো দুজন ছিলেন। যাঁদের কাছে পরবর্তী সময়ে ফাহিম তাঁর কিছু শেয়ার বিক্রি করে দিয়ে নিউইয়র্কে ফিরে যান। তবে থেমে থাকেননি তিনি। এরপর ‘পাঠাও’-এর আদলে অন্য দেশে ব্যবসা প্রসারের চিন্তাভাবনা শুরু করেন ৩৩ বছর বয়সী এ প্রযুক্তি উদ্যোক্তা।